Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Partha Chatterjee-Arpita Mukherjee

অর্পিতার কিছু হলে তাঁর সন্তানকে লালনের দায়িত্ব নিতে রাজি ছিলেন ‘কাকু’ পার্থ, আদালতে জানাল ইডি

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে পার্থের জামিনের আবেদনের শুনানি চলছে। গত মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি জানতে চেয়েছিলেন, পার্থ ও অর্পিতার মধ্যে সম্পর্ক কী?

অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:০২
Share: Save:

আগের শুনানিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী আদালতে দাবি করেছিলেন, তাঁর মক্কেলের সঙ্গে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্ক কাকা-ভাইঝির। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সেই পার্থের সঙ্গে অর্পিতার সম্পর্কের ‘রসায়ন’ নিয়ে ইডিও নিজেদের বক্তব্য জানাল আদালতে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, দু’জনের মধ্যে এমনই সম্পর্ক ছিল যে, অর্পিতার দত্তক নেওয়া শিশুর দায়িত্বও নিতে রাজি ছিলেন ‘কাকু’ পার্থ।

কলকাতা হাই কোর্টে পার্থের জামিনের আবেদনের শুনানি চলছে। মামলাটি চলছে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে। গত মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি জানতে চেয়েছিলেন, পার্থ ও অর্পিতার মধ্যে সম্পর্ক কী? তখন পার্থের আইনজীবী সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, দু’জনের মধ্যে কাকা ও ভাইঝির সম্পর্ক ছিল এবং অর্পিতার জীবনবিমার নমিনি ছিলেন পার্থ। বৃহস্পতিবারের শুনানিতে ইডি আদালতে জানাল, শিশু দত্তক নেওয়ার জন্য অর্পিতাকে ‘ছাড়পত্র’ দিয়েছিলেন পার্থ। তিনি বলেছিলেন যে, অর্পিতার কিছু হলে শিশুটির দায়িত্ব তিনি নেবেন। সেটা ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক! ইডির দাবি, ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধুত্ব থেকে কাকুতে পরিণত হয়েছিলেন পার্থ। পরে পার্থের কথা মতোই কাজ করতেন অর্পিতা। ইডির দাবি, পার্থ তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা শেয়ারও অর্পিতার নামে করেছিলেন। বোলপুরের সম্পত্তিও যৌথ ভাবে কিনেছিলেন পার্থ ও অর্পিতা। তাঁদের দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক কী, তা এই তথ্য থেকেও বোঝা যায় বলেই আদালতে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

আদালতে ইডির হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি এবং অনামিকা পাণ্ডে। অর্পিতাকে ‘দুর্নীতির রানি’ বলেও ব্যাখ্যা করেছেন ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘‘নিম্ন আদালতে শুনানির সময় অর্পিতা বার বার দাবি করেছেন, এই দুর্নীতির ‘কিংপিন’ পার্থ। এর সপক্ষে তিনি কিছু তথ্যও দিয়েছিলেন। তাতে বোঝা যায়, দুর্নীতিতে অর্পিতাকে ব্যবহার করেছিলেন পার্থ। অর্থাৎ দুর্নীতিতে তাঁরা দু’জনেই জড়িত। তাঁদের মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক ছিল আমরা জানি না। কিন্তু তথ্য বলছে, একে অপরের মধ্যে কোনও সম্পর্ক অবশ্যই ছিল। আমরা বলছি, অর্পিতা এই দুর্নীতির রানি।’’

ইডির দাবি, অর্পিতা ছাড়াও একাধিক ব্যক্তিকে দুর্নীতিতে ব্যবহার করেছিলেন পার্থ। গোয়া এবং তাইল্যান্ডে অর্পিতার সঙ্গে স্নেহময় দত্তকে পাঠানো হয়েছিল। ইডির আইনজীবী বলেন, ‘‘স্নেহময় দত্তের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট তাঁদের মধ্যে কী সম্পর্ক ছিল। রাজীব দে নামে এক ব্যক্তির নামে ‘অপা’র সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করা। ওই ব্যক্তি পার্থ এবং অর্পিতাকে সহযোগিতা করত। এটা থেকে পার্থ এবং অর্পিতার সঙ্গে সম্পর্ক বোঝা যায়। স্বাধীন ভারতে এই প্রথম কোটি কোটি টাকা এবং গয়না নিজের বলে কেউ দাবি করছেন না। অর্পিতা বলছেন, উদ্ধার হওয়া টাকা পার্থের। কিন্তু পার্থ তা অস্বীকার করছেন।’’

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আদালতে দাবি করেছে, রাঁধুনি এবং গাড়িচালককেও তাঁর বিভিন্ন সংস্থা চালাবার জন্য ব্যবহার করেছেন পার্থ। সমস্ত সংস্থার নিয়ন্ত্রণ তাঁর নিজের হাতেই ছিল। অর্পিতার এক আত্মীয়কে ড্রাইভার থেকে একটি সংস্থার ডিরেক্টর করা হয়েছিল। ইডি জানিয়েছে, এই মামলায় ১৬৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ইডির বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ৬ মার্চ ধার্য করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee Arpita Mukherjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE