Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ভূষণ পুরস্কারে মমতা নেই গোপালকৃষ্ণের

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বঙ্গবিভূষণ সম্মান দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর দিক থেকে আগ্রহ দেখাননি। ফলে তাঁর নামটা পুরস্কার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্ব থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁকে কাছের মানুষ বলে মনেকরে এসেছেন।

অত্রি মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০৪:১৮
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বঙ্গবিভূষণ সম্মান দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর দিক থেকে আগ্রহ দেখাননি। ফলে তাঁর নামটা পুরস্কার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।

তিনি রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্ব থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁকে কাছের মানুষ বলে মনেকরে এসেছেন।

সরকারের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছের কথা জানিয়ে গোপালকৃষ্ণকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই কর্তার দাবি, গোপালকৃষ্ণ জানিয়ে দেন, তিনি পুরস্কার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। তিনি এই পুরস্কারের ব্যাপারে আগ্রহীও নন। সে কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানোর পরেই তালিকা থেকে গোপালকৃষ্ণের নাম বাদ যায়।

এ ব্যাপারে গোপালকৃষ্ণের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ফোন বেজে যায়। বিরোধীরা অবশ্য বলতে শুরু করেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতার কাজকর্মে খানিকটা আশাহত গাঁধীজির পৌত্র। সে কারণেই হয়তো ২০ তারিখের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন তিনি।’’ কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার কথায়, ‘‘গোপালকৃষ্ণ শ্রদ্ধেয় মানুষ। এ রকম হাস্যকর পুরস্কারের তালিকায় এলে তাঁর সম্মান বাড়ত কি?’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীরও মন্তব্য, ‘‘এই পুরস্কার নিয়ে লোকে হাসাহাসি করে। গোপালকৃষ্ণ গাঁধী কি তার মধ্যে নিজেকে জড়াবেন?’’

ঘটনা হল, গোপালকৃষ্ণ একা নন। রাজ্য সরকারের বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন পদার্থবিদ অশোক সেনও। তিনি জানিয়েছেন, ২০ তারিখ তিনি অন্যত্র ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকবেন। আইপিএল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বঙ্গভূষণ নিতে আসতে পারবেন না অরুণ লাল এবং ঋদ্ধিমান সাহা। আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন বলিউডের চিত্র-পরিচালক প্রদীপ সরকারও। ফলে গোপালকৃষ্ণের সঙ্গে অশোক সেন, অরুণ লাল এবং ঋদ্ধিমান সাহার নামও তালিকা থেকে বাদ পড়ছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। প্রদীপ সরকারের নাম থাকবে না বাদ যাবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মেয়াদ ফুরনোর আগে এটাই সম্ভবত শেষ ‘ভূষণ’ পুরস্কার অনুষ্ঠান। গত কয়েক বছর ধরে শাসক দলের বিরুদ্ধে বারবার ‘ঘনিষ্ঠ বৃত্তের’ কিছু লোককে ঘুরিয়েফিরিয়ে পুরস্কার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বারেও সেই ‘চেনামুখ’ কম নেই। দেব (বঙ্গভূষণ), কবীর সুমন (বঙ্গবিভূষণ), ভেঙ্কটেশ ফিল্মস (বঙ্গবিভূষণ) পুরস্কার পাচ্ছেন। বঙ্গবিভূষণের জন্য লিয়েন্ডার পেজকেও আগামী বুধবারের অনুষ্ঠানে হাজির করানোর চেষ্টা চলছে। তবে সেখানেও কাঁটা রয়েছে। এর আগে রাজ্য সরকারের খেল সম্মান পুরস্কারে ‘সারাজীবনের স্বীকৃতি’ দেওয়া হয়েছিল লিয়েন্ডারকে। লিয়েন্ডারের হয়ে তাঁর বাবা ভেস পেজ পুরস্কার নিয়েছিলেন। শোনা যাচ্ছে, এ বার তাঁকে প্রস্তাব দেওয়ার পরে লিয়েন্ডারের পরিবারের তরফে জানানো হয়, সে বার যে আর্থিক মূল্যের চেক দেওয়া হয়েছিল আর ব্যাঙ্কে যে পরিমাণ টাকা জমা পড়েছিল, তার মধ্যে ফারাক ছিল। ফলে় এতে তাঁরা অসম্মানিত বোধ করেছেন। সেই কারণে লিয়েন্ডারও আসবেন না বলেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে যোগাযোগ করার পরে এখন নিমরাজি লিয়েন্ডার। প্রশাসন সূত্রে খবর, লিয়েন্ডার সরকারকে জানিয়েছেন, ২০ মে তাঁর বাবার জন্মদিন। সেই সূত্রে তিনি কলকাতাতেই থাকবেন। চেষ্টা করবেন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার। তবে আনন্দবাজারের তরফে ফোন করা হলে লিয়েন্ডার বা ভেস পেজের সাড়া মেলেনি।

রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রের খবর, গত চার বছরে ‘ভূষণ’ পুরস্কার পেয়েছিলেন যথাক্রমে ৯, ১৬, ৩০ এবং ৩৩ জন। এ বার তা বেড়ে হচ্ছে ৩৯। এখনও পর্যন্ত সিদ্ধান্ত রয়েছে, বঙ্গবিভূষণ প্রাপকদের ৫ লক্ষ এবং বঙ্গভূষণ প্রাপকদের ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানের বাজেট তিন কোটি টাকা ছাপিয়ে যাবে। নবান্নের শীর্ষ আমলাদের কথায়, “ইমাম-মোয়াজ্জিন ভাতা বাবদ ১৮৪ কোটি, চলচ্চিত্র উত্‌সবে ৩০ কোটি, জঙ্গলমহল-সুন্দরবন ফুটবল কাপের জন্য ৩০ কোটি খরচ হয়। সেখানে ‘ভূষণ’ পুরস্কারে দু’কোটি টাকা আর এমন কী!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE