ছত্রে ছত্রে পুড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা। গ্রাফিক— সনৎ সিংহ।
বগটুইয়ের হত্যাকাণ্ড কবিকে বিষণ্ণ করে তুলেছে। নিজেই প্রশ্ন করছেন, ‘এই ঘটনার পর কবিতা বলে কি কিছু বাকি থাকে নাকি?’ ঠিক যেমনটা করেছিলেন প্রায় দেড় দশক আগে। নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের পর প্রশ্ন তুলেছিলেন ‘শাসকের প্রতি’। এ বার রামপুরহাটের বগটুই-কাণ্ডের পর জয় গোস্বামী লিখলেন কাব্যগ্রন্থ ‘দগ্ধ’।
জয়ের নতুন এই কাব্যগ্রন্থে রয়েছে আটটি কবিতা। শাসকের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও শব্দ নেই সেখানে। কিন্তু প্রতিটি কবিতার ছত্রে ছত্রে রয়েছে পুড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা। এক একটা ‘দগ্ধ’ শব যেন শব্দ হয়ে প্রশ্ন করছে, কোন গোষ্ঠীর হাতে তার বাঁচা-মরা? গ্রন্থের শেষে জানানো হয়েছে, ‘যে শিশু, যে মা জীবদ্দশায় জানতে পারেনি কোন গোষ্ঠীর হাতে তার বাঁচা-মরার অধিকার ন্যস্ত, এ কবিতাগুচ্ছ তারই নিরুপায় শোকগাথা।’ আরও বলা হয়েছে, ‘রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে প্রতিশোধের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল একদল নিরপরাধ মানুষ। ঘুমোতে যাওয়ার আগে ওরা কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি, এই ঘুম ভাঙবে না আর। মানুষ পোড়া কটু গন্ধ নাকে নিয়ে যে রাতে ওদের সন্ত্রস্ত প্রতিবেশীরা গ্রাম ছাড়ছে, এই কবিতাগুলি সেই বিনিদ্র রজনীর সন্তান।’
একা জয়ের কাব্যগ্রন্থ নয়, বগটুই-কাণ্ডের প্রতিবাদে আরও বেশ কিছু কাব্য সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ‘অদ্ভুত আঁধার এক’। কবিতা এবং কার্টুন দিয়ে সাজানো সেই সংকলন। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন সময়ের কয়েক জন কবির পূর্ব প্রকাশিত অথচ প্রাসঙ্গিক কবিতা। জীবনানন্দও রয়েছেন সেই তালিকায়। রয়েছে মালির কার্টুন। সবের ভিতরেই বগটুইয়ের দহন।
নন্দীগ্রাম-পর্বে শাসকের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন জয়। কবিতার হাতিয়ার শানিয়েছিলেন ‘শাসকের প্রতি’। সেই বই অল্প সময়ে বেশ কয়েকটি সংস্করণ নিঃশেষ হয়েছিল। সে সব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কবি বারে বারেই বলেছেন, ‘‘প্রতিবাদের সময়ে কাজটাই গুরুত্বপূর্ণ।’’ সেই সব পর্ব কাটিয়ে জয় পরিববর্তনের সরকারের ‘বন্ধু’ হয়েছেন। শাসকের ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। তবে কি আবারও শাসক-বিরোধী? জয় ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, কবিকে সব সময় শাসককে বিদ্ধ করতে হবে তার কী মানে? কবি ঘটনার আগুনে দগ্ধ হয়েছেন। সেই দহনই তাঁকে দিয়ে প্রতিবাদ করিয়ে নিচ্ছে। আর জয় নিজে বলছেন, ‘‘আমার কবিতাগুলিতেই সব লেখা আছে। ওগুলিই আমার কথা।’’
গত ২১ মার্চ রাতে বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই মোড়ে খুন হন তৃণমূলনেতা ভাদু শেখ। ওই রাতেই বগটুইয়ে তাণ্ডব চলে। একাধিক বাড়িতে আগুনে পুড়ে মারা যান আট জন। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতেই ‘দগ্ধ’ কবি তাঁর কাব্যগ্রন্থে লিখেছেন, ‘আমার লেখার ঘরে মেঝেভর্তি করে/ একজনের উপর একজন/ ওরা স্তূপীকৃত হয়ে আছে…/ ওদের দাফন করব এখন কোথায়?’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy