Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নজির ভেঙে ভোট ৭ দিন, বাহিনী গেলে আমরাই তো দেখব, মন্তব্য মমতার

ভোট ঘোষণার আগেই এ বার রাজ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। বিপুল সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং জেলাপ্রতি পাঁচ জন করে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক রেখে পশ্চিমবঙ্গে ৬ দফায় এবং ৭ দিনে বিধানসভা ভোট করানোর কথা ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:৫৩
Share: Save:

ভোট ঘোষণার আগেই এ বার রাজ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। বিপুল সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং জেলাপ্রতি পাঁচ জন করে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক রেখে পশ্চিমবঙ্গে ৬ দফায় এবং ৭ দিনে বিধানসভা ভোট করানোর কথা ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। আগামী ৪ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত মোট ৭ দিনে ভোট হবে রাজ্যে। তার মধ্যে খাস কলকাতা শহরেই নজিরবিহীন ভাবে ভোট হবে দু’দফায়! গণনা হবে আরও চার রাজ্যের সঙ্গেই, ১৯ মে।

সাম্প্রতিক কালে কলকাতা-সহ একাধিক পুরসভার নির্বাচনে রাজ্য পুলিশকে ঠুঁটো করে রেখে কী ভাবে শাসক দল দাপিয়ে বেড়িয়েছিল, তা নিয়ে বিস্তারিত অভিযোগ জমা পড়েছিল নির্বাচন কমিশনের কাছে। তার পরে বিধাননগর পুরসভার ভোটের দিন দেখা গিয়েছিল অবাধ দুষ্কৃতী-রাজ! সাধারণ নাগরিক ভোট দিতে গিয়ে বাধা তো পেয়েইছিলেন, আর শুধু ওই এক দিনে বিধাননগরে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২২ জন সাংবাদিক! এই ইতিহাস মাথায়

রেখে অন্য রাজ্যের চেয়ে সম্পূর্ণ পৃথক আয়োজন করে পশ্চিমবঙ্গে যে ভাবে ভোটের নির্ঘণ্ট করেছে কমিশন, তা আসলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার বেহাল দশাই স্পষ্ট করে দিচ্ছে বলে বিরোধীদের দাবি।

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা সরব হচ্ছে দেখে পাল্টা আক্রমণে নেমেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। ভোট ঘোষণার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শুক্রবার কালীঘাটে দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে গিয়ে প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তির্যক মন্তব্য, ‘‘কমিশন যা করছে, কিছু বলতে চাই না। স্বাগত জানাচ্ছি। ২৯৪টা কেন্দ্রে ২৯৪ দিনে ভোট হলেই সব চেয়ে ভাল হতো!’’ তার পরে সন্ধ্যায় একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী তো তিন দিনের

জন্য! ভোটটা হয়ে গেলে চলে যাবে। তার পরে তো আমাদেরই দেখতে হবে!’’ একটু থেমে মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘তখন তো আমাদেরই নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব।’’ কেন্দ্রীয় বাহিনী যে সাময়িক ভাবে থাকবে এবং তার পরে রাজ্য পুলিশের ভরসাতেই তাঁদের থাকতে হবে— ঘুরপথে এই কথা মনে করিয়ে দিয়ে তৃণমূল নেত্রী আসলে বিরোধী তথা ভোটারদের চাপে রাখার চেষ্টা করলেন বলেই বিরোধী নেতাদের অভিযোগ।

শাসক দলের এই আক্রমণাত্মক অবস্থানের আগেই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী এ দিন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানো আমাদের মূল লক্ষ্য। তার জন্য প্রচুর কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন। এক সঙ্গে অত কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়া যাবে না বলেই ভোটগ্রহণ এতগুলি দফায় হচ্ছে।’’ ভোট অবাধ করতে কমিশনের একগুচ্ছ পদক্ষেপও এ দিন ব্যাখ্যা করেছেন জৈদী।

কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও প্রধান বিরোধী দল সিপিএম অবশ্য সতর্কই থাকতে চাইছে। গত লোকসভা ভোটেও কেন্দ্রীয় বাহিনী ও কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের নজরদারিতে ভোট হয়েছিল। সে সময় কমিশনের পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ রাজ্যে অবাধ ভোট করানো নিয়ে বিপুল আশ্বাসও দিয়েছিলেন। সেই মতো আশায় বুক বেঁধেছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু প্রথম দুই দফার ভোটের পরেই ছবিটা বদলে যায়! পর্যবেক্ষক ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তুলতে শুরু করেন বিরোধীরা। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের অন্দরে এখন তো মহাভারতের যুদ্ধ! এই যদুবংশ ধ্বংস হওয়ার লড়াইয়ে সাধারণ মানুষের যে ক্ষয়ক্ষতি হবে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে না আঁচালে পুরোপুরি বিশ্বাস নেই!’’

কেরল ও তামিলনাডু়র মতো দক্ষিণী রাজ্যে ভোট হবে এক দিনে। সেই প্রসঙ্গ টেনেই মমতা এ দিন অভিযোগের সুরে বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এই বিমাতৃসুলভ আচরণ বরাবর হয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে যারা তৃণমূলের সঙ্গে পেরে উঠতে পারে না, তারা এ ভাবে বাংলার বদনাম-দুর্নাম করছে। তবে এতে আমাদের সুবিধাই হবে।’’ বিরোধীদের একাংশেরও আশঙ্কা, কমিশনের সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীত না হয়! গোটা কলকাতা, সংলগ্ন বিধাননগর, রাজারহাট বা হাওড়ায় এক দিনে ভোট হলে দুষ্কৃতী বাহিনীর ঘোরাফেরা নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারতো বলে তাদের মত। তবে তারা কমিশনের ভূমিকার দিকেই নজর রাখতে চাইছে। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর পাল্টা খোঁচা, ‘‘পড়ল কথা সবার মাঝে, যার কথা তার গায়ে বাজে! ভোটের আগেই তৃণমূল কমিশনের কাছে দরবার করে এসেছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী কম পাঠানোর জন্য। ওরা যে গায়ের জোরে ভোট করাতে চাইছে, কমিশন সেটা ভালো মতোই বুঝতে পারছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE