Advertisement
E-Paper

স্থিতাবস্থা বিরোধিতা মোকাবিলায় ‘উন্নয়নের পাঁচালি’! ২০২৯ সালের লোকসভার ভিত গড়ুন ২০২৬-এর নির্বাচনে, বৈঠকে অভিষেক-বার্তা

তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি এবং সাংগঠনিক নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করলেন অভিষেক। সেখানে জানিয়েছেন, ‘উন্নয়নের পাঁচালি’র প্রচারের উপকরণ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সর্বত্র পৌঁছে যাবে। পরের দিন অর্থাৎ নতুন বছরের (আসলে ভোটের বছরের) প্রথম দিন থেকেই তার প্রচার শুরু করে দিতে হবে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:৫৯
Abhishek Banerjee directs organizational function to promote 15 years of WB Government works

শুক্রবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ হাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

দেড় দশকের স্থিতাবস্থা বিরোধিতার মোকাবিলায় দেড় দশকের কাজের খতিয়ান প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন থেকে প্রকাশিত সেই ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ বুথস্তরে এবং সমাজের প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে দিতে সংগঠনকে মাঠে নামাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুক্রবার তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি এবং সাংগঠনিক নেতৃত্বকে নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করলেন অভিষেক। কয়েক হাজার নেতানেত্রী সেখানে ছিলেন। বৈঠকে প্রারম্ভিক ভাষণ দেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তার পর বলতে গিয়ে সময় বেঁধে কাজের নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। ১ জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস। অভিষেক জানিয়েছেন, ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ প্রচারের উপকরণ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সর্বত্র পৌঁছে যাবে। পরের দিন অর্থাৎ নতুন বছরের (আসলে ভোটের বছরের) প্রথম দিন থেকেই সেই প্রচার শুরু করে দিতে হবে। পাশাপাশি দলকে অভিষেকের বার্তা, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ভিত গঠনও করে ফেলতে হবে।

প্রভাবশালীদের কাছে পাঁচালি

দু’ভাগে ভাগ করে ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ তুলে ধরবে তৃণমূল। বৈঠকে অভিষেক জানিয়েছেন, দলের তরফে ১৮০০ প্রভাবশালীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে ২০০ জন রাজ্যস্তরের প্রভাবশালী। বাকি ১৬০০ জন জেলাস্তরের। এই ১৮০০ জনের কাছেই পৌঁছে যাবে ‘উন্নয়নের পাঁচালি’র কিট। সেই বাক্স কেমন হবে তা-ও এ দিন ভার্চুয়াল বৈঠকে দেখান অভিষেক। তাতে থাকবে মুখ্যমন্ত্রী মমতার লিখিত বার্তা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১৫ বছর ধরে সরকার কী কী কাজ করেছে তার খতিয়ান এবং রাজ্য সরকারের ৯০টির বেশি প্রকল্পের গ্রাফিক। রাজ্যস্তরের প্রভাবশালীদের কাছে যাবে মন্ত্রী এবং সাংসদদের দল। জেলাস্তরে পৌঁছে পাঁচালির কিট নিয়ে প্রভাবশালীদের কাছে যাবেন স্থানীয় স্তরের নেতৃত্ব এবং বিধায়কেরা।

কার কাছে কারা যাবেন, তা শনিবারই নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে দলের তরফে। অভিষেক এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, গোটা প্রক্রিয়ায় পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাকের সদস্যেরা ময়দানে থাকবেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে হবে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এ-ও বলে দিয়েছেন, এই কাজ শেষ করার চেষ্টা করতে হবে ১৫ দিনের মধ্যে। খুব বেশি হলে জানুয়ারি মাসটা সময় দেওয়া যেতে পারে।

বুথে পাঁচালি

প্রথম পর্বে প্রভাবশালীদের কাছে পাঁচালি পৌঁছে দেওয়ার পরে দ্বিতীয় পর্বে বুথস্তরে সরকারের কাজের খতিয়ান প্রচার করা হবে। ভিডিয়ো প্রদর্শনের মাধ্যমে এলাকায় প্রচার হবে উন্নয়নের পাঁচালি। গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আসন ধরে ধরে কয়েকটি বুথ মিলিয়ে এই প্রচার করতে হবে। শহর এলাকাতেও এক পদ্ধতিতে প্রচার করতে হবে সংগঠনকে। এই কাজ শেষ করার জন্য ৪৫ দিন সময় বরাদ্দ করেছেন অভিষেক। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে পাঁচালির প্রচার সম্পন্ন করতে হবে।

