Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Firecrackers

Firecrackers: বাজির নির্দেশে ক্ষতি দেখছেন পরিবেশবন্ধুরা

অনেক বাজি ব্যবসায়ীর বক্তব্য, বাজারে ‘গ্রিন ক্র্যাকার’ বা সবুজ বাজির জোগান নেই বললেই চলে।

শীর্ষ আদালত বলেছে, নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি এবং পোড়ানো বন্ধ করতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকেই।

শীর্ষ আদালত বলেছে, নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি এবং পোড়ানো বন্ধ করতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকেই। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২১ ০৫:২৩
Share: Save:

কলকাতা হাই কোর্ট এ বারেও সব ধরনের বাজি নিষিদ্ধ করায় পরিবেশকর্মী ও পরিবেশবিদেরা খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে তাঁদের বক্তব্য, বাজির বিরুদ্ধে যে-সচেতনতা গড়ে উঠছিল, তা এতে ধাক্কা খাবে। পরিবেশকর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত বলেন, “শীর্ষ আদালতের এই রায় দুর্ভাগ্যজনক। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”

রাজ্যের পরিবেশ দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “হাই কোর্টের রায়ে স্বস্তিতে ছিলাম। এ বার দুশ্চিন্তা হচ্ছে।” তাঁর আশঙ্কা, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের জেরে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। কারণ, শীর্ষ আদালত সবুজ বাজি ব্যবহারের নির্দেশ দিলেও বাস্তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিষিদ্ধ বাজির গায়েই পরিবেশবান্ধব তকমা সেঁটে তা বিক্রির চেষ্টা করতে পারে।

অনেক বাজি ব্যবসায়ীর বক্তব্য, বাজারে ‘গ্রিন ক্র্যাকার’ বা সবুজ বাজির জোগান নেই বললেই চলে। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের ফলে নিষিদ্ধ বাজির গায়ে সবুজ বাজির তকমা সেঁটে দেদার বিক্রির আশঙ্কা থাকছে। কারণ, রাজ্যের কোথাও সবুজ বাজি তৈরি হয়নি। বরং গত বছরের প্রচুর বাজি রয়ে গিয়েছে। গত বছর হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কালীপুজো ও দীপাবলিতে বাংলায় বাজি পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল।

পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ অর্গানাইজ়েশন (পেসো)-এর ছাড়পত্র পাওয়া বাজি কারখানার সংখ্যা মাত্র তিনটি। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তালিকায় রয়েছে ৩৭টি বাজি কারখানা। বাকি সব কারখানা অবৈধ। স্বীকৃত কারখানাগুলির কোনওটিতেই সবুজ বাজি তৈরি হয়নি।

নববাবু জানান, সবুজ বাজি তৈরির জন্য ন্যাশনাল এনভারয়নমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নিরি)-এর শংসাপত্র লাগে। নিরি দেশে কাউকেই এখনও সেই শংসাপত্র দেয়নি। তাই দেশে কোথাও বড় পরিমাণে সবুজ বাজি তৈরি হয় না। সে-ক্ষেত্রে সবুজ বাজি কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। পরিবেশকর্মীদের মতে, নিরি-র তকমা না-থাকলে সব বাজিই নিষিদ্ধ।

চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কোভিড সংক্রমণ বাড়ছে। তার উপরে আবহাওয়া শুষ্ক হচ্ছে। বাতাসে বাড়ছে দূষণ। এই সময়ে হাঁপানি, শ্বাসজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্তেরা খুবই কষ্টে থাকেন। নির্বিচারে বাজি ফাটলে সেই সব রোগী সঙ্কটে পড়বেন।

শীর্ষ আদালত অবশ্য বলেছে, নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি এবং পোড়ানো বন্ধ করতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকেই। তাই আদালতের রায় মানলে বিপত্তি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা সম্ভব, সেই ব্যাপারে প্রশ্ন ও সংশয় রয়েছে। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, বাজার ঘুরে সব বাজি পরীক্ষা করার মতো সময় এবং পরিকাঠামো তাদের নেই।

পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতে দাবি করেছে যে, তারা নিষিদ্ধ বাজি ঠেকাতে সক্ষম। সরকারি কৌঁসুলি বাজি ঠেকানোর তথ্যও দিয়েছেন। তাতে দেখা গিয়েছে, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালেই নিয়ম ভেঙে বাজি পোড়ানোর ঘটনা বেশি ঘটেছে।

প্রশ্ন উঠছে, এ বার যদি সবুজ বাজির তকমা সেঁটে নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হয়, পুলিশ-প্রশাসন তা ঠেকাতে পারবে তো? কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, সবুজ বাজির আড়ালে নিষিদ্ধ বাজির বিক্রি প্রতিরোধ করা বাস্তবে কার্যত অসম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE