তিলজলার চর মামলায় ১১ ফেব্রুয়ারি চার্জশিট দেওয়া হয়েছে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। তার ১২ দিনের মাথায়, মঙ্গলবার বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হল গার্ডেনরিচের চর মামলায়।
ওই বাবা-ছেলের সূত্রেই গার্ডেনরিচের এই মামলায় জড়িয়ে গিয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নাম। কারণ, অভিযুক্তদের এক জন তৃণমূলের শ্রমিক নেতা। আর অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত তাঁর ছেলে তৃণমূলেরই ছাত্রনেতা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লালবাজারের স্পেশ্যাল
টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) ব্যাঙ্কশাল কোর্টে চার্জশিট জমা দিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে চার্জশিটে। তদন্তকারীরা তাঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনেও অভিযোগ আনতে চান। এই ব্যাপারে সরকারের অনুমোদন পাওয়ার পরে সাপ্লিমেন্টারি বা অতিরিক্ত চার্জশিটে ইউএপিএ দেওয়া হবে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। আদালতে তা জানানো হয়েছে।
তদন্তে গোয়েন্দারা জেনেছেন, কলকাতার যে-এলাকায় ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ তৈরি হয়, তার মানচিত্র ও নকশা পাঠানো হয়েছিল পাকিস্তানে। আবার অনেক সময় যেখানে যুদ্ধজাহাজ রাখা হয়, তার মানচিত্রও পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছিল। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের এজেন্টরা হাতিয়ে নিয়েছিল গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স এবং নেতাজি সুভাষ ডকের নকশাও। ওই ঘটনায় আইএসআই চর সন্দেহে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা গত ২৯ নভেম্বর গ্রেফতার করেন তৃণমূলের শ্রমিক নেতা ইরশাদ আনসারি ও তাঁর ছেলে তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র নেতা আসফাক আনসারিকে। গ্রেফতার করা হয় ইরশাদের শ্যালক মহম্মদ জাহাঙ্গিরকেও। চার্জশিটে বাবা-ছেলে ছাড়াও রয়েছে জাহাঙ্গির, শেখ বাদল এবং পাকিস্তানের নাগরিক মহম্মদ ইজাজের নাম।
ইজাজ প্রায় দেড় বছর কলকাতার গার্ডেনরিচে ছিলেন। ইজাজকে মেরঠ থেকে গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। ইজাজকে জেরা করেই তারা ইরশাদ ও আসফাকের নাম পায় এবং সে-কথা কলকাতার এসটিএফ-কে জানায়। বাংলাদেশ হয়ে চোরাপথে কলকাতায় ঢোকার পরে গার্ডেনরিচে ইজাজের থাকার ব্যবস্থা ইরশাদেরাই করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
আদালত সূত্রের খবর, ইজাজকে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আবেদন করেছে। সরকারি আইনজীবী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তদন্তের স্বার্থে ইজাজকে জেরা
করতে চায় পুলিশ। তাই
ওই অভিযুক্তকে কলকাতায় আনার জন্য আবেদন করা হয়েছে।’’
চার্জশিটে কলকাতা পুলিশ দাবি করেছে, পাকিস্তানের নাগরিক ইরফানের নির্দেশেই সেনার গোপন নথি পাকিস্তানে পাঠাত ইরশাদেরা। ইরফান আবার ইরশাদেরই ভাই। ইরশাদ বন্দরের ঠিকা শ্রমিক ছিলেন। সেই সূত্রেই ওখানকার শাসক দল প্রভাবিত শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা হয়ে ওঠেন। আবার ইরশাদের ছেলে আসফাক ছিলেন হরিমোহন ঘোষ কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা। গোয়েন্দাদের দাবি, পাকিস্তান থেকে আসা নির্দেশ অনুযায়ী ছেলে ও শ্যালককে গোপন তথ্য সংগ্রহের কাজে লাগাতেন ইরশাদ।