Advertisement
E-Paper

দিনহাটায় ‘এসআইআর-ভয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা’! ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নামের বানান ভুল থাকায় আতঙ্ক, বলছে পরিবার

কোচবিহারের পুলিশ সুপার সন্দীপ কাররা জানিয়েছেন, দিনহাটার বাসিন্দা খাইরুল শেখ বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ভোটার তালিকায় নামের বানান ভুল থাকায় খাইরুল আতঙ্কে ছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:১৮
এসআইআর আতঙ্কে আত্মহত্যার চেষ্টা কোচবিহারের খাইরুল শেখের।

এসআইআর আতঙ্কে আত্মহত্যার চেষ্টা কোচবিহারের খাইরুল শেখের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর নিয়ে আতঙ্কের কারণে আত্মহত্যা করেছেন উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির বাসিন্দা প্রদীপ কর। উদ্ধার হওয়া ‘সুইসাইড নোটে’ সে কথাই বলা ছিল বলে পুলিশের দাবি। যা নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। তার মধ্যেই এ বার কোচবিহারেও এক জন আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন এসআইআর আতঙ্কে! পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নামের বানান ভুল থাকায় তা নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন বছর ষাটের ওই বৃদ্ধ।

কোচবিহারের ঘটনা নিয়ে সুর চড়িয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি পানিহাটির প্রদীপের বাড়ি গিয়েছিলেন তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘শুধু প্রদীপই নন, এসআইআর করে এমন ভয়ের সঞ্চার হয়েছে নানা জায়গায়। আতঙ্কে চরম পদক্ষেপ করছেন মানুষ। দিনহাটায় এমন একটি ঘটনার খবর কানে এসেছে তাঁর। আত্মহত্যার চেষ্টা করা ওই ব্যক্তি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’’

কোচবিহারের পুলিশ সুপার সন্দীপ কাররা আনন্দবাজার ডট কম-কে জানিয়েছেন, দিনহাটার বাসিন্দা খাইরুল শেখ বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ভোটার তালিকায় নামের বানান ভুল থাকায় খাইরুল আতঙ্কে ছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ। সন্দীপ বলেন, ‘‘ওঁর নাম খাইরুল শেখ। কিন্তু ভোটার তালিকায় তার নাম খয়রু শেখ লেখা আছে। এই নিয়ে তিনি বেশ কিছু দিন ধরেই চিন্তিত ছিলেন বলে জানতে পেরেছি।’’

পুলিশ সুপার আরও জানিয়েছেন, গ্রামবাসীদের দাবি, খাইরুল এসআইআর ঘোষণার পর থেকে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আপাতত তিনি কোচবিহার জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি একটু সুস্থ হলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সন্দীপ। একই কথা বলেন দিনহাটার এসডিপিও ধীমান মিত্রও। তাঁর কথায়, ‘‘উনি সাহেবগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, উনি এসআইআর-এর কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। উনি তো কোচবিহারের হাসপাতালে ভর্তি। আমরা তদন্ত করে দেখছি।’’

দিনহাটার বুড়িরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জিতপুর এলাকার বাসিন্দা খাইরুল। স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার সকালে তিনি বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করার পরেই তাঁকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তিনি খানিক কথা বলতে পারছেন। ওই অবস্থায় খাইরুল বলেন, ‘‘আমার নামের বানান ভুল ছিল। আমার নাম বাদ চলে যাবে, এই ভয় পাচ্ছিলাম। তাই বিষ খেয়ে নিয়েছি।’’

মঙ্গলবার নিজের ঘর থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল পানিহাটির বাসিন্দা প্রদীপের। পাশেই পড়ে ছিল ডায়েরি। তারই প্রায় দেড় পাতা জুড়ে লেখা ছিল ‘সুইসাইড নোট’। অভিযোগ, তাতে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি), ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনকে (এসআইআর) কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া আতঙ্ককে দায়ী করেছেন প্রদীপ কর (৫৭) নামে পানিহাটির বাসিন্দা মৃত ওই প্রৌঢ়। রাজ্যে এসআআইআর ঘোষণার পরের দিন, মঙ্গলবার এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে বিজেপিকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব।

বুধবার প্রদীপের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে অবশ্য সকলকে আশ্বস্ত করেছেন অভিষেক। বার্তা দিয়েছেন ভয় না-পাওয়ারও। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘এক দিকে নির্বাচন কমিশন অন্য দিকে, কেন্দ্রের সরকার মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত তৈরি করে রাখছে। তারা ঠিক করছে দেশের নাগরিক কারা! এসআইআর ঘোষণা হওয়ার পরে উনি ঘরে ঢুকেছেন। সকালে দেখা গেল, উনি বেঁচে নেই! এটা কি কাকতালীয়! এঁদের মৃত্যুর জন্য দায়ী অমিত শাহ, জ্ঞানেশ কুমার।’’

কোচবিহারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, ‘‘২০০২ সালের ভোটার তালিকায় খাইরুল শেখের নামের বানান ভুল রয়েছে। সে কারণে উনি আতঙ্কে ছিলেন। কেউ কেউ ওঁকে বলেছিলেন, ওঁর ভোটার কার্ড বাতিল হয়ে যাবে। ওঁকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেই কারণে উনি বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এসআইআর আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।’’

পাল্টা কোচবিহার উত্তরের বিজেপির বিধায়ক সুকুমার রায় বলেন, ‘‘উনি যদি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন, তার দায় তৃণমূলের। তৃণমূল এসআইআর টেনে সাধারণ সংখ্যালঘু মানুষের মধ্যে এনআরসি-র ভয় দেখাচ্ছে। আমরা বলেছি, যাঁরা অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন, তাঁদের নাম থাকবে না। যাঁরা ভারতীয়, যাঁদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে, তাঁদের ভয়ের কোনও কারণ নেই। তৃণমূল এসআইআর-কে এনআরসি বলে প্রচার করছে। সেই কারণেই সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।’’

SIR Cooch Behar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy