Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Contai

অমিত শাহের সভা মিটতেই রণক্ষেত্র কাঁথি, হামলা বিজেপির বাসে, আক্রান্ত তৃণমূল অফিসও

কাঁথির রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ দিন জনসভা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।

রণক্ষেত্র কাঁথি।—নিজস্ব চিত্র।

রণক্ষেত্র কাঁথি।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ২০:৪১
Share: Save:

রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিঅমিত শাহের সভা মিটতেই রণক্ষেত্রের চেহারা নিল কাঁথির বিভিন্ন এলাকা। সভাস্থল থেকে ফেরার পথে আক্রান্ত হল বিজেপির অনেকগুলি বাস ও গাড়ি। দুরমুঠে আক্রান্ত হল তৃণমূলের পার্টি অফিসও। বাংলায় কোনও গণতন্ত্র নেই— দিল্লি থেকে তোপ বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্রের। ‘‘আমাদের দিকে বিজেপি ইট-বোমা ছুড়লে আমরা নিশ্চয়ই ওদের রসগোল্লা খাওয়াব না,’’ মন্তব্য তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর।

কাঁথির রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ দিন জনসভা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগণনা শেষ হওয়া মাত্রই বাংলায় তৃণমূল শেষ হয়ে যাবে বলে অমিত শাহ মন্তব্য করেন। অমিত শাহের ভাষণের সেই উত্তাপ সভা শেষ হতেই মিলিয়ে গেল না। বরং অমিত শাহ কাঁথি ছাড়তেই আরও উত্তপ্ত হল এলাকা।

বিজেপির অভিযোগ, সভাস্থল থেকে ফেরার পথে বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল হামলা চালিয়েছে তাদের কর্মী-সমর্থকদের গাড়িতে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেন যে, সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিজেপি কর্মীরা যে সব বাস বা গাড়িতে করে ফিরছিলেন, পথ আটকে সেগুলিতে তৃণমূল হামলা চালিয়েছে, ভাঙচুর করেছে, কর্মীদের মারধর করেছে বলেও দিলীপের দাবি। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু জানান, হেড়িয়ার কাছে বিজেপির বাসের ভিতরে ঢুকে মহিলাদের উপরে অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।

ভাঙচুর চালানো হয়েছে বাসে।—নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: গোটা মন্ত্রিসভা নিয়ে প্রয়াগে ডুব দিলেন যোগী আদিত্যনাথ

অশান্তি অবশ্য একতরফা নয়। কাঁথির দুরমুঠ এলাকায় তৃণমূলের একটি পার্টি অফিসেও এ দিন হামলা হয়েছে। অফিসের সামনে রাখা বেশ কয়েকটি বাইকে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি-ই ওই হামলা চালিয়েছে বলে তৃণমূলের দাবি। বিভিন্ন রাস্তায় বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি বাসে, এমনকি পুলিশের গাড়িতেও বিজেপি কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন বলে তৃণমূলের অভিযোগ।

স্থানীয় বিজেপি নেতারা বলছেন, তাঁরা আগ বাড়িয়ে কোনও অশান্তি করেননি। বিভিন্ন এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে কোথাও কোথাও পাল্টা হামলা হয়েছে। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য এই পাল্টা হামলার কথাও স্বীকার করেননি।

একই ভাবে তৃণমূলও অশান্তির সব দায় চাপিয়েছে বিজেপির উপরে। পূর্ব মেদিনীপুরের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, তৃণমূল কর্মীদের উপরে ইট-বাঁশ-লাঠি নিয়ে হামলা চালিয়েছে বিজেপি। তাঁর মন্তব্য: ‘‘আমাদের দিকে যদি ওরা ইট-বোমা ছোড়ে, তা হলে আমরা তো নিশ্চয়ই ওদের রসগোল্লা খাওয়াব না।’’ শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, ‘‘এর ফল বিজেপি-কে ভুগতে হবে।’’

কাঁথির পরিস্থিতি নিয়ে বাগ্‌যুদ্ধ কিন্তু বাংলার সীমার মধ্যে আটকে নেই। বিষয়টি নিয়ে দিল্লি থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র। তিনি বলেন,‘‘বাংলায় কোনও গণতন্ত্র নেই। সেই কারণেই এই ভাবে বিজেপি কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন।’’ তাঁর হুঁশিয়ারি: ‘‘বিজেপি চুপ করে বসে থাকবে না।’’ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘অমিত শাহের সভা দেখে তৃণমূল ভয় পেয়েছে। ভয় পেয়েই তারা হামলা চালাচ্ছে।’’

একে অপরের ঘাড়ে হামলার দায় চাপাচ্ছে বিজেপি-তৃণমূল।—নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: অসুস্থ বাবাকে নিয়ে রাতভর দৌড় সাব-ইনস্পেক্টরের, সরকারি বিমা শুনেই মুখ ফেরাল ৪ হাসপাতাল​

কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী অবশ্য পত্রপাঠ নস্যাৎ করেছেন ‘ভয় পাওয়া’র তত্ত্ব। তাঁর কটাক্ষ: ‘‘ওটা কোনও সভা হয়েছে নাকি যে আমরা ভয় পাব? ওটাকে সভা বলে?’’ শিশিরের পাল্টা দাবি, ‘‘আসলে ব্রিগেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা দেখে বিজেপির নার্ভ ফেল করেছে। সেই কারণেই ওরা গোলমাল পাকাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE