প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে উত্তরবঙ্গে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এসআইআর (ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন) শুরুর আগে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি বৈঠক থেকে অব্যহতি পেয়েছিল সেখানকার জেলাগুলি। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে কমিশনের বার্তা, সংশ্লিষ্ট সকল আধিকারিক এখন কমিশনের অধীনে (ডেপুটেশন)। তাঁদেরই নিশ্চিত করতে হবে, কোনও যোগ্য ভোটার যেন তালিকার বাইরে না থাকেন এবং তালিকাভুক্ত না হতে পারে এক জন অযোগ্য ভোটারও। মৃত ভোটারদের চিহ্নিত করার প্রশ্নে রাজ্যের সমব্যথী প্রকল্পের তথ্য কাজে লাগানোর প্রস্তাব দিয়েছে জেলাগুলি। এ-দিন রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় ২.০১ কোটি ভোটারের কাছে এনুমারেশন ফর্ম পৌঁছে দিয়েছে কমিশন।
বৈঠকে নথি-বৈধতার উপর জোর দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র উপ নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়াল, উপ-সচিব অভিনব আগরওয়াল, কমিশনের সচিব এস বি যোশী-সহ বাকি আধিকারিকেরা। মৃত, ঠিকানা বদল হওয়া, অনুপস্থিত এবং একাধিক জায়গায় নাম থাকা (ডুপ্লিকেট) ভোটারদের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। সেখানেই সমব্যথী প্রকল্পের সহযোগিতা নেওয়ার প্রস্তাব করে জেলা প্রশাসনগুলি। এই প্রকল্পে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের শেষকৃত্যের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া যায়। প্রকল্পের তথ্যভান্ডারে সেই মৃত্যুর শংসাপত্র থাকা সম্ভব।
এনুমারেশন ফর্ম দেওয়ার কাজ করছেন বুথ লেভল অফিসারেরা (বিএলও)। তাঁদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছে কমিশন। বিএলও-দের জন্য কমিশনের নির্দিষ্ট অ্যাপের ব্যবহারে নজর রাখতে বলা হয়। সূত্রের অনুমান, দক্ষিণবঙ্গেও এসআইআর-এর কাজ খতিয়ে দেখতে শীঘ্রই আসতে পারেন কমিশনের প্রতিনিধিরা। পরে পর্যাপ্ত এনুমারেশন ফর্ম সরবরাহ নিয়ে সিইও বলেন, “গণনাপত্র রয়েছে। সবাই পাবেন।”
অন্য দিকে, এ দিন জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লক অফিস চত্বরে ব্যাগ ভর্তি ভোটার কার্ড মেলে। বিজেপির নালিশ, ভোটার কার্ড মজুত রেখে তৃণমূল প্রশাসনের মাধ্যমে ভোটারদের প্রভাবিত করত। রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেন, “যে ভোটার কার্ডগুলি উদ্ধার হয়েছে সেগুলি ২০০৬ সালের। তখন তৃণমূলের সরকার ছিল না।” বিজেপির বুথ লেভল এজেন্টকে (২) জুতোর মালা পরিয়ে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে কোচবিহারের মাথাভাঙার ছাট খাটেরবাড়ি এলাকায়। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। শীতলখুচির বড় গোদাইখোরায় একই এপিক নম্বরে দুই মেহেবুব আলমের নাম থাকাকে কেন্দ্র করে বিবাদ তৈরি হয়। সেখানকার বিডিও জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা তদন্ত করছেন।
বর্ধমান শহরের টিকরহাট বেলপুকুর মাঠ এলাকায় বিজেপির এক বিএলএ-র উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের বিএলএ প্রশিক্ষণ শিবিরে শিক্ষক নেতা অঞ্জন দাসকে বলতে শোনা যায়, বিএলও-দের সঙ্গে দলের মহিলারা যাবেন। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল তথ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়া বানচাল করতে চাইছে। অঞ্জন দাস বলেন, “আমি বলেছি যেখানে মহিলা বিএলও রয়েছেন, সেখানে যেন কোনও পুরুষ একা না যান, সঙ্গে মহিলা কর্মীদের নিয়ে যান।”
এ দিন বিএলও-কে ছাড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের এনুমারেশন ফর্ম দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিএলএ তথা দলের বুথ সভাপতির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির বেলপুকুর পঞ্চায়েতের ২১৯ নম্বর খেটেরপোতা বুথের। বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, ওই বুথের বিএলও বীণাপাণি তেলি স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য শ্রীমন্ত তেলির স্ত্রী। পরে বীণাপাণিকে বৃহস্পতিবার দেখা না গেলেও তৃণমূলের বুথ সভাপতি সূর্যকান্ত সাঁফুই এ দিন ফর্ম বিলি করেছেন বলে অভিযোগ। বিডিও সঞ্জু গুহ মজুমদার বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা না মানা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বীণাপাণি, সূর্যকান্তেরা অভিযোগ মানেননি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)