Advertisement
E-Paper

অনুব্রতের বিরুদ্ধে অস্ত্র মেয়ের বয়ান

গরু পাচার নিয়ে সিবিআইয়ের মামলায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত অনুব্রত আছেন আসানসোল জেলে। চলতি সপ্তাহে সেখানে গিয়ে তাঁকে যাতে জেরা করা যায়, ইডি সেই আর্জি জানাতে পারে আদালতে।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ ০৬:০৮
বাঁ দিকে, অনুব্রত মণ্ডল। ডান দিকে, ইডির দফতর থেকে বেরিয়ে আসছেন সুকন্যা মণ্ডল।

বাঁ দিকে, অনুব্রত মণ্ডল। ডান দিকে, ইডির দফতর থেকে বেরিয়ে আসছেন সুকন্যা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

মেয়েকে কার্যত অন্ধকারে রেখে তাঁর সই নিয়ে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (কেষ্ট) ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গরু পাচারের নগদ কালো টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বলে তদন্তকারীদের অভিযোগ। তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর অজান্তেই যে ওই সব লেনদেন হয়েছে, প্রশ্নের জবাবে তা জানিয়েছেন কেষ্ট-কন্যা সুকন্যা মণ্ডল। এই অবস্থায় গরু পাচারের মামলায় সুকন্যার লিখিত বয়ানকে হাতিয়ার করেই অনুব্রতকে নতুন ভাবে জেরা করার প্রস্তুতি চালাচ্ছে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। গরু পাচার নিয়ে সিবিআইয়ের মামলায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত অনুব্রত আছেন আসানসোল জেলে। চলতি সপ্তাহে সেখানে গিয়ে তাঁকে যাতে জেরা করা যায়, ইডি সেই আর্জি জানাতে পারে আদালতে।

আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, সুকন্যা তদন্তকারীদের সামনে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। সুকন্যার বয়ান তাঁর বাবা অনুব্রতের বিরুদ্ধে যেতে পারে। ইডি-র তদন্তকারীরা সুকৌশলে সেই বয়ানকে অনুব্রতের বিরুদ্ধে আইনি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। ইডি-র খবর, সুকন্যা তাঁর সমস্ত বয়ান নিজের হাতে লিখেছেন। এবং জিজ্ঞাসাবাদের পুরো পর্ব তুলে রাখা হয়েছে ভিডিয়োয়।

ইডি-র দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে সুকন্যা যা বলেছেন, তার মোদ্দা কথা, কোনও রকম আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। সব কিছুই জানেন তাঁর হিসাবরক্ষক। সুকন্যার আরও দাবি, তিনি কোনও দিন ব্যাঙ্কে গিয়ে নগদ টাকা জমা দেননি। কোথায় কী সম্পত্তি রয়েছে, তা-ও তিনি জানেন না। ইডি জানাচ্ছে, সুকন্যার বয়ান অনুযায়ী যিনি তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় প্রতিদিন নগদ টাকা জমা দিতেন, তাঁকেও তলব করা হয়েছিল। সেই ব্যক্তি, সুকন্যার হিসাবরক্ষক এবং খোদ সুকন্যাকে মুখোমুখি বসিয়ে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৭ অক্টোবর সুকন্যাকে দিল্লিতে তলব করা হয়। কিন্তু এক বান্ধবীর চিকিৎসার জন্য তিনি ভিন্‌ রাজ্যে রয়েছেন বলে সময় চেয়েছিলেন কেষ্ট-কন্যা। তার পরে তাঁকে আবার তলব করা হয় ২ নভেম্বর। ওই দিন নিজের হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারিকে নিয়ে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হন সুকন্যা। পরপর তিন দিনে প্রায় ২২ ঘণ্টা ধরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

তদন্তকারীদের দাবি, সুকন্যা একাধিক সংস্থার ডিরেক্টর এবং তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা হয়েছে। লেনদেনও হয়েছে। তাঁর সংস্থার মাধ্যমে কেনা বিভিন্ন চালকল-সহ কয়েক কোটি টাকা সম্পত্তির হদিস মিলেছে। ২০১৫ সালের পর থেকে তাঁর ব্যাঙ্ক আমানত ও সম্পত্তি বেড়েছে জেট-গতিতে। ২০১৮-র পর থেকে তাঁর নামে বোলপুরের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে প্রায় প্রতিদিন নগদ টাকা জমা পড়েছে বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। অথচ পেশায় তিনি এক জন প্রাথমিক স্কুলশিক্ষিকা। এবং তিনি সেই চাকরি পান ২০১৪ সালে।

এক তদন্তকারী অফিসার জানান, সুকন্যা প্রথম দিকে ওই সব লেনদেন ও সম্পত্তির প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। মনে করা হচ্ছিল, তিনি সব জানেন, অথচ তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। তার পরেই সুকন্যার নামে থাকা বিভিন্ন সংস্থা, সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক আমানতের একের পর এক নথি তুলে ধরে তাঁকে প্রশ্ন করা হতে থাকে। সেই সব নথিতে সুকন্যার সই রয়েছে। কিন্তু তিনি ওই সব বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে জানান সুকন্যা।

ইডি জানাচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় পাশে বসে থাকা হিসাবরক্ষককে দেখিয়ে সুকন্যা তদন্তকারীদের বলেন, ‘সমস্ত রকম নথিপত্র ইনি নিয়ে আসতেন। বাবার নির্দেশ অনুযায়ী সব নথিপত্রে আমি শুধু সই করেছি। এর চেয়ে বেশি আমি কিছুই জানি না।’ তদন্তকারীদের দাবি অনুযায়ী, যিনি সুকন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতেন, তাঁকে দেখিয়ে কেষ্ট-কন্যা বলেন, ‘উনি আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতেন। কিন্তু আমার সঙ্গে টাকার বিষয়ে কোনও দিন কোনও আলোচনা করা হত না।’ তদন্তকারীদের সামনে সুকন্যার দাবি, তাঁর অ্যাকাউন্টে কত টাকা রয়েছে, সেই বিষয়ে তিনি অন্ধকারে ছিলেন। তদন্ত শুরুর পরে ধীরে ধীরে তিনি সব কিছু জানতে পেরেছেন। অতঃপর মণীশকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। তদন্তকারীরা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে সুকন্যার বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা টাকার উৎস সম্পর্কে কোনও রকম সদুত্তর দিতে পারেননি মণীশও। প্রশ্নের মুখে মণীশ অধিকাংশ সময়েই অসংলগ্ন বয়ান দিয়েছেন।

ইডি-র এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘সুকন্যা, তাঁর হিসাবরক্ষক মণীশ ছাড়াও অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ কয়েক জন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদের বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে। সেই সব বয়ানের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে অনুব্রতকে। তদন্তে সহযোগিতা না করলে তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সে-ক্ষেত্রে সুকন্যা ও মণীশের মুখোমুখি বসিয়ে অনুব্রতকে জেরা করা হতে পারে।’’

Cattle Smuggling Anubrata Mondal Sukanya Mondal Enforcement Directorate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy