E-Paper

ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে খাবারের দোকান, চিনার পার্ক তল্লাট যেন জতুগৃহ

কোনও কোনও জায়গায় পরিস্থিতি এমনই যে, বোঝার উপায় নেই, জায়গাটি বাণিজ্যিক না কি আবাসিক। এই ছবি বিধাননগর পুরসভার অধীন চিনার পার্ক এলাকার।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ ০৯:০৭
রাজারহাটের আটঘরায় রাস্তার ধারেই গ্যাস সিলিন্ডার রেখে দোকানে রান্নার ব্যবস্থা।

রাজারহাটের আটঘরায় রাস্তার ধারেই গ্যাস সিলিন্ডার রেখে দোকানে রান্নার ব্যবস্থা। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

রাস্তার দু’ধারে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে খাবারের দোকান, রেস্তরাঁ। কোথাও গ্যাস জ্বালিয়ে, কোথাও আবার বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় রান্না হয়। কোথাও আবার ছোট ছোট বহুতলের ভিতরে গজিয়ে ওঠা একাধিক অতিথিশালায় রয়েছে রান্নার ব্যবস্থা। এমনকি, আবাসিক বাড়ি লাগোয়া একতলাতেও চলছে খাবারের দোকান। কোনও কোনও জায়গায় পরিস্থিতি এমনই যে, বোঝার উপায় নেই, জায়গাটি বাণিজ্যিক না কি আবাসিক। এই ছবি বিধাননগর পুরসভার অধীন চিনার পার্ক এলাকার। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সারা দিন ওই সব হোটেল-রেস্তরাঁয় যতটা আগুন জ্বলে, ততটা জ্বলে না সাধারণ আবাসিকদের বাড়িতেও।

কলকাতা পুর এলাকার মেছুয়াপট্টির হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে সম্প্রতি ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের একাধিক ঘটনা ঘটেছে চিনার পার্ক তল্লাটেও। গত ১ মে সকালে চিনার পার্ক এলাকায় একটি খাবারের দোকানে আগুন লাগে। ওই দোকানের পিছনেই রয়েছে আবাসিক বাড়ি, সেটি লাগোয়া রয়েছে কাপড়ের দোকান। গত বছর পয়লা বৈশাখ সন্ধ্যার পরে চিনার পার্কে একটি ফুড কোর্টে আগুন লেগেছিল। তার জেরে ওই দোকানটির আশপাশের দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও ওই অঞ্চলে এর আগে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফলে ওই সব ফুড কোর্ট, রেস্তরাঁ বা খাবারের দোকানে কতটা অগ্নি-বিধি মানা হচ্ছে— সেই প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই।

বিধাননগর পুরসভার রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা তথা মেয়র পারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মেছুয়ার ঘটনার পরে অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে পুরসভার সরাসরি কিছু করার নেই। বিধি মানলে পুরসভা শুধু অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স দেয়। রাস্তা দখল করলে পুরসভা দেখতে পারে। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সব জায়গায় ঠিক রয়েছে কিনা, তা দমকল বিভাগই বলতে পারবে।’’

বিধাননগর পুর এলাকার রাজারহাট অঞ্চলে অনেক বছর ধরেই বড় বড় হোটেল, অনুষ্ঠান বাড়ি, রেস্তরাঁ, পানশালা, খাবারের দোকান গজিয়ে উঠেছে। ভিআইপি রোডের ধারে একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে আগুনে আটকে পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। স্থানীয়েরা জানান, ব্যাঙের ছাতার মতো খাবারের দোকান গজিয়েছে চিনার পার্কে। দু’টি দোকানের মাঝখানে উপযুক্ত ব্যবধানও নেই অনেক জায়গায়।

গত বছর চিনার পার্ক মোড়ের অদূরে যে ফুড কোর্টে আগুন লেগেছিল, সেখানে অগ্নিবিধি মানা হয়নি বলে অভিযোগও ওঠে। সেই সময়ে ওই দোকানটিতে দেখা গিয়েছিল, ভিতরে বিপজ্জনক ভাবে লোহার সিঁড়ি বসিয়ে, দোতলায় চার দিক ঘিরে সেটি চালানো হচ্ছিল। এ ভাবেই আরও অনেক জায়গায় অগ্নিবিধি লঙ্ঘন করে রেস্তরাঁ, খাবারের দোকান চলছে বলেই অভিযোগ।

চিনার পার্ক মোড়ে রাজারহাট রোডের উপরে আবার দেখা গেল, একটি বহুতলে রয়েছে বিভিন্ন সংস্থার অতিথিশালা। পুরনো আমলে তৈরি বহুতলটির নীচে জড়ো করা রয়েছে অসংখ্য গ্যাস সিলিন্ডার। তার দু’টি প্রবেশপথ থাকলেও সেগুলি অপ্রশস্ত। তার গায়ে লাগোয়া একটি আবাসিক বাড়ির একতলায় আবার রয়েছে মিষ্টি, ভুজিয়ার দোকান। সেখানেও জড়ো করা একাধিক গ্যাসের সিলিন্ডার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ওই বাড়িতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা তেমন কিছু নেই। দোকানটিতেও সেই ব্যবস্থা যৎসামান্য। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা যে রয়েছেই, তা স্বীকার করেছেন বাড়িটির বাসিন্দারা। যদিও উত্তর ২৪ পরগনার দমকল দফতরের এক আধিকারিক জানান, তাঁরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rajarhat Chinar Park Fire

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy