Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Khagragarh blast

জহিরুল ভাল ছিল, বলছেন বাবা-মা

সেই ছেলে, জহিরুল শেখের বাড়ি বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা থানারপাড়া থানা থেকে খানিকটা দূরে।

জহিরুলের মা ফতেমা বিবি ও বাবা জুয়ার আলি শেখ। নিজস্ব চিত্র।

জহিরুলের মা ফতেমা বিবি ও বাবা জুয়ার আলি শেখ। নিজস্ব চিত্র।

সাগর হালদার
করিমপুর শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৯ ০২:৫১
Share: Save:

গত পাঁচ বছর ধরে ছেলেটা বাড়ি আসেনি। শেষে খবর এসেছে, ২০১৪ সালের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় মধ্যপ্রদেশের ইনদওর থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ।

সেই ছেলে, জহিরুল শেখের বাড়ি বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা থানারপাড়া থানা থেকে খানিকটা দূরে। শান্ত নিরিবিলি মহল্লা। বিস্ফোরণের পরেই বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিআইডি। পাওয়া গিয়েছিল জিলেটিন স্টিক, পাসপোর্ট, সচিত্র পরিচয়পত্র এবং কিছু দিন আগে কেনা মোটরবাইকের কাগজপত্র। কিন্তু তার আগেই পাখি হাওয়া। পাঁচ বছর আর জহিরুলের খোঁজ মেলেনি। নানা জায়গায় ঘুরে রাজমিস্ত্রির কাজ করে বেড়িয়েছে সে। শেষে তেলঙ্গানা পুলিশের বিশেষ দলের সাহায্যে গত রবিবার এনআইএ তাকে পাকড়াও করে। বুধবার তাকে কলকাতায় আনা হয়েছে।

বুধবার থানারপাড়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলে জহিরুলের বাবা জুয়াদ আলি শেখ ও মা ফতেমা বিবির। জহিরুলেরা তিন ভাই, তিন বোন। ভাইদের মধ্যে জহিরুল মেজো। জুয়াদ জানান, খাগড়াগড় কাণ্ডের পরেই স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে করিমপুরের বারবাকপুরে শ্বশুরবাড়িতে রেখে এসে জহিরুল নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আর ফেরেনি। তার কী হয়েছে, কোথায় গিয়েছে, এত দিন তাঁরা জানতেন না। জুয়াদ বলেন, ‘‘সেই থেকে সে কখনও যোগাযোগ করেনি, খোঁজও নেয়নি যে আমরা কেমন আছি।’’ মঙ্গলবার বিকেলে পড়শিদের কাছ থেকে তাঁরা শোনেন, সে ধরা পড়েছে।

এনআইএ সূত্রের খবর, জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (‌জেএমবি) নদিয়া মডিউলের অন্যতম নেতা জহিরুল বাংলাদেশি যুবকদের জঙ্গি প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্ত পেরিয়ে নিয়ে আসত। কিন্তু বাড়ির লোকজন তো বটেই, পাড়াপড়শিরাও এখনও বুঝে উঠতে পারেন না যে তার মত একটা ‘ভাল ছেলে’ এ সবে জড়াল কী করে।

জহিরুলের মা ফতেমা বিবি বলেন, ‘‘জহিরুল পালিয়ে যাওয়ার পরেও আমরা বুঝতে পারিনি, কেন সে এ রকম করল। ও বরাবরই ভাল ছেলে। পাড়ায় ওর নামডাক রয়েছে। যখন বেশ কিছু দিন বাদেও সে ফিরল না, আমরা অনেক খোঁজ নিয়েছি।’’

জুয়াদ বলেন, ‘‘প্রথমে তদন্তে এসে এনআইএ-র অফিসারেরা যথেষ্ট ভদ্র ব্যবহার করতেন। পরে হুমকি দেওয়া হতে থাকে, ‘জহিরুল কোথায় না বললে থানায় তুলে নিয়ে যাব, গুলি করব’। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগই রাখেনি সে, আমরা কী করে খবর দেব!’’ তাঁদের আফসোস, আগে যদি বুঝতে পারতেন যে ছেলে ওই পথে যাচ্ছে, তাকে আটকানোর চেষ্টা অন্তত করতেন।

তবে জহিরুলের এই কাজের জন্য পাড়াপড়শি তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেননি, স্বাভাবিক সম্পর্কই বজায় আছে। প্রতিবেশী ফিদু বিবি বলেন, ‘‘জহিরুল ছেলেটা কিন্তু ভালই ছিল। ও যে কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। এর জন্য জহিরুলের বাবা-মা দায়ী নন। ওঁরা সত্যিই ভালমানুষ।’’ আর এক প্রতিবেশী কুদ্দুস সর্দার বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে ওঁদের সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। পাড়ার লোক, সব সময়ে কথা হয়। কিন্তু জহিরুল এমন কাজ করতে পারে, এটা সত্যি কল্পনা করা যায় না। আমরা ওকে ছোট থেকে দেখছি, ও কিন্তু ভাল ছেলেই ছিল।’’

জুয়াদ-ফতিমা জানান, ছেলেকে যখন কলকাতায় আনা হয়েছে, সুযোগ পেলে তাকে এক বার তাঁরা দেখতে যেতে চান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Khagragarh blast Jahirul Family Karimpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE