রেল কারখানায় তৈরি হচ্ছে সেই ইঞ্জিন। ছবি: শৈলেন সরকার।
দেশের কিছু শহরে দ্রুত গতিসম্পন্ন ট্রেন চালানোর কথা ঘোষণা করেছিল রেল মন্ত্রক। গতিমান এক্সপ্রেস নামে ওই ট্রেন প্রথমে দিল্লি থেকে আগ্রা পর্যন্ত চলার কথা। সেই ট্রেনের জন্য ইঞ্জিন তৈরি হচ্ছে চিত্তরঞ্জন রেল কারখানায়। কারখানার তরফে জানানো হয়েছে, ইঞ্জিন তৈরির কাজ প্রায় শেষের মুখে। শুধু এই ইঞ্জিন তৈরি নয়, সম্প্রতি এমন বেশ কিছু উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা হয়েছে যার ফলে ইঞ্জিন তৈরির ক্ষেত্রে বড়সড় পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।
গতিমান এক্সপ্রেসের জন্য সাদা ও লাল রঙের দু’টি ইঞ্জিন তৈরি হচ্ছে চিত্তরঞ্জনে। শনিবার উৎপাদন প্রক্রিয়া ঘুরিয়ে দেখানোর পাশাপাশি সেগুলির কর্মকুশলতাও ব্যাখ্যা করেন কারখানার আধিকারিকেরা। তাঁরা জানান, ৬ হাজার অশ্বশক্তি ক্ষমতার এই দু’টি ইঞ্জিন ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে দৌড়তে পারে। সেগুলি সফল ভাবে চললে ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও ১১টি ইঞ্জিন এখানে তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) সিপি তায়েল শনিবার জানান, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামি অর্থবর্ষ থেকে আর কোনও প্রথাগত বা জিটিও কারিগরির ইঞ্জিন তৈরি করবেন না। পরিবর্তে উন্নত প্রযুক্তির আইজিবিটি কারিগরির ‘থ্রি-ফেজ’ ইঞ্জিন তৈরি করবে তাঁদের সংস্থা। এর জন্য কারখানায় আধুনিকীকরণ প্রকল্পের কাজও শেষ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। চলতি অর্থবর্ষেই তাঁরা প্রথাগত ইঞ্জিন তৈরির সংখ্যা অনেক কমিয়ে দিয়েছেন।
জেনারেল ম্যানেজার জানান, এই অর্থবর্ষে তাঁদের ইঞ্জিন তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছে ২৮০টি। এর মধ্যে তাঁরা জিটিও কারিগরির প্রথাগত ইঞ্জিন তৈরি করবেন মাত্র ৬৫টি। বাকি ২১৫টি ইঞ্জিন তৈরি করা হবে আইজিবিটি কারিগরির থ্রি-ফেজ। নমুনা হিসেবে সম্প্রতি একটি থ্রি-ফেজ ইঞ্জিনের কাজও শেষ করা হয়েছে বলে কারখানার তরফে জানানো হয়। এর জন্য সংস্থার শ্রমিক-কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে ৬০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন জিএম। তিনি আরও জানান, এই ইঞ্জিনগুলি ৬ হাজার অশ্বশক্তি ক্ষমতাসম্পন্ন। প্রযুক্তির দিক থেকে অতি উন্নত। ঘণ্টায় প্রায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে অনায়াসে দৌড়তে পারবে। এই ইঞ্জিনের গুণাগুণ, নিরাপত্তা ও বিশ্বস্ততার বিষয়টি নিয়ে কিছু দিন আগে চিত্তরঞ্জনে একটি আলোচনা চক্রের আয়োজন হয়। সেখানে দেশের সব ক’টি রেল জোনের আধিকারিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কারখানার তরফে ইঞ্জিন সম্পর্কে সামগ্রিক বিষয়গুলি তুলে ধরা হলে আধিকারিকেরা সন্তোষ প্রকাশ করে গিয়েছেন বলে জানান তিনি।
কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন প্রযুক্তির ইঞ্জিন তৈরির খরচও অনেক বেশি। একটি প্রথাগত ইঞ্জিন তৈরিতে যেখানে খরচ হয় প্রায় আট কোটি টাকা, সেখানে একটি আইজিবিটি থ্রি-ফেজ ইঞ্জিন তৈরির খরচ হয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। জিএম সিপি তায়েল বলেন, ‘‘কারখানায় নতুন প্রযুক্তি আনায় আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমরা মনে করি, চলতি অর্থবর্ষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে। আগামি বছরে আমরা ৩৩০টি ইঞ্জিন তৈরি করব। কারখানায় বেশ কিছু নিয়োগও হবে।’’ তাঁর আশা, অদূর ভবিষ্যতেই এখানে ৯ হাজার অশ্বশক্তি ক্ষমতার ইঞ্জিন তৈরি হবে। শুধু তাই নয়, আরও বছর কয়েক পরে ১২ হাজার অশ্বশক্তি ক্ষমতার ইঞ্জিনও বানানো হবে।
এ দিন জিএম জানান, ডানকুনিতে তাঁদের দ্বিতীয় কারখানাটিও সাফল্যের দিকে এগোচ্ছে। নভেম্বরে ওই কারখানা থেকে প্রথম ইঞ্জিন বেরোবে। আগামি অর্থবর্ষে ডানকুনিতে কমপক্ষে ১০০টি ইঞ্জিন তৈরির পরিকল্পনা আছে। তিনি আরও জানান, দেশীয় শিল্পের উন্নতির কথা ভেবে বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ ও সহায়ক সামগ্রীর আমদানি কমানো হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, গত বছর দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট থেকে ৫০০ এক্সেল চাকা আনা হয়েছিল। এ বার তা বাড়িয়ে ১৩০০ করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy