E-Paper

যুদ্ধ নেই, ছুটিতে তবু যুদ্ধকালীন নিষেধ রাজ্যে

আগাম লিখিত অনুমতি না নিয়ে দু’দিন ‘ছুটি’ নিয়ে নেওয়ায় শো-কজ়ের মুখে পড়তে হচ্ছে। এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৫ ২৩:৪১
কর্মীরা এখন ছুটি নিতে গেলেই বিপদ!

কর্মীরা এখন ছুটি নিতে গেলেই বিপদ! —প্রতীকী চিত্র।

নিকটাত্মীয়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি চলে গিয়েছিলেন রাজ্য সরকারের এক পদস্থ আধিকারিক। মৌখিক ভাবে জানিয়েছিলেন, দফতরে হাজিরা দিতে পারছেন না। আগাম লিখিত অনুমতি না নিয়ে দু’দিন ‘ছুটি’ নিয়ে নেওয়ায় শো-কজ়ের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে শুরু করে বিধানসভা পর্যন্ত কর্মীরা কর্মীরা এখন ছুটি নিতে গেলেই বিপদ!

এমন পরিস্থিতির নেপথ্যে রয়েছে সরকারের আপৎকালীন নির্দেশিকা। পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরে ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালানোর পরে সেই নির্দেশিকা জারি হয়েছিল। বলা হয়েছিল, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মী বা আধিকারিকদের সব ছুটি আপাতত বাতিল। সূত্রের খবর, প্রথম নির্দেশ এসেছিল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। সেইমতো রাজ্য সরকারগুলিও একই নির্দেশিকা জারি করেছিল। এ রাজ্যে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছুটি বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তার পরে?

আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ-বিরতি হয়ে গিয়েছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিও কেটে গিয়েছে। সেই অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের অধীনে থাকা দফতরে আপৎকালীন নির্দেশিকা প্রত্যাহারও করে নিয়েছে। কিন্তু বাংলায় সে নির্দেশিকা এখনও বহাল! যার জেরে নিজেদের ‘আপৎকালীন পরিস্থিতি’তে ছুটি নিতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন কর্মীরা। কবে নির্দেশিকা উঠবে, তার কোনও স্পশ্ট উত্তরও এখনও কার কাছে নেই।

এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে সরকারি কর্মীদের ২৫% মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মেটানোর জন্য তোড়জোড় শুরু করতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। বিভিন্ন দফতরের কাছে ডিএ প্রাপক কর্মীদের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তারই পাশাপাশি চলছে শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিজ্ঞপ্তির প্রস্তুতি। এ সবের আড়ালে যেন চাপাই পড়ে গিয়েছে গত ৭ মে জারি হওয়া আপৎকালীন নির্দেশিকা! তবে প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই নির্দেশিকা পুনর্বিবেচনার জন্য কিছু আলোচনা শুরু হয়েছিল সরকারের শীর্ষ স্তরে। কিন্তু তা-ও বিশেষ এগোয়নি, কোনও ফলও হয়নি।

প্রশাসনেরই একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, সরকারি কর্মীদের জন্য বরাদ্দ অবকাশকালীন ভ্রমণ ভাতা (এলটিসি) নেওয়ার দরজা খোলা রয়েছে। কর্মীরা ছুটি নিয়ে বেড়াতে যেতে পারেন এবং এলটিসি-র জন্য আবেদন করতে পারেন। ডিএ-র টাকার সংস্থান করতে সরকারের যখন কালঘাম ছুটছে, সেই সময়ে এই বাড়তি খরচে অনুমোদন দিতে চাইছে না নবান্ন। তাই আপাতত হাতিয়ার যুদ্ধকালীন ওই নির্দেশিকা!

রাজ্যের স্বরাষ্ট্র ও কর্মিবর্গ দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘এই বিষয়ে সরকারি স্তরে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। নির্দেশিকা প্রত্যাহারের জন্য উপর মহলের সবুজ সঙ্কেত আসেনি।’’ অগত্যা ‘ছুটির ফাঁদে’ পা দিলেই বিপদ!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Holiday leave

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy