হাতে আর এক মাসও সময় নেই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বরের পর থেকে ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষকেরা আর চাকরিতে থাকবেন না। এ দিকে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া যে ভাবে চলছে এবং গোটা বিষয়টি ফের মামলার জটে আটকে যাচ্ছে, তাতে নিয়োগ প্রক্রিয়া ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যোগ্য চাকরিহারাদের তাই প্রশ্ন, রাজ্য সরকার আবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে তাঁদের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করছে না কেন?
চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল রাজ্য সরকার সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেছিল, চাকরিহারা যে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ নেই, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁদের কাজ করতে দেওয়া হোক। না-হলে স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থাই ভেঙে পড়তে পারে। রাজ্যের সেই আর্জি শুনে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ জানিয়েছিল, যাঁদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ নেই, তাঁরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। সেই মেয়াদ শেষ হতে আর এক মাসও বাকি নেই।
চাকরিহারা এক যোগ্য শিক্ষক সুমন বিশ্বাস বললেন, ‘‘রাজ্য সরকারের উচিত সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা।’’
পয়লা জানুয়ারি থেকে সরকারি সব স্কুলে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হবে। এর পরে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক শুরু। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে উচ্চ মাধ্যমিকের চতুর্থ সিমেস্টারের পরীক্ষা। সুতরাং, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের বিপুল সংখ্যক খাতা দেখার কাজ করতে হবে। ফলও প্রকাশ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এখানেই শিক্ষকদের প্রশ্ন, ৩১ তারিখের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হলে স্কুলগুলিতে পঠনপাঠন চলবে কী ভাবে? কারণ, তখন তো চাকরিহারাদের কাজের মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে। চাকরিহারাদের পাশাপাশি অন্য শিক্ষকেরাও চান, ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে শিক্ষকদের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন জানানো দরকার।
চাকরিহারা আর এক যোগ্য শিক্ষিকা রূপা কর্মকার বললেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া যত দূর এগিয়েছে, তাতে একাদশ-দ্বাদশের নিয়োগ হয়ে যেতেও পারে। কিন্তু নবম-দশমের নিয়োগ কী ভাবে সম্পূর্ণ হবে? একাদশ-দ্বাদশের তথ্য যাচাই এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। নবম-দশমের তো তথ্য যাচাই শুরুই হল না।’’
৩১ ডিসেম্বরের পরে চাকরিহারা শিক্ষকদের কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হবে কিনা, তা নিয়ে অবশ্য এসএসসি কোনও মন্তব্য করেনি। ওই সংস্থারবক্তব্য, তারা শুধু পরীক্ষা নিয়ে সুপারিশপত্র দেয়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদও জানিয়েছে, এই বিষয়ে মন্তব্য করার কোনও এক্তিয়ার তাদের নেই। যা বলার, শিক্ষা দফতর বলবে। শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, ঘটনাপ্রবাহ যে দিকে যাচ্ছে, তাতে স্কুলগুলির পঠনপাঠনের স্বার্থে চাকরিহারা শিক্ষকদের কাজের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করতে হতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আবেদন করব কিনা, সেটা পরিস্থিতি অনুযায়ী ভাবা যাবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)