তৃণমূল সূত্রে খবর, বৈঠকে অভিষেক দলের ভাষ্য কী হবে, তা-ও নির্ধারিত করে দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশ, কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা উল্লেখ করে মমতার সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরতে হবে। অর্থাৎ, কোন সঙ্কটের মধ্যে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকার কাজ করে চলেছে, সেটাকেই প্রচারের বর্শাফলক করতে চাইছেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’। এই পর্বে সাধারণ মানুষের বক্তব্য, অভাব, অভিযোগ, পরামর্শও শুনতে হবে দলকে।

দম্ভ নয়, বিনয়ী হোন

দলের নেতাকর্মীদের দম্ভ ঝেড়ে ফেলে এবং বিনয়ী হয়েই প্রচারপর্বে প্রভাবশালী থেকে সাধারণ মানুষের কাছে যেতে বলেছেন অভিষেক। সূত্রের খবর, শুক্রবারের বৈঠকে অভিষেক বলেছেন, বিনয়ী, নম্র হয়ে সরকারের কাজ নিয়ে মানুষের কাছে যেতে হবে। প্রত্যেকে যেন নিজেকে ‘দিদির দূত’ ভাবেন এবং সেই মতো কাজ করেন, এমন বার্তাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

জোড়া স্লোগান

বিধানসভা ভোটের লক্ষ্যে শুক্রবারের বৈঠকে জোড়া স্লোগানের উল্লেখ করেছেন অভিষেক। প্রথম স্লোগানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেওয়া স্লোগানের পাল্টা ভাষ্য দিয়ে অভিষেক ব্যাখ্যা করেন, প্রধানমন্ত্রী বলে গিয়েছেন, ‘বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই’। অভিষেকের বক্তব্য, এই চার শব্দের মধ্যে অনেক ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। ‘বাঁচাতে’ চাই –এর আসল অর্থ ‘মারতে চাই’। তাই তৃণমূলের স্লোগান হবে, ‘বাঁচতে চাই, বিজেপি বাই’। নেতাদের উদ্দেশে অভিষেক স্পষ্ট ভাবে বলেন, ২০২৯ সালের লোকসভা ভোটের ভিত গড়ার প্রস্তুতি হিসাবে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে দেখতে হবে এবং সেই মতো কাজ করতে হবে। তৃণমূলে মমতা সম্পর্কে অনেক প্রবীণ নেতা বলেন, ‘‘দিদি একটা ভোট শেষ হয়ে গেলে পরের ভোটের ভাবনা শুরু করে দেন।’’ অভিষেক আরও এক ধাপ এগিয়ে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি হিসাবে বিধানসভা ভোটকে দেখার বার্তা দিলেন। পাশাপাশি আরও একটি স্লোগানের উল্লেখ করেছেন বৈঠকের একেবারে শেষ পর্বে। তিনি বলেন, ‘মানবে না হার, মা-মাটি-মানুষের সরকার আবার’। যে স্লোগান নিয়ে বৈঠক শেষ হওয়ার পরেই সমাজমাধ্যমে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা।

সাংগঠনিক ‘সিসিটিভি’

এই সমগ্র কর্মকাণ্ডে যে সাংগঠনিক নজরদারি থাকবে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক। বিধানসভা ভিত্তিক নজরদারির জন্য দল গড়ে দেওয়া হবে। সেই দলই কাজের গতি, শ্লথতা ইত্যাদি বিষয়ে দৈনিক রিপোর্ট দেবে ক্যামাক স্ট্রিটকে (অভিষেকের দফতর)। কোন বিধানসভায় কারা নজরদারি করবেন, সেই তালিকাও শনিবারের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাবে। রবিবার এসআইআরের দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে দলের এক লক্ষের বেশি নেতা-কর্মীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন অভিষেক। এসআইআরের প্রথম পর্বে দলের যে বিএলএ-রা ‘প্রাণপাত পরিশ্রম করে’ কাজ করেছেন, তাঁদের কাছে অভিষেকের লিখিত বার্তাও পৌঁছে যাবে।

West Bengal Assembly Election 2026 Abhishek Banerjee West Bengal Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy