Advertisement
E-Paper

বণ্টন, সংবহনে স্বাধীনতা দিয়ে সংস্কার বিদ্যুতে

পরস্পরের উপরে নির্ভরতা আর নয়। এ বার স্বাধীনতা দিয়েই সংস্কার। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংস্কারে ফের হাত পড়ছে এ ভাবেই। আট বছর পরে। ২০০৭ সালে বাম জমানায় সরকারি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে পেশাদারি আনতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ ভেঙে ‘বণ্টন’ ও ‘সংবহন’ নামে দু’টি আলাদা সংস্থা গড়া হয়েছিল। তবে স্বাধীনতা পায়নি সেই দু’টি সংস্থা। পারস্পরিক নির্ভরতা জিইয়ে রেখেই তাদের কাজ চালাতে হচ্ছিল।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৫

পরস্পরের উপরে নির্ভরতা আর নয়। এ বার স্বাধীনতা দিয়েই সংস্কার। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংস্কারে ফের হাত পড়ছে এ ভাবেই। আট বছর পরে। ২০০৭ সালে বাম জমানায় সরকারি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে পেশাদারি আনতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ ভেঙে ‘বণ্টন’ ও ‘সংবহন’ নামে দু’টি আলাদা সংস্থা গড়া হয়েছিল। তবে স্বাধীনতা পায়নি সেই দু’টি সংস্থা। পারস্পরিক নির্ভরতা জিইয়ে রেখেই তাদের কাজ চালাতে হচ্ছিল। এবং বিভাজনের সেই সরকারি সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল, অচিরেই তা টের পেয়েছিলেন বঙ্গবাসী। পর্ষদ এলাকা মানেই লোডশেডিং এই দুর্নাম ঘুচিয়ে গ্রীষ্মকালেও চাহিদা মিটিয়ে ‘বিদ্যুৎ-উদ্বৃত্ত’ রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করে নেয় পশ্চিমবঙ্গ।

এত দিনে বণ্টন ও সংবহন সংস্থার পারস্পরিক নির্ভরতা কমাতে আরও এক দফা সংস্কারের কাজে হাত দিচ্ছে রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতর। ঠিক হয়েছে, এ বার থেকে সংবহন সংস্থা স্বাধীন ভাবে কাজ করবে। বণ্টন সংস্থার কোনও কাজ বা সিদ্ধান্তের উপরে তারা নির্ভর করবে না।

প্রথম দফার সংস্কারের প্রায় আট বছর পরে এই উদ্যোগ কেন?

“আমরা চাই, দু’টি সংস্থা পৃথক ভাবে কাজ করুক। আরও ভাল কাজ করুক,” বলছেন রাজ্যের বিদ্যুৎসচিব গোপালকৃষ্ণ। অর্থাৎ পরস্পরের উপরে নির্ভরশীলতা ছেড়ে সংস্থা দু’টি স্বাধীনতা ভোগের সুযোগ পেলে আরও ভাল ভাবে কাজ করবে বলে সরকারের বিশ্বাস। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হবে।

বিভাজন পর্বেই অবশ্য পেশাদারি দৃষ্টিকোণ থেকে দু’টি সংস্থার স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার কথা ভাবা হয়েছিল। বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা জানান, এক সময় গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেওয়া, মিটার দেখা, হাইটেনশন লাইন টানা, সাবস্টেশন তৈরি অর্থাৎ জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত সবই করতে হত পর্ষদকর্মীদের। সেই কাজে পেশাদারির যথেষ্ট অভাব ছিল। ফলে পরিষেবা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠত। এই অবস্থায় পেশাদারি আনতে ২০০৩ সালে সংসদে বিদ্যুৎ আইন সংশোধন করে বলা হয়, প্রতিটি রাজ্যকেই বিদ্যুৎ পর্ষদ ভেঙে ফেলে বণ্টন ও সংবহন ব্যবসাকে আলাদা করতে হবে। পর্ষদ বলে কিছু রাখা যাবে না। তৈরি

করতে হবে পৃথক ‘কোম্পানি’। তার চার বছর পরে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বামফ্রন্ট সরকার। সেই সংস্কারের পরিকল্পনা তৈরি করেছিল একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতা সংস্থা।

বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা জানান, আগে ঠিক হয়েছিল, দু’টি সংস্থাই তাদের শ্রম-সম্পদ বাড়ানোর সঙ্গ সঙ্গে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করবে। ২০১০ সালের মধ্যে তারা পারস্পরিক নির্ভরতা কাটিয়ে কাজ শুরু করবে দু’টি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে। কিন্তু তা হয়নি। এ বার সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষ থেকে ওই দুই সংস্থা স্বাধীন ভাবে কাজ করবে। কেউ কারও সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে না, পরস্পরের উপরে কোনও ভাবে নির্ভরও করবে না।

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূল সমর্থিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ কর্মী ইউনিয়ন। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরিজিৎ দত্ত বলেন, “দু’টি সংস্থা একসঙ্গে থাকায় অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে। আলাদা হয়ে গেলে সেটা হওয়ার কথা নয়। আমাদের সম্মতির কথা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি।” সংবহন সংস্থার কর্তাদের একাংশের দাবি, তাঁরা নিজেরাই আলাদা হয়ে যেতে চাইছিলেন। কারণ, যৌথ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কাজ করতে গিয়ে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

কর্মীর সংখ্যা ও আয়ের নিরিখে সংবহনের থেকে বণ্টন সংস্থা তুলনায় বড় বলে জানাচ্ছেন বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা। কিন্তু আর্থিক দিক থেকে দেখলে ছোট সংস্থার অবস্থা বড়টির চেয়ে ভাল। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দফতরের এক কর্তা জানান, বণ্টন সংস্থার কাজ হল, গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে মাসুল আদায় করা। আর ওই বিদ্যুৎ হাইটেনশন লাইনের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া সংবহন সংস্থার কাজ। এই কাজের জন্য তারা বণ্টন সংস্থা থেকে ‘কমিশন’ পায়। গ্রাহকদের বিল বাকি পড়ে গেলে বণ্টন সংস্থার রাজস্ব আদায়ও স্বাভাবিক নিয়মেই কমে যায়। সংবহন সংস্থার ক্ষেত্রে সেই আশঙ্কা নেই। কারণ, দুই সংস্থার মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী সংবহন সংস্থার প্রতি মাসে যে-কমিশন পাওয়ার কথা, বণ্টন সংস্থা তা মিটিয়ে দিতে বাধ্য থাকে। ফলে সংবহন সংস্থার আয় তো কমেই না। বরং গ্রাহকের সংখ্যা এবং মাসুল বাড়লে তা বেড়ে যায়।

নবান্নের খবর, বণ্টন ও সংবহন সংস্থা পৃথক হয়ে গেলে উভয়েই নিজেদের মতো কর্মী এবং চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে পারবে।

electricity pinaki bandyopadhyay state elictricity board Power supply
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy