ঠিকা কর্মী হিসেবে গার্ডেনরিচ জাহাজ কারখানায় কর্মরত অবস্থায় আইএসআই এজেন্ট ইরশাদ আনসারি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ২০১৫ সালে। তার পরেই কলকাতা পুলিশকে সরিয়ে ওই কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিয়োরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ) বা কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীকে। ইরশাদের গ্রেফতারির বছর তিনেক পরে, গত ২১ অগস্ট ওই কারখানা থেকেই সিআইএসএফের এক ভুয়ো জওয়ানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভুয়ো কেন? তদন্ত বলছে, শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীতে কনস্টেবলের চাকরির জন্য আনমোল কুমার নামে ওই ব্যক্তি নিজে কোনও পরীক্ষাই দেয়নি! পীযূষ হিমাংশু নামে তার এক আত্মীয়ই যে তার হয়ে পরীক্ষা দিয়ে তাকে এই চাকরিতে ঢুকিয়ে দিয়েছে, জেরায় তা কবুল করেছে আনমোল। সিআইএসএফ গার্ডেনরিচ থানায় অভিযোগ করেছিল, ওই জওয়ানের গতিবিধি অত্যন্ত সন্দেহজনক।
কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্তকারী দল রবিবার বিহারের খগড়িয়া জেলার বেলদৌর থেকে পীযূষকে গ্রেফতার করেছে। আনমোল খগড়িয়ারই গোগারির বাসিন্দা। প্রায় এক বছর ধরে সে গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ কনস্টেবল-পদে কর্মরত ছিল। এই সময়ে সে কোনও অবৈধ কাজকর্ম করেছে কি না, সেটা সিআইএসএফের কাছেও স্পষ্ট নয়।
যুদ্ধজাহাজ, ডুবো জাহাজ (সাবমেরিন) তৈরি হয় ওই কারখানায়। স্বাভাবিক ভাবেই ‘হাই সিকিয়োরিটি জ়োন’ হিসেবে বিবেচিত হয় ওই কারখানা-চত্বর। সেখানে ঢুকতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। এ-হেন সুরক্ষা-ব্যূহের মধ্যে আইএসআই এজেন্ট কী ভাবে ঢুকছে, কী ভাবে অন্য কেউ পরীক্ষা দিয়ে আত্মীয়কে সেখানে জওয়ানের চাকরি পাইয়ে দিচ্ছে, সেই রহস্য হতবাক করে দিয়েছে তদন্তকারীদেরও। আতঙ্ক ছড়িয়েছে কারখানার অন্দরে। চিন্তিত সিআইএসএফ। আনমোল সেখানে থেকে চরবৃত্তি করত কি না, তা জানা যায়নি। পীযূষকে নিয়ে সিটের আজ, সোমবার কলকাতায় পৌঁছনোর কথা। তার পরে দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করলে সব জানা যাবে বলে আশা করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দেড়েক আগে চাকরিতে যোগ দেয় আনমোল। প্রশিক্ষণ শেষে বছরখানেক আগে তাকে গার্ডেনরিচে পাঠানো হয়। গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সিআইএসএফ তাকে বেশ কয়েক বার জিজ্ঞাসাবাদ করে, কিন্তু নানা ছুতোয় সব প্রশ্নেরই জবাব এড়িয়ে যায় সে। তার পরেই তার চাকরির পরীক্ষার নথি আনানো হয়। দেখা যায়, সেই নথির সইয়ের সঙ্গে আনমোলের এখনকার সইয়ের কোনও মিল নেই। পরীক্ষার কিছু প্রশ্নের উত্তর নতুন করে লিখতে দেওয়া হলে ব্যর্থ হয় সে।
তার পরেই সিআইএসএফের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার রঞ্জীবকুমার মিশ্র গার্ডেনরিচ থানায় অভিযোগ জানান, আনমোলের গতিবিধি খুবই
সন্দেহজনক। তদন্ত করুক পুলিশ। জেরায় সদুত্তর দিতে না-পারায় ২১ অগস্ট রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে সিট গড়ে তদন্তে নামে পুলিশ। বিশ্বজিৎ দাস নামে এক অফিসারকে সিটের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁরা দফায় দফায় জেরা করে পীযূষের কথা জানতে পারেন। আনমোল পুলিশের কাছে বলেছে, চাকরি বা পরীক্ষার বিষয়ে সে কিছুই জানত না। পীযূষই তাকে জানায়, সে চাকরি পেয়েছে। তার পরেই তাকে প্রশিক্ষণে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নিরাপত্তার ফাঁক গলে কী ভাবে এটা সম্ভব হল, সেটা সিটের তদন্তের অন্যতম বিষয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy