Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বীরভূমের গরমও তাঁকে কাবু করতে পারেনি

৪৬ বছর বয়সি এস্থার দুফলো অর্থনীতিতে সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী।

সোমবার এমআইটি-তে সাংবাদিক বৈঠকে এস্থার। ছবি: এপি।

সোমবার এমআইটি-তে সাংবাদিক বৈঠকে এস্থার। ছবি: এপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:৩৯
Share: Save:

অপারেশন বর্গা নিয়ে একটা গবেষণাপত্র লিখেছিলেন অর্থনীতির গবেষক ও শিক্ষক মৈত্রীশ ঘটক। এমআইটি-র এক ছাত্রী তার উপরে কয়েকটি মন্তব্য লিখেছিল। ‘‘দীর্ঘ দিন বিষয়টা নিয়ে পড়ার পরেও অবাক করে দিয়েছিল সেই সব কমেন্ট। বুঝেছিলাম, এ এক বিশেষ প্রতিভা।’’ অনুমান নির্ভুল। ‘বিশ্ব-দারিদ্রের মোচনে পরীক্ষামূলক অর্থনীতি চর্চা’য় বিরাট অবদানের জন্য অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাইকেল ক্রেমার-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে অর্থনীতিতে ২০১৯ সালের নোবেল পুরস্কার পেলেন এস্থার দুফলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-র (এমআইটি) অধ্যাপক এস্থার ফ্রান্সের মেয়ে, গত দু’দশকের বেশি আমেরিকাবাসী। ব্যক্তিগত জীবনে অভিজিতের স্ত্রী।

৪৬ বছর বয়সি এস্থার দুফলো অর্থনীতিতে সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী। অবশ্য চল্লিশ-অনূর্ধ্বদের জন্য ‘জন বেটস ক্লার্ক মেডেল’ যখন পেয়েছিলেন, তখন থেকেই বন্ধুরা বলতেন, নোবেল কেবল সময়ের অপেক্ষা। ‘ফরেন পলিসি’ পত্রিকায় তিনি শীর্ষ একশো জন চিন্তাশীলদের এক জন। বহু পুরস্কার, সম্মানের প্রাপক ছোটখাটো মেয়েটিকে ঘনিষ্ঠরা যতটা সম্মান করেন ক্ষুরধার মেধার জন্য, ততটাই ফিল্ড রিসার্চে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য। তথ্য-পরিসংখ্যান সংগ্রহে যেমন তাঁর নিষ্ঠা, তেমনই পরিশ্রম করার ক্ষমতা।

তেইশ বছর বয়সে এস্থার আসেন বীরভূমে কাজ করতে, পঞ্চায়েত নিয়ে। প্রবল গরমে দিব্যি থাকতেন ছাপোষা লজের নোংরা চাদর-পাতা বিছানায়। বাংলা বোঝেন না, তবু প্রতিটা প্রশ্নোত্তর শুনতেন উৎসুক হয়ে। যেমন তাঁর নেতৃত্বের দক্ষতা, তেমনই পরিশ্রমক্ষমতা। ‘আমাকে মুগ্ধ করে এস্থারের সততা,’ বললেন অর্থনীতিবিদ রাঘবেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, এস্থারের সহ-লেখক। ‘যখনই ওঁর সন্দেহ হয়েছে যে তথ্যে জল মিশেছে, তা বাতিল করতে দ্বিধা করেননি। টাকা নষ্ট হয়েছে। তবুও না।’ বীরভূম ও উদয়পুরের পঞ্চায়েতে মহিলা প্রধানদের সিদ্ধান্ত-ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেন এস্থার-রাঘবেন্দ্র, রান্ডমাইজ়ড কন্ট্রোল ট্রায়াল প্রতিষ্ঠায় যা একটি দিকনির্ণায়ক কাজ। এস্থারের কাজ জগৎ জুড়ে, কিন্তু সেরা কাজের অধিকাংশই ভারতকে নিয়ে।

মৈত্রীশের মতে, এই পদ্ধতি আগে ছিল পায়ে-হাঁটা পথ, প্রবল পরিশ্রমে এস্থার সেখানে তৈরি করেছেন হাইওয়ে। না হলে হয়তো এত শীঘ্র ‘আরসিটি’ একটা পদ্ধতি হিসেবে মান্যতা পেত না। দুই সন্তানের মা এস্থার নোবেল পাওয়ার পর বলেছেন, ‘আরও বেশি মেয়ে উৎসাহিত হোক কাজ করতে, আর আরও বেশি পুরুষ তাদের সেই সম্মান দিক, যা প্রতিটি মানুষের প্রাপ্য।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nobel Prize Esther Duflo Birbhum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE