E-Paper

বিয়ের তারিখে শূন্যতা, বিচারের দিনের জন্য অপেক্ষা মা-বাবার

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নির্যাতিতা ও নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার মা মঙ্গলবার বলেন, “কিছু কিছু দিন থাকে, যে দিনগুলোয় টেকা যায় না। ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ এমনই দিন। সব ঠিক থাকলে আজকেই বিয়ে হত আমার মেয়ের।”

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:২১
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সময় কত হল?

এত ক্ষণে তো পুরোহিত সব গুছিয়ে ফেলেছেন। বরের গাড়ি এসেছে। বরণ করে ঘরে তোলার জন্য হুড়োহুড়ি। বাড়ির এক মাত্র মেয়ে বলে কথা।

কিন্তু বাড়ি তো ফাঁকা। ভিড় নেই। আলো নেই। এক গভীর শূন্যতা শুধু।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নির্যাতিতা ও নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার মা মঙ্গলবার বলেন, “কিছু কিছু দিন থাকে, যে দিনগুলোয় টেকা যায় না। ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ এমনই দিন। সব ঠিক থাকলে আজকেই বিয়ে হত আমার মেয়ের।”

কয়েক মুহূর্ত সব চুপ। ফোনের ও-পারে গলা কাঁপছে। বললেন, “সব ঠিক থাকলে... কিন্তু কিছুই তো ঠিক নেই। আর কবে ঠিক হবে? সব শেষ হয়ে গিয়েছে আমাদের। কোনও স্বপ্নই বেঁচে নেই। শুধু বিচারের লড়াইটা আছে।”

মা জানান, কিছুই পড়তে ভাল লাগে না এখন। বাড়ির টেলিভিশনও বন্ধই থাকে বেশির ভাগ সময়। কী ভাবে যে সময় কাটছে, হুঁশ থাকে না। খেয়াল হলে মনে হয়, অনেক ক্ষণ এক জায়গায় বসেই তো কেটে গেল।

তিনি বলেন, “টিভিতে কিছু রাজনৈতিক লোকের মুখ দেখলে রাগ হয় আর কিছু বিজ্ঞাপন দেখলে মনে হয় টিভিটা ভেঙে ফেলি। বিশেষ করে বিয়ের শাড়ি, গয়নার বিজ্ঞাপনগুলো এখন আর দেখতে পারি না।” বলে চলেন, “মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের। অল্প অল্প করে মেয়ের জন্য গয়না তৈরি করিয়েছিলাম। বিয়ের কথা চূড়ান্ত হলে, সব গুছিয়ে এনেছিলাম। এর মধ্যেই আমাদের দুই বাড়ির কথা হল। ছেলের বাড়ি গেলাম। সেখানেই ২৫ নভেম্বর দিনটা ঠিক হল। মেয়ে বলেছিল, এমডি পরীক্ষা হয়ে গেলে তিন মাসে বাকি সব গুছিয়ে নেবে।”

কান্না গিলে নেন সন্তানহারা মা। “শুধু আমরা নই, আমার মেয়ের বন্ধুর পরিবারটাও শেষ হয়ে গিয়েছে। মেয়ে যে বাড়িটায় বিয়ে করতে চেয়েছিল, সেটার সামনে দিয়ে যেতে পারি না। কলকাতার দিকে যাওয়ার থাকলে টালা ব্রিজ পেরোতেও অস্বস্তি হয়।” তার পরেই হঠাৎ প্রশ্ন, “আমার মেয়ের খুনের বিচার কি পাব না?”

গোড়া থেকেই সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের পাশাপাশি একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তবে সিবিআই-তদন্তে শুধু সঞ্জয়কেই আসামি হিসেবে দাবি করা হয়। তখনই সিবিআই চার্জশিটে অনাস্থা প্রকাশ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় নির্যাতিতার পরিবার। সেই আইনি লড়াই চলছে। নিম্ন আদালতের বিচারে সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাবাসের সাজা হয়েছে। কিন্তু তার সর্বোচ্চ সাজা (মৃত্যুদণ্ড) চেয়ে সিবিআই-ও হাই কোর্টে মামলা করে। সঞ্জয়ও পাল্টা নিজেকে নির্দোষ দাবি করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে।

নির্যাতিতার মায়ের কথায়, “প্রথমে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে ছিল আমাদের মামলা। পরে তা বিচারপতি দেবাংশু বসাকের বেঞ্চে যায়। সেখানেই সিবিআইয়ের মামলা আর সঞ্জয়ের আর্জিটা রয়েছে। মাননীয় বিচারপতি একসঙ্গেই সবটা শুনবেন ঠিক করেন। পরে জানতে পারি, বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চে আমাদের মামলা পাঠানো হয়েছে। এখন শুনছি, বিচারপতি দেবাংশু বসাকের বেঞ্চেই মামলা ফিরে এসেছে। তিনি বাইরে রয়েছেন। ফিরলে শুনানির তারিখ জানতে পারব। বিচারের জন্য আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে, জানি না।”

আর জি কর মামলা নিয়ে, তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছে নানা মহলেই। আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় যেমন বললেন, “শেষ পর্যন্ত কিসের লড়াই চলবে জানি না। যেহেতু অনেকটা সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ও একাধিক রকমের পদক্ষেপ হয়েছে, তাই এই মামলা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে সে নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান।”

তবে মৃতার বাবার কণ্ঠে জেদ। বলেন, “লড়াই চলবে। আমার মেয়ের বিয়ের দিন ছিল আজ। এই সব দিনগুলোই নতুন করে লড়াইয়ের শক্তি দিয়ে যায়।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RG Kar Medical College and Hospital Incident RG Kar Rape and Murder Case Marriage ceremony

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy