Advertisement
E-Paper

তোফার টোপেই বহু তথ্য হাতাচ্ছে নেট-চোর

তৃষার মতো তাঁর বন্ধুরা বারবার সেই লিঙ্ক খুলেছেন। দেখেছেন, কয়েক জন বিদেশি মহিলা ওই সংস্থার জিনিস পেয়েছেন বলে দাবি করে নির্দিষ্ট সাইটে মন্তব্য করেছেন।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৮

অফিসে মধ্যাহ্নভোজনের বিরতিতে হোয়াটসঅ্যাপে চোখ রাখতেই আনন্দে লাফিয়ে উঠেছিলেন বালিগঞ্জের বছর তেইশের তৃষা সাহা। এক বন্ধু তাঁকে এক আন্তর্জাতিক প্রসাধনী সংস্থার লিঙ্ক শেয়ার করে জানিয়েছেন, সংস্থার প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে পাঁচ হাজার টাকার জিনিস বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। ঝটপট লিঙ্ক খুলে সংস্থাকে মোবাইল নম্বর, পেশা, ঠিকানার মতো তথ্য জানিয়েছেন। কিন্তু তার পরে কোনও উত্তর নেই।

তৃষার মতো তাঁর বন্ধুরা বারবার সেই লিঙ্ক খুলেছেন। দেখেছেন, কয়েক জন বিদেশি মহিলা ওই সংস্থার জিনিস পেয়েছেন বলে দাবি করে নির্দিষ্ট সাইটে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু কয়েক দিন কেটে গেলেও তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য কোথায়, কাদের হাতে চলে গেল, তৃষা বা তাঁর বন্ধুরা সেটা বুঝতেই পারছেন না।

অনেকেই প্রশ্ন করছেন, তা হলে ওই সব সাইটে দেওয়া তথ্য কাদের? ঠিকানা, পেশা কিংবা মোবাইল নম্বরের মতো ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে সেই সাইটের লাভ কী?

সাইবার বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই সব ভুয়ো লিঙ্ক তৈরি হয় মূলত দু’টি উদ্দেশ্যে। প্রথমত, অনেকেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় শহরের বিভিন্ন পেশার মানুষের ই-মেল এবং মোবাইল নম্বরের তালিকা বিক্রি করেন। তাই হরেক পেশার মানুষের ফোন নম্বর এবং অন্যান্য তথ্য জোগাড় করার জন্য অনেকেই এ ভাবে প্রতারণায় মেতেছে। তাদের কারসাজিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুমতি ছাড়াই তাঁর মোবাইল নম্বর-সহ নানা তথ্য বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়।

দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটা আরও বিপজ্জনক। নেট ব্যাঙ্কিংয়ের যুগে সহজেই নতুন ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড পাওয়া যায়। তাই ঠিকানা, ফোন নম্বর, জন্ম-তারিখের মতো কিছু তথ্য দিতে পারলেই কার্ড তৈরি হয়ে যাবে। অনেক সময়ে বলা হয়, জিনিস পাঠানোর জন্য অল্প টাকা দিতে হবে। তাই অ্যাকাউন্ট নম্বর জানতে চায়। সেখানেই সমস্যায় পড়েন অনেকে। অ্যাকাউন্ট
নম্বর জানলেই তাঁর অ্যাকাউন্টের টাকা যে-কেউ লেনদেন করতে পারবে। কারণ, জন্ম-তারিখ বা মোবাইল নম্বরের মতো তথ্য নিয়ে ফরগট পাসওয়ার্ড দিয়ে তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকে টাকা তোলা যায়।

সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্তের পরামর্শ, কোনও সাইটে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার আগে সেই সাইট সম্পর্কে ভাল ভাবে খোঁজখবর নেওয়া দরকার। তাঁর কথায়, ‘‘মোবাইল নম্বর বা জন্ম-তারিখের মতো ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার আগে ধৈর্য ধরে সব যাচাই করতে হবে। যে-সব কোম্পানির নামে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, তাদের অফিশিয়াল সাইট দেখতে হবে।’’ তিনি জানান, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের পিন নম্বর তো বটেই, অ্যাকাউন্ট নম্বরও গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় তথ্য। কারণ, নেট ব্যাঙ্কিংয়ের যুগে এর যে-কোনও একটি তথ্য জানতে পারলেই জালিয়াতি করা যায়। তাই অফার দ্রুত শেষ হবে, এমন কিছু জানালেও যাচাই না-করে তথ্য জানানো ঠিক নয়। জানালে বিপদ বাড়তে পারে।

বিজ্ঞাপনে থাকছে খেলায় জিতে পুরস্কার জিতে নেওয়ার টোপও। বছর কুড়ির সৌরভ সেন সপ্তাহখানেক আগে ফেসবুকে একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন বিপণি সংস্থার লিঙ্ক পান। সেই সাইটে দাবি করা হয়েছিল, ধাঁধার উত্তর দিতে পারলেই উপহার হিসেবে হাজার দশেক টাকার জিনিস পাঠানো হবে। ধাঁধার সমাধানে নেমে সৌরভ দেখেন, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, জন্ম-তারিখের মতো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু তথ্য দেওয়ার পরে ধাঁধা দ্বিতীয় পর্যায়ে যায়। সেখানে তাঁকে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে বলা হয়।

এ ভাবেই লোভ দেখিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে নেট-দুষ্কৃতীরা।

Cyber Crime Internet Social Media Net Banking সাইবার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy