Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ভাবমূর্তি রক্ষায় সেনার ভরসা নেট-মিতালি

এ যেন সেই ‘আপদ’-কেই অস্ত্র করে তোলা! সেনার ভূমিকা জরিপ করতে ইদানীং কড়া সমালোচনার সুর শোনা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সম্প্রতি কাশ্মীরে বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরেও সমালোচকেরা গলা চড়িয়েছেন।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৭
Share: Save:

এ যেন সেই ‘আপদ’-কেই অস্ত্র করে তোলা!

সেনার ভূমিকা জরিপ করতে ইদানীং কড়া সমালোচনার সুর শোনা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সম্প্রতি কাশ্মীরে বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরেও সমালোচকেরা গলা চড়িয়েছেন। পাল্টা প্রচার করে জঙ্গি উপদ্রুত এলাকার মানুষকে কাছে টানতে এ বার সেই সোশ্যাল মিডিয়াকেই হাতিয়ার করছে সেনাবাহিনী। কাশ্মীরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নর্দার্ন কম্যান্ড আগেই নেমেছে এ পথে। এ বার উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও একই দাওয়াই ভাবা হয়েছে।

সম্প্রতি টুইটার ও ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কম্যান্ড। তাতে সেনার নানা জলকল্যাণমূলক কাজ তুলে ধরা হচ্ছে। সেনা সূত্র বলছে, ফেসবুক ও টুইটারে এই সব কাজ দেখিয়েই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুবসমাজকে কাছে টানা হবে। তার ফলে তরুণ প্রজন্মকে সহজে ‘বিপথে’ নিয়ে যেতে পারবে না জঙ্গিরা। ‘ফেসবুক পেজ’ উদ্বোধন করতে গিয়ে সে-ই ইঙ্গিত দিয়েছেন জিওসি-ইন-সি লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্রবীণ বক্সী। তাঁর কথায়, ‘‘ফেসবুকের মাধ্যমে নাগরিকদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর যোগাযোগ বাড়বে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে এই যোগাযোগ দেশের নিরাপত্তাকেও মজবুত করবে।’’

সেনাকর্তারা খানিকটা চিকিৎসাবিজ্ঞানের সুরে কথা বলছেন। রোগ সারানোর থেকে রোগ জীবাণুকে দূরে সরিয়ে রাখাতেই জোর দিচ্ছেন তাঁরা। ফোর্ট উইলিয়মের এক সেনাকর্তার কথায়, ‘‘জঙ্গি ঠেকাতে শুধু বন্দুক ব্যবহারই আর যথেষ্ট নয়। বরং বন্দুকের অতিব্যবহার গোলমাল আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটা আমরা মাথায় রাখছি।’’ সেই কারণেই যুব সমাজের কাছে পৌঁছতে সোশ্যাল মিডিয়াকে বেছে নিয়েছেন তাঁরা। সেনাবাহিনীর অনেকের মতেই, স্বাধীনতার কয়েক দশক পরেও দেশের আমজনতার সঙ্গে সেনাবাহিনীর সরাসরি যোগাযোগ ছিল না। ফলে অনেক সময়ই নানা ঘটনা ঘিরে ভুল বোঝাবুঝি বাড়ত। অনেক সময়েই কোনও সেনা জওয়ানের কাজ ঘিরে বিতর্কে সেনা বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। লোকে কী বলতে চাইছে, কিংবা সেনাবাহিনীর কী বক্তব্য, — সব-কিছু নিয়েই ধোঁয়াশা থেকে গিয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। ইস্টার্ন কম্যান্ডের এক কর্তার কথায়, ‘‘স্মার্টফোনের যুগে প্রত্যন্ত এলাকাতেও এখন ফেসবুকের রমরমা। তা ছা়ড়া, এর মাধ্যমে দেশের লোকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যাবে। কোথাও কোনও গলদ থাকলে আমরা শুধরেও নিতে পারব।’’

সেনা অফিসারদের আশা, জঙ্গি দমনের বাইরে জওয়ানেরা যে দুর্যোগে উদ্ধার বা জনকল্যাণমূলক কাজও করেন, তা সোশ্যাল মি়ডিয়ায় প্রচার করলে দ্রুত লোকের কাছে পৌঁছবে। ‘ইস্টার্ন কম্যান্ড’-এর ফেসবুক পেজে গেলেই যেমন দেখা যাচ্ছে, অসমের বন্যায় দুর্গত বৃদ্ধাকে জনৈক সেনা জওয়ানের পিঠে চাপিয়ে উদ্ধারের ছবি। অসম ও বিহারের বন্যায় সেনার উদ্ধারকাজের ভিডিও-ও ‘ওয়ালে’ রয়েছে। ‘‘এমন ছবি ভবিষ্যতে বাহিনীর মুখ হয়ে উঠতে পারে,’’ বলছেন এক সেনাকর্তা। তিনি জানান, কোথায় কখন সেনাবাহিনীর নিয়োগের র‌্যালি হচ্ছে, কী কী নথিপত্র লাগবে, এ সব খবরও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হবে।

তবে সেনাবাহিনীর নেটে চলাফেরা নিছকই জনসংযোগের পরিসরে আটকে থাকছে না। জঙ্গিদমন হোক বা বহিঃশত্রুর সঙ্গে লড়াই, সাইবার মাধ্যম যে আগামী দিনে হাতিয়ার হতে চলেছে সে ব্যাপারেও নিশ্চিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উচ্চকর্তারা। সেনা সূত্রের খবর, এ বিষয়টি মাথায় রেখেই দেশের তিনটি বাহিনীর (স্থলসেনা, বায়ুসেনা ও নৌ-সেনা) বাছাই করা অফিসারদের নিয়ে ‘সাইবার কম্যান্ড’ নামে একটি পৃথক বাহিনী গড়ার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। সে-কাজ শেষ হতে এখনও দেরি। তবে এখনই সেনাবাহিনীর প্রতিটি কম্যান্ডের সদর দফতরে সাইবার মাধ্যমের উপরে একটি ‘সেল’ তৈরি করা হয়েছে। লড়াইয়ের পাশাপাশি নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বা়ড়াতেও সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করতে তৎপর হয়েছেন ওই সেলের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Army Twitter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE