Advertisement
E-Paper

খড়দহে সাত মাসের মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিলেন ইঞ্জিনিয়ার

সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ রানাঘাট স্টেশনে সাত মাস বয়সি শিশুর দেহ উদ্ধার হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই রেল পুলিশ জানতে পারে, ঘণ্টাখানেক আগে খড়দহ স্টেশনে মিলেছে তার বাবার দেহ। ওই লালগোলা এক্সপ্রেসের ধাক্কাতেই ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৫২
 শিশুকন্যাকে নিয়ে বিশ্বরূপ দে।

শিশুকন্যাকে নিয়ে বিশ্বরূপ দে।

শিউরে উঠেছিলেন যাত্রীরা। প্ল্যাটফর্মে সবেমাত্র এসে দাঁড়িয়েছে আপ লালগোলা প্যাসেঞ্জার। সামনের দিক থেকে আসা কয়েক জন যাত্রীর হঠাৎ নজর পড়ে ট্রেনের ‘কাউক্যাচার’-এ। সেখানে আটকে রয়েছে একটি শিশুর রক্তাক্ত দেহ!

সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ রানাঘাট স্টেশনে সাত মাস বয়সি শিশুর দেহ উদ্ধার হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই রেল পুলিশ জানতে পারে, ঘণ্টাখানেক আগে খড়দহ স্টেশনে মিলেছে তার বাবার দেহ। ওই লালগোলা এক্সপ্রেসের ধাক্কাতেই ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছেন তিনি। রেল পুলিশ জানায়, মৃতের নাম বিশ্বরূপ দে (৪০) আর শিশুকন্যার নাম ধৃতিস্মিতা। বাড়ি খড়দহ স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে, রহড়া মন্দির পাড়ায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা শুনে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, ধৃতিস্মিতাকে কোলে নিয়েই ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বিশ্বরূপ। থ্রু ট্রেনের ধাক্কায় তাঁর দেহ কিছুটা দূরে ছিটকে পড়ে। আর শিশুটির দেহ ‘কাউক্যাচার’-এ আটকে যায়। সেই অবস্থাতেই ট্রেনটি যায় রানাঘাটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মন্দিরপাড়ার ওল্ড ক্যালকাটা রোডের বাসিন্দা, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বরূপ একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। বেশ কয়েক জনকে তিনি পড়াতেনও। স্ত্রী চন্দনা স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। গত ১২ সেপ্টেম্বর ধৃতিস্মিতার অন্নপ্রাশন হয়েছিল। স্থানীয়েরা জানান, বেশ কয়েক দিন ধরেই সকালে এলাকাতেই উদাসীন ভাবে পায়চারি করতে দেখা যেত বিশ্বরূপকে। প্রতিবেশী সুশান্ত চক্রবর্তী এদিন বলেন, ‘‘সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ চায়ের দোকানে দেখা হল। কেন মনমরা হয়ে রয়েছে জানতে চাইলেও বিশ্বরূপ উত্তর দিলেন না। বারোটার সময় শুনছি, ওঁর দেহ পাওয়া গিয়েছে।’’

আরও পড়ুন: হঠাৎ খুন না পরিকল্পিত? রজত মৃত্যুরহস্যে এখনও দিশেহারা পুলিশ

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথমে ওই ব্যক্তির পরিচয় না মিললেও পরে তাঁর ট্রাউজার্সের পকেট থেকে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। তাতে তাঁর নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর লেখা ছিল। তা দেখেই বাড়িতে খবর পাঠান তদন্তকারীরা। বিশ্বরূপের আর এক প্রতিবেশী জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েই বাচ্চাটির খোঁজ করি। কিন্তু পুলিশও কিছু বলতে পারে না। এর পরে রানাঘাট স্টেশন থেকে জানা যায় বাচ্চাটির মৃত্যু হয়েছে।’’ প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে পুলিশ জেনেছে, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ কখনও খড়দহ স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে, কখনও রেল লাইনে ঘুমন্ত শিশুকে কোলে নিয়ে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল বিশ্বরূপকে।

সাড়ে ১০টা নাগাদ তিন নম্বর লাইনে আসছিল শিয়ালদহ-লালগোলা প্যাসেঞ্জার। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তখনই লাইন পার হতে যান বিশ্বরূপ। তাঁকে বারণ করেন কয়েক জন। ঝড়ের গতিতে ট্রেনটি চলে যাওয়ার পরেই দেখা যায়, লাইনে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে রয়েছে তিনি। কিন্তু বাচ্চাটি নেই। ১২টা নাগাদ রানাঘাট স্টেশনে ট্রেনটি দাঁড়ানোর পরেই যাত্রীরা দেখতে পান বাচ্চাটিকে। তাঁরা চালককে জানান। পরে রেল পুলিশ দেহ উদ্ধার করে।

প্রতিবেশীরা জানান, বিশ্বরূপ চাপা স্বভাবের ছিলেন। মাঝেমধ্যে ঘনিষ্ঠ কয়েক জনকে বলতেন, তাঁর মোটা অঙ্কের টাকা ধার হয়ে গিয়েছে। তাঁরা জানান, এ দিন চন্দনাদেবী স্কুলে চলে যাওয়ার পরে বাড়ি ফেরেন বিশ্বরূপ। তখন আয়া দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলেন ধৃতিস্মিতাকে। সেই অবস্থাতেই মেয়েকে নিয়ে বাড়ির পিছন দিকের গলি দিয়ে রাস্তায় যান তিনি। তার পর রিকশায় পশ্চিম পাড়ার দিকে চলে যান বিশ্বরূপ। পশ্চিম পাড়ার ভিতর দিয়ে খড়দহ স্টেশনে তাড়াতাড়ি পৌঁছনো যায়। আয়ার থেকে ঘটনাটি জানতে পেরে ভাইয়ের খোঁজ শুরু করেন বিশ্বরূপের দাদা প্রণব। তার পরই রেল পুলিশের তরফে দেহ উদ্ধারের খবর আসে। স্বামী ও সন্তানের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে বারবার জ্ঞান হারিয়েছেন চন্দনাদেবী। রাতে ময়নাতদন্তের পর রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয় ধৃতিস্মিতার দেহ।

Death Suicide Engineer Little Girl Lagola Passenger
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy