Advertisement
E-Paper

মাথা কামিয়েও জালে শ্যামল

পুলিশের হাত এড়াতে চুল ও সাধের গোঁফ-দাড়ি কামিয়ে তারাপীঠে পুজো দিয়েছিল সে। সঙ্গে এক চেলা। তবু শেষরক্ষা করতে পারল না শ্যামল কর্মকার। মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ বীরভূমের রামপুরহাট স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও বিতান ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০৪:২৫
সৌরভ-খুনে মূল অভিযুক্ত শ্যামল কর্মকার। বারাসত আদালতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

সৌরভ-খুনে মূল অভিযুক্ত শ্যামল কর্মকার। বারাসত আদালতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

পুলিশের হাত এড়াতে চুল ও সাধের গোঁফ-দাড়ি কামিয়ে তারাপীঠে পুজো দিয়েছিল সে। সঙ্গে এক চেলা। তবু শেষরক্ষা করতে পারল না শ্যামল কর্মকার। মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ বীরভূমের রামপুরহাট স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে। বামনগাছির কলেজছাত্র সৌরভ চৌধুরীর হত্যাকাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত ধরা পড়ল ঘটনার চার দিন পর।

শ্যামলের সঙ্গে উজ্জ্বল দাস ওরফে তোতা নামে তার এক সঙ্গীও ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী। পুলিশের দাবি, জেরায় শ্যামল জানিয়েছে, খুনের দু’দিন পরে সে তোতাকে নিয়ে তারাপীঠে যায়। নাম ভাঁড়িয়ে একটি হোটেলে ওঠে। বুধবার বারাসত আদালতে শ্যামলদের তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। শ্যামলকে নিয়ে এই খুনের ঘটনায় মোট এগারো জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

শ্যামলের পিছনে স্থানীয় তৃণমূল নেতা তুষার মজুমদার ওরফে বিশুর মদত ছিল বলে আগেই অভিযোগ করেছেন বামনগাছির বাসিন্দারা। পুলিশ সূত্রে খবর, শ্যামলের যে চার শাগরেদকে নিউ ব্যারাকপুরের মুড়াগাছা থেকে গ্রেফতার করা হয়, তারা সকলেই ওই এলাকার এক তৃণমূল নেতার আশ্রয়ে ছিল। তাদের মধ্যে তিন জন সুমন সরকার, রতন সমাদ্দার ও তাপস বিশ্বাস ছিল ওই নেতার বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি ব্যাগ তৈরির কারখানার ঘরে। চতুর্থ জন, উত্তম শিকারিকে পুলিশ ধরে ওই নেতার মোবাইলের দোকান থেকে। এমনকী, ধৃতদের মধ্যে দত্তপুকুরের এক তৃণমূল নেতার ভাইও রয়েছে। তারক দাস নামে ওই ধৃতের দাদা বামনগাছি সংলগ্ন কাশিমপুর পঞ্চায়েতের সদস্য।

সৌরভের পরিবারকে সান্ত্বনা সূর্যকান্ত মিশ্রের। বামনগাছিতে শান্তনু হালদারের তোলা ছবি।

পুলিশ জেনেছে, গত ৪ জুলাই রাতে সৌরভকে খুন করার পরে একটি গাড়ি ভাড়া করে শ্যামল বামনগাছি ছেড়ে পালিয়ে যায়। জেরায় উত্তমরা পুলিশকে বলেছে, পরের দিন সকালে শ্যামলই তাদের মুড়াগাছায় নামিয়ে দিয়েছিল। বামনগাছির পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা কে কোথায় লুকিয়ে থাকবে, ৫ তারিখ রাতে ব্যাগ কারখানার ঘরে বসেই সেই ছক কষেছিল তারা। মুড়াগাছার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, এলাকায় পুকুর ভরাট থেকে ইট-বালি সরবরাহ, সবই চলে ওই তৃণমূল নেতার নির্দেশে। সেই সুবাদে ওই বাড়িতে ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু ৫ তারিখ সকাল থেকে ওই বাড়িতে বহিরাগতদের গতিবিধি দেখে তাঁদের খানিকটা সন্দেহ হয়েছিল। নাম না প্রকাশের শর্তে এক বাসিন্দা বলেন, “বেগুনি গেঞ্জি পরা একটি অচেনা ছেলে ওই নেতার মোবাইলের দোকানের সামনে বসে ছিল। চার পাশে নজর রাখছিল আর ঘন ঘন ফোন করছিল। পরে শুনলাম, নেতাটির ব্যাগের কারখানা ও দোকান থেকে চার জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে।’’

পুলিশ জেনেছে, ওই তৃণমূল নেতার একটি কাপড়ের ব্যাগ বানানোর কারখানা ছিল মুড়াগাছায়। সম্প্রতি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘর খালি করে দিতে বলেছিলেন বাড়ির মালিক। সেই মতো ৪ জুলাই ঘর খালি করে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের দাবি, বাড়ির মালিক বলেছেন, ঘর খালি হয়ে যাওয়ার পরের দিনই তিন যুবক এসে সেখানে রাত কাটাতে চায়। বলে, ওই তৃণমূল নেতা তাদের স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ জুটিয়ে দিয়েছেন। অন্য এলাকায় তারা ঘর ভাড়া করলেও জিনিসপত্র পুরোপুরি গোছানো হয়নি। তাই রাতটুকু কারখানা ঘরে থাকার অনুরোধ জানায় তারা। বাড়ির মালিক পুলিশকে বলেছেন, ওই নেতা তাঁর পরিচিত। তাই ওই ছেলেদের হাতে তিনি ঘরের চাবি দিয়ে দেন।

এই পরিস্থিতিতে বামনগাছির মানুষের দাবি অনেকটাই জোরদার হল বলে মনে করছেন অনেকে। এ দিনও তাঁরা শ্যামলের মদতদাতাদের গ্রেফতারের দাবিতে আদালত চত্বরে ভিড় জমিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বাসিন্দাদের দাবি, অভিযুক্তেরা ধরা পড়লেও এলাকার অসামাজিক পরিস্থিতির কোনও বদল হবে না। কারণ, শ্যামল, উত্তম বা সুমনদের যাঁরা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষে মদত দেন, তাঁদের কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করল না। ফলে কিছু দিন চুপ করে থাকার পরে ওই মুখগুলোই নিজেদের রাজনীতির স্বার্থে ফের সমাজবিরোধীদের অন্য একটি দলকে মদত দেবেন বলে বামনগাছির মানুষের আশঙ্কা। তাঁদের প্রতিবাদের মুখে এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরাতে বুধবার রাতে জেলা পুলিশের উদ্যোগে কুলবেড়িয়ার ব্যানার্জিপাড়ায় শান্তি বৈঠক বসে।

arunakkha bhattacherjee bitan bhattacherjee shyamal karmakar barasat court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy