Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Deucha Pachami

এলাকা ফাঁকা করাই বড় পরীক্ষা প্রশাসনের

সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের অভিজ্ঞতা জানিয়ে দেয়, সে সবই সম্ভব জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বাধা দূর করতে পারলে। প্রশ্ন, বাধা কতটা দূর করতে পেরেছে প্রশাসন? সামনেই বা কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে তাদের?

ব্লক অফিসে চলছে খনির জন্য জমি রেজিস্ট্রির কাজ। নিজস্ব চিত্র

ব্লক অফিসে চলছে খনির জন্য জমি রেজিস্ট্রির কাজ। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৪৬
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ডেউচা-পাঁচামির এই প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এক লক্ষ লোকের কর্ম সংস্থান সম্ভব। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের অভিজ্ঞতা জানিয়ে দেয়, সে সবই সম্ভব জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বাধা দূর করতে পারলে। প্রশ্ন হচ্ছে, তেমন বাধা কতটা দূর করতে পেরেছে প্রশাসন? সামনেই বা কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে তাদের?

সামনে বাধা

প্রথম পর্যায়ে খনি গড়ার কাজশুরু করার কথা দেওয়ানগঞ্জ-হরিণশিঙা কোল ব্লক এলাকা থেকে। সেখানে যে-সব পরিবার ইতিমধ্যেই সরকারি শর্তে রাজি হয়ে জমি দিয়েছেন এবং সরকারি চাকরি নিয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া এখন সব থেকে বড় কাজ। এলাকা থেকে লোকজনকে সরাতে না পারলে খননের কাজ শুরু করা যাবে না। পুনর্বাসন দেওয়া বা কলোনি তৈরি করার জন্য একাধিক জমি দেখা হলেও, সেটা চূড়ান্ত হয়নি। প্রশাসন সূত্রেই বলা হচ্ছে, এই কাজ সময়সাপেক্ষ।

পরের ধাপ

চূড়ান্ত সমীক্ষার পাশাপাশি কী ভাবে কয়লা তোলা উচিত, তার পরিকল্পনা ও নকশা তৈরির কাজ করে কোল ইন্ডিয়ার শাখা সংস্থা সিএমপিডিআইএল।

সমীক্ষা অনুযায়ী, নকশা তৈরি করে সংসদের খনি সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিতে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। সেই কমিটি সমীক্ষা-ভিত্তিক রিপোর্ট এবং নকশা দেখে অনুমোদন দিলে কয়লা তোলার সংস্থা বাছাই হবে দরপত্র মারফত।

এখানেই শেষ নয়, ডেউচা-পাঁচামিতে কয়লা উপরে রয়েছে পাথরের স্তর। সেটা কী ভাবে তোলা হবে (খোলামুখ না অন্য কোনও পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে), তা-ও গুরুত্বপূর্ণ।

কাজ কবে শুরু

প্রশাসনের দাবি, সব ঠিকঠাক এগোলে কাজে হাত দিতে এখনও বেশ কয়েক মাস সময় লাগার কথা।

লগ্নি ও কর্মসংস্থান

সরকারি দাবি, বরাদ্দ হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। ধাপে ধাপে খনি গড়া হবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ১ লক্ষ জনের। ডেউচার কয়লা যাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে। কাদের মাধ্যমে, সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে, প্রকল্প রূপায়িত হওয়ার পরে আগামী ৫০-৭০ বছর রাজ্যে তো বটেই, ভিন্ রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পেও কয়লার জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। তাতে বিপুল আয়ের সম্ভাবনা থাকছেই।

ডেউচার খনি-বিরোধী একাধিক সংগঠনের তরফে অবশ্য এই প্রকল্প নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, বৃহৎ খোলামুখ কয়লাখনি হলে প্রকল্প এলাকা ও সংলগ্ন অঞ্চলের পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যে ‘কুপ্রভাব’ পড়ার সমূহ আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জলস্তর এবং কৃষিক্ষেত্রেরও ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে কি না, তারও কোনও সদুত্তর মেলেনি। তা ছাড়া, প্রশাসন যা-ই দাবি করুক না-কেন, এখনও এই তল্লাটের স্থায়ী বসবাসকারী আদিবাসীদের একটি অংশ নিজেদের বর্তমান জীবন-জীবিকা ও ধর্মাচরণের স্থান ছেড়ে সরকার প্রতিশ্রুত পুনর্বাসন প্যাকেজে পুরোপুরি রাজি হতে পারেননি বলেই দাবি ওই সংগঠনগুলির। এই মুহূর্তে খনি-বিরোধী আন্দোলন ঝিমিয়ে রয়েছে ঠিকই, কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগে তা ফের মাথাচাড়া দেবে না, এমন নিশ্চয়তাই বা কোথায়?

সব পক্ষের আস্থা ও ভরসা আদায় করে কয়লা প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন তাই সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Deucha Pachami Coal Mine Coal Block
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE