শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মাথার চুল নাকি দিন দিন কমে যাচ্ছে! আবার রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ খানের তৈলাক্ত টাকে নতুন করে চুল গজানো শুরু হয়েছে। বিধানসভা অধিবেশনের ফাঁকে শাসক শিবিরে এ নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে।
চলচিত্র তারকারা নিজেদের চুল নিয়ে বিশেষ যত্ন নেন। কিন্তু চলচিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত হলেও নাট্যকার, অভিনেতা তথা শিক্ষামন্ত্রী সে ভাবে তাঁর চুলের যত্ন নেন না বলেই দাবি স্বয়ং ব্রাত্যের। সম্প্রতি বিধানসভার অধিবেশনের মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময়ে তৃণমূল পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষের ঘরে বসে খানিক ধূমপান করছিলেন দমদমের বিধায়ক তথা শিক্ষামন্ত্রী। তখনই ওই ঘরে এক জন ব্রাত্যকে বলেন, ‘‘দাদা, আপনার মাথার চুল কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে কমেছে।’’ শুনেই ব্রাত্যের উদ্দেশে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘‘তুমি যে দফতর চালাচ্ছ, তাতে যদি তোমার মাথার চুল না কমে, তা হলে বুঝতে হবে তুমি কোনও কাজই করছ না!’’ শুনে হেসে ফেলেন ব্রাত্য। জবাব দেন, ‘‘শিক্ষা দফতরের এতটাই চাপ, যে আমার মাথার চুল সব সময় খাড়া হয়ে থাকে।’’
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্যের ২৬ হাজার স্কুলশিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে ‘চাপ’ বেড়েছে শিক্ষামন্ত্রীর উপর। শিক্ষকের অভাবে স্কুলগুলিকে ঠিকমতো চালানো থেকে শুরু করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাঁর দফতরের ভূমিকা যথেষ্ট। তাই গত কয়েক মাস ব্রাত্যকে চাপের মধ্যেই কাটাতে হয়েছে। তেমনই জানাচ্ছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ এবং হিতৈষীরা।
ব্রাত্যের চুল নিয়ে আলোচনার মধ্যেই মুখ্য সচেতকের ঘরে আসেন বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ। চুল নিয়ে আলোচনার মধ্যেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, প্রায় দু’দশকের বেশি সময় তেলতেলে টাক নিয়ে রাজনীতি করা জাভেদের মাথায় আচমকা এত চুল এল কোথা থেকে? কসবার বিধায়ক জাভেদ বলেন, ‘‘আমি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়েছি। তাই মাথায় চুল গজিয়েছে। তবে ট্রান্সপ্লান্ট করানোর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। আগামী ডিসেম্বরে আবার করাতে হবে।’’ তখন আবার ব্রাত্য বলে ওঠেন, ‘‘মাথায় চুল ধরে রাখতে আমার পক্ষে এ সব করা সম্ভব নয়।’’
তবে শুধু শাসকদল তৃণমল নয়, রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপির এক বিধায়কও নিজের ‘হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট’ করিয়ে এসেছেন মহারাষ্ট্রের পুণে থেকে। তিনি প্রাক্তন ক্রিকেটার অশোক ডিন্ডা। তবে তিনি জানাচ্ছেন, চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যার কারণে তিনি মাথায় নতুন করে চুলের চাষ করাননি। বরং আগামী দিনে যাতে তাঁর টাক পড়ার কোনও সম্ভাবনা না থাকে, সে কথা মাথায় রেখেই প্রাক্তন ভারতীয় মিডিয়াম পেসার ‘হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট’ করিয়েছেন।
বাংলার রাজনীতিতে টাক এবং চুল নিয়ে আলোচনা অবশ্য নতুন নয়। বামফ্রন্ট জমানার শেষ সরকারের আমলে রসিক মন্তব্য করেছিলেন তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী। বীরভূম জেলা সিপিএমের এক কর্মসূচিতে গিয়ে বক্তৃতার সময় মাথা থেকে সাদা পানামা হ্যাট নামিয়ে দাবি করেছিলেন, ‘‘যে দিন আমার টাকে চুল গজাবে, সে দিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ সুভাষের সেই মন্তব্য নিয়ে জোর আলোচনা হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। তবে ঘটনাচক্রে, মমতাকে ক্ষমতাসীন দেখে যেতে হয়নি সুভাষকে। ২০০৯ সালের ৩ অগস্ট তিনি প্রয়াত হন। তার প্রায় দেড় বছর পরে ২০১১ সালের মে মাসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা।