Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Diwali 2018

শব্দতাণ্ডবের নথিপ্রমাণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা

কলকাতার বেহালা, হরিদেবপুর, উল্টোডাঙা, সল্টলেক, জোকা, বাঙুর, দত্তাবাদে এমন বহু ঘটনাই লিপিবদ্ধ করেছেন পরিবেশকর্মীরা।

শব্দতাণ্ডবে অতিষ্ঠ শহরবাসী।—নিজস্ব চিত্র।

শব্দতাণ্ডবে অতিষ্ঠ শহরবাসী।—নিজস্ব চিত্র।

সোমনাথ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:২৬
Share: Save:

দৃশ্য এক: রাত ১১টা, বি সি রায় শিশু হাসপাতাল। যেখানে কোনও মতেই শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ছাড়ানো উচিত হয়, সেখানেও শব্দবাজির তাণ্ডব চলেছে কালীপুজোর রাতে। হাসপাতালের এমার্জেন্সির সামনেই শব্দের মাত্রা ছিল ৯৫ ডেসিবেল! একই ছবি ধরা পড়েছে কলকাতার অন্যান্য হাসপাতালেও।

দৃশ্য দুই: নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ। রাত ৯টা। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির ঠিক অদূরে তখন শব্দের মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৯০ ডেসিবেল। ওই এলাকার এক প্রবীণ নাগরিকের আক্ষেপ, ‘‘অভিযোগ করে কী হবে! এ তাণ্ডব তো চলবেই। গত বছরও হয়েছে। এ বছর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা সত্ত্বেও হচ্ছে।’’

দৃশ্য তিন: রাত সাড়ে ১০টা, সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে দেদার শব্দবাজির তাণ্ডব। রাত যত বেড়েছে ততই বাজি ফাটতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত অতিষ্ট হয়ে থানায় ফোন করেছিলেন ষাটোর্ধ্ব গৃহকর্তা। কিন্তু, তাতেও শব্দতাণ্ডব কমেনি। তিনি এর পর ফোন করেছিলেন ‘সবুজ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠনে। সে সবের পরেও কলকাতা পুরসভার ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডে রাত তিনটে পর্যন্ত শব্দতাণ্ডবে জেরবার হয়েছেন এলাকাবাসী।

আরও পড়ুন: টেস্টেই ডাহা ফেল, শব্দদানব দাপাল রাজ্য জুড়ে, আজ ফাইনালে কী হবে?​

শুধু এই তিনটি ঘটনাই নয়, কলকাতার বেহালা, হরিদেবপুর, উল্টোডাঙা, সল্টলেক, জোকা, বাঙুর, দত্তাবাদে এমন বহু ঘটনাই লিপিবদ্ধ করেছেন পরিবেশকর্মীরা।

শুধু কলকাতাই নয়, শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শব্দের মাত্র কোথায়, কত ডেসিবেল ছাড়িয়েছে? বায়ু দূষণের মাত্র কত ছিল? পরিবেশকর্মীরা প্রমাণ-সহ সেই নথি তুলে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন। এই তাণ্ডবের জন্য তাঁরা রাজ্য প্রশাসন এবং পুলিশের ঢিলেঢালা মনোভাবকেই দায়ী করছেন। অভিযোগ, যথেষ্ট নজরদারির অভাবে শব্দতাণ্ডব হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা ছিল, রাত ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আতশবাজি পোড়ানো যাবে। পাশাপাশি, শব্দবাজি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে সে সবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে তাণ্ডব!

সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে আবেদনকারীদের অন্যতম সুভাষ দত্ত বলেন, “কালীপুজোর রাতে ঘরের দরজা, জানলা বন্ধ করে ঘুমাতে হয়েছে। হাওড়ায় দেদার ফেটেছে শব্দবাজি। নজরদারির ক্ষেত্রে পুলিশ দায় এড়াতে পারে না। কালীপুজোর আগের সাত দিন এবং পরে সাত দিন শব্দের মাত্রা এবং বায়ুদূষণের মাত্রা কোথায় কত ছিল, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে নথি তুলে ধরব। তা থেকেই গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।”

আরও পড়ুন: রাতে পরিষ্কার হয়ে যাবে আকাশ, আশ্বস্ত করল হাওয়া অফিস​

সবুজ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক পরিবেশকর্মী নব দত্ত বলেন, “কালীপুজোর রাতে যথেষ্ট শব্দবাজি ফেটেছে। কলকাতা এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিযোগ এসেছে। আমরা এই গোটা বিষয়টি নথিপত্র-সহ সুপ্রিম কোর্টের নজরে আনব।” তিনি আরও বলেন, “গত বছরে কালীপুজোর দিন ৩৬টি অভিযোগ এসেছিল। এ বছর রাত ১২টা পর্যন্ত ৯৯টি অভিযোগ পেয়েছি। তা হলেই বোঝা যাচ্ছে কী পরিমাণে শব্দতাণ্ডব হয়েছে!”

যদিও কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “অভিযোগ উঠতেই খতিয়ে দেখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে গ্রেফতারও করা হয়েছে। পরিবেশকর্মীরা নিজেদের কাজ করুন। আমরাও আমাদের কাজ করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE