E-Paper

আতশবাজিতে ক্ষতি হতে পারে চোখেরও, রক্ষায় দরকার সতর্কতা

চোখের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বাজি মূলত রাসায়নিক, থার্মাল এবং মেকানিক্যাল— এই তিন রকম ভাবে আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলে। শুধু ফুসফুস বা শ্বাসনালি নয়,চোখের উপরেও প্রভাব ফেলে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৪২

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

গত বছর দীপাবলি কাটতে না কাটতেই কিশোর ছেলের চোখ নিয়ে ভুগতে হয়েছিল বাবাকে। হঠাৎ চোখ টকটকে লাল এবং অঝোরে জল ঝরছিল। জল পড়া বন্ধ না হওয়ায় শেষমেশ ছেলেকে নিয়ে চক্ষু চিকিৎসকের কাছে ছুটতে হয় মধ্য কলকাতার বাসিন্দাওই ব্যক্তিকে। সমস্যা খুঁজতে গিয়ে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে ওই কিশোরের চোখের ভিতরে বাজির ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি পেয়েছিলেন। তার কর্নিয়াও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

এটি ব্যতিক্রমী কোনও ঘটনা নয়। বরং দীপাবলি বা আলোর উৎসবের পরে হঠাৎ এমন চোখলাল হওয়া, জল ঝরা, চোখ কড়কড় করার মতো নানা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায় বলে দাবি করছেন চিকিৎসকেরা।কারণ হিসাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চিকিৎসকেরা বাজির ধোঁয়ায় থাকা রাসায়নিকের প্রভাবকেই দায়ী করছেন। পাশাপাশি, কোনও রকম সতর্কতা অবলম্বননা করে বাজি পোড়ানোর ফলে অনেক সময়ে চোখে নানাবিধ এমন সমস্যা হয় বলেও দাবি বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকদের।

কী ধরনের সমস্যা হয়? চোখের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বাজি মূলত রাসায়নিক, থার্মাল এবং মেকানিক্যাল— এই তিন রকম ভাবে আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলে। শুধু ফুসফুস বা শ্বাসনালি নয়,চোখের উপরেও প্রভাব ফেলে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, বাজির ধোঁয়ায় থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক, যেমন, সালফার, বেরিয়াম অক্সাইড, পটাশিয়াম নাইট্রেট, চারকোল বাতাসের সঙ্গেদ্রুত মিশে যায়। এর প্রভাবে হঠাৎ চোখে জ্বালা ভাব বা চুলকানি, লালচে ভাব, জল ঝরা, চোখ কড়কড় করার মতো একাধিক উপসর্গ দেখা দেয়। এ ছাড়াও, ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাবে এই সময়ে কনজাংটিভাইটিসের প্রকোপ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধিপায় বলে দাবি করছেন চিকিৎসকেরা।

চোখের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বলছেন, ‘‘যতই সবুজ বাজি-তারাবাজি বা অন্য যে কোনও পরিবেশবান্ধব বাজির কথা বলা হোক, সববাজি থেকে নির্গত ধোঁয়াই চোখের পক্ষে ক্ষতিকর। যা দীর্ঘমেয়াদি ভাবে চোখে নানা প্রভাব ফেলে। ফলে, বিষয়টি কোনও ভাবেই হেলাফেলা করার নয়। তাই এই সময়ে চোখ লাল হওয়া, কড়কড়ে ভাব অথবা যে কোনও ধরনের অস্বস্তি হলে ফেলে না রেখে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’’

শুধু রাসায়নিকের প্রভাব নয়, শব্দবাজি, তুবড়ি ফেটে ছিটকে আসা টুকরো থেকেও চোখকে রক্ষা করা জরুরি বলে সতর্ককরছেন চিকিৎসকেরা। তুবড়ির টুকরো অনেক সময়ে কর্নিয়ার উপরে আঘাত হানে। ফলে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চোখের দৃষ্টিশক্তি পর্যন্ত চলে যাওয়ার একাধিক উদাহরণ রয়েছে বলে দাবি করছেন চিকিৎসকেরা।চক্ষু চিকিৎসক সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘চোখ অত্যন্ত স্পর্শকাতর অঙ্গ। বাজিতে থাকা রাসায়নিক চোখের লিপিড লেয়ারে প্রভাব ফেলে। অনেক সময়ে এই রাসায়নিকের প্রভাবে লিপিড লেয়ার নষ্ট পর্যন্ত হয়ে যায়। যার ফলে দ্রুত চোখশুষ্ক হতে থাকে। তাই এই সময়ে চোখের যে কোনও ছোটখাটো অস্বস্তিকে অবহেলা করলেতার ফল পরবর্তী সময়ে মারাত্মক হতে পারে।’’

চোখ বাঁচাতে

চোখ লাল বা জ্বালা জ্বালা ভাব হলে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিন। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

চিকিৎসকের পরামর্শ মতো আই-ড্রপ দিন।

খালি চোখে বাজি পোড়ানো নয়। চশমা পরুন।

সিন্থেটিক পোশাক পরে বাজি পোড়াবেন না।

বাজি পোড়ানোর জায়গায় বালতি ভরে জল রাখুন।

লেন্স পরে বাজি পোড়াবেন না।

বাজির বারুদ হাত থেকে চোখে-মুখে চলে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থাকে। তাই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Diwali Tips

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy