ফাইল চিত্র।
ওয়ার্ড নম্বর ১১৮। তৃণমূলের তারক সিংহ সেখানকার কাউন্সিলর এবং অন্যতম মেয়র-পারিষদও। ওয়ার্ড নম্বর ১১৬। সেখানকার তৃণমূল কাউন্সিলর তারকবাবুরই মেয়ে কৃষ্ণা সিংহ। ওয়ার্ড নম্বর ১১৭। সেখানকার আসন্ন উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী করেছে অমিত সিংহকে। যিনি তারকবাবুর ছেলে, কৃষ্ণাদেবীর ভাই।
বঙ্গীয় রাজনীতিতে এটা পরিবারতন্ত্রের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে চলেছে অভিযোগ উঠছে। অন্য কোনও প্রার্থী কি পাওয়া গেল না? প্রশ্ন তুলছেন ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত তৃণমূল কাউন্সিলর শৈলেন দাশগুপ্তের স্ত্রী কল্যাণী দাশগুপ্ত। শৈলেনবাবুর মৃত্যুতে ওই আসন খালি হয়েছে। তাঁর স্ত্রী বলছেন, ‘‘উনি (শৈলেনবাবু) অসুস্থ হওয়ার পর থেকে এই ওয়ার্ডের কাজকর্ম তো আমিই দেখেছি। অথচ আমাকে বাদ দিয়ে রাতারাতি প্রার্থী করা হল এমন এক জনকে, যাঁর বাবা ও দিদি সকলেই কাউন্সিলর।’’ ১৬ ডিসেম্বর, রবিবার ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট। সেই উপনির্বাচনের প্রচারে এই একটি বিষয়ই ঘুরেফিরে উঠছে বাম এবং বিজেপি প্রার্থীদের মুখে। চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে কংগ্রেসও।
পরিবারতন্ত্রের অভিযোগকে অবশ্য আমল দিতে রাজি নন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, পুরসভা সরকারের প্রথম মুখ। সেখানে কর্মঠ যুবকের দরকার। তাই অমিতকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু তৃণমূল তো এক সময় পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল। এখন কি সেটাই হচ্ছে না?
শুভাশিসবাবুর জবাব, ‘‘ভোটে তো জেতার জন্য প্রার্থী দেওয়া হয়। যাঁর জেতার সম্ভাবনা রয়েছে, তাঁকেই প্রার্থী করা হয়েছে। এখানে দলের প্রার্থী অমিতের বাবা ঘটনাচক্রে কাউন্সিলর।’’ আর কী বলছেন প্রার্থী অমিত? ‘‘বিজেপির রাজনাথ সিংহ, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ারাও তো নিজের ছেলেকে বিধায়ক করেছেন। এখানে তাঁদের দলের কর্মীদের মুখে পরিবারতন্ত্র মানায় না,’’ বলছেন অমিত। যদিও পরিবারতন্ত্রের নালিশ শুধু বিজেপি তোলেনি। বাম, কংগ্রেস, এমনকি অমিতবাবুর নিজের দলের অন্দরেও উঠছে একই অভিযোগ।
পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসার পরে রাজ্যে এটাই প্রথম ভোট। এখনও কলকাতায় শাসক দলের ভিত কতটা মজবুত আছে, এই উপনির্হাচনে তারও একটা পরীক্ষা হয়ে যাবে বলে মনে করছেন অনেকেই। বাম আমলেও ১১৭ নম্বর ওয়ার্ড দখলে রেখেছিলেন শৈলেনবাবু। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে মারা যান তিনি। কাকে প্রার্থী করা হবে, তা নিয়ে জটিলতা থাকায় গত দু’বছরেও সেখানে ভোট করা যায়নি। শাসক দল অমিতের নাম ঘোষণা করার পর থেকেই রাগে ফুঁসছেন শৈলেনবাবুর স্ত্রী। সেই রাগ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে কি না, অনেকের নজর সে-দিকেও।
ভোটার প্রায় ১৮ হাজার। ২০১০ সালে পুরভোটে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৩২৫টি ভোট। সে-বার ৩৬০০ ভোটের ব্যবধানে সিপিএম-কে হারিয়ে নির্বাচিত হন শৈলেনবাবু। ২০১৫ সালে পুরভোটে বিজেপি ৩৭৮২ ভোট পেয়ে উঠে আসে দ্বিতীয় স্থানে। সে-বার শৈলেনবাবু জেতেন প্রায় ২১০০ ভোটের ব্যবধানে। এ বার বিজেপির প্রার্থী সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘গণতান্ত্রিক রীতি মেনে ভোট হলে শাসক দলকে বেগ দেবো। আর ভোটে কারচুপি হলে আমরাও মাটি ছাড়ব না। জবাব দেবো।’’ সিপিএমের প্রার্থী অমিতাভ কর্মকার, কংগ্রেসের প্রভিষেক সিংহেরা লড়ছেন বটে,
তবে ততটা ঝাঁঝ নেই বলে মনে করছেন ভোটারেরা। আর তৃণমূলের অমিত সিংহের কথায়, ‘‘ওঁদের কেউই যে লড়াইয়ে নেই, তা ফের প্রমাণ হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy