ইভটিজিংয়ের অভিযোগে ধৃত যুবক। সোমবার কালনায় মধুমিতা মজুমদারের তোলা ছবি।
স্রেফ একটাই লোক। তারই কটূক্তি, অশালীন অঙ্গভঙ্গির জেরে ছাত্রীদের যাতায়াত করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দিনের পর দিন ওই যুবক স্কুল-কলেজের মেয়েদের এ ভাবে উত্ত্যক্ত করত। রুখে দাঁড়িয়ে তাকে সাবধানও করেছিল মেয়েদের কয়েকজন। ফল হয়নি। শেষমেশ জোট বেঁধে গিয়ে ছেলেটিকে ধরে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিল একদল ছাত্রী।
সোমবার সকালে কালনার কালীতলা মোড়ে সুমন্ত ঘোষ নামে ওই যুবককে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পরে থানায় গিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জনা ত্রিশ ছাত্রী। কালনার পাথুরিয়ামহলের বাসিন্দা বছর আঠাশের সুমন্ত অবশ্য অভিযোগ মানতে চায়নি।
বাস স্ট্যান্ডের কাছে ওই রাস্তা দিয়ে প্রতি দিনই কালনা শহর ও আশপাশের গ্রামের বহু ছাত্রছাত্রী টিউশন পড়তে যায়। স্কুল, কলেজের ওই ছাত্রীদের অভিযোগ, সকাল ৭টা বাজতে না বাজতেই সাইকেল নিয়ে সুমন্ত হাজির হয়ে যেত রাস্তার ধারে। তারপরে মেয়েদের দেখলেই নানা মন্তব্য করত। সম্প্রতি কয়েকটি মেয়ে ঠিক করে, সোমবার সকালে একসঙ্গে ওই এলাকায় গিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকবে তারা। তার পরে কোনও ছাত্রীকে সুমন্ত কটূক্তি করলে সে প্রতিবাদ করবে। সঙ্গে-সঙ্গে আশপাশে লুকিয়ে থাকা বাকিরা গিয়ে পাশে দাঁড়াবে।
সেই মতো এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ কালনার বাঘনাপাড়ার দুই কলেজছাত্রী প্রথমে ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়। অভিযোগ, তাঁদের দেখে যথারীতি অশালীন অঙ্গভঙ্গী করে সুমন্ত। তারা প্রতিবাদ করলে কটূক্তি করে। পরিকল্পনা মতো এগিয়ে আসে অন্য ছাত্রীরা। এক দল ছাত্রীকে ছুটে আসতে দেখে সাইকেল নিয়ে পালাতে যায় সুমন্ত। কিন্তু তাকে ধরে ফেলে ছাত্রীরা। শুরু হয় চড়-থাপ্পড় মারা। গোলমাল দেখে দৌড়ে আসেন আশপাশের বাসিন্দারা। কিছু অভিভাবকও পৌঁছে যান। কালনার ওসি আকাশকুমার মুন্সি সেই সময়ে খানিক দূরে বৈদ্যপুর মোড়ে ছিলেন। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি এসে ওই যুবককে থানায় নিয়ে যান তিনি।
থানায় অভিযোগ করার সময়ে এক কলেজছাত্রী বলেন, ‘‘মাস ছয়েক ধরে ব্যাপারটা চলছিল। ভেবেছিলাম শুধরে যাবে। কিন্তু দেখলাম এ ভাবে শিক্ষা না দিলে ও থামবে না।’’ কালনা কলেজের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘কয়েকজন ছাত্রী অনেক দিন ধরেই ছেলেটির বিরুদ্ধে নালিশ করছিল। বলেছিলাম প্রতিবাদ করতে।’’
থানা থেকে ফিরে যাওয়ার সময়ে এক ছাত্রী বলে, ‘‘আশা করি, এই ঘটনা থেকে অন্য ইভটিজাররাও শিক্ষা নেবে। না হলে তাদের জন্যও কিন্তু একই দাওয়াই অপেক্ষা করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy