Advertisement
E-Paper

বাজির প্রদর্শনী বন্ধ বেলুড় মঠে

শতাব্দীপ্রাচীন ‘পরম্পরা’য় এ বার পাকাপাকি ভাবে ইতি টানল রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:২৯
বেলুড় মঠে আতসবাজির প্রদর্শনী। ফাইল চিত্র

বেলুড় মঠে আতসবাজির প্রদর্শনী। ফাইল চিত্র

শতাব্দীপ্রাচীন ‘পরম্পরা’য় এ বার পাকাপাকি ভাবে ইতি টানল রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন।

শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মোৎসব উপলক্ষে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বেলুড় মঠে আতসবাজি পোড়ানোর যে প্রথা চলে আসছে, এ বছর থেকে তা পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। ২০১৯ সালে মঠ চত্বরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছিল, অনিবার্য কারণে ওই বছর সাধারণ উৎসবে বাজি পোড়ানো বন্ধ থাকছে। সেই সময়ে মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষও জানিয়েছিলেন, ‘আগামী বছর (২০২০) ফের বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

২০১৯ সালের আগেও দু’বার বিভিন্ন কারণে বেলুড় মঠে ওই আতসবাজির প্রদর্শনী বন্ধ ছিল। যদিও পরে তা আবার চালু হয়। কিন্তু এ বছর থেকে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ভবিষ্যতে আর কখনও শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মোৎসব উপলক্ষে বেলুড় মঠে আতসবাজি পোড়ানো হবে না। আগামী ১ মার্চ হবে সেই জন্মোৎসব অনুষ্ঠান।

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ বলেন, ‘‘প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আতসবাজির প্রদর্শনী হত। কিন্তু আদালতের নির্দেশ মেনে আমরাও পরিবেশ রক্ষা করতে গত বছরই তা বন্ধ করেছিলাম। এ বছর থেকে সেই প্রদর্শনী পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি, রামকৃষ্ণ মিশনকে দেখে সাধারণ মানুষও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে

অনুপ্রাণিত হবেন।’’ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ অন্যদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেই মনে করেন রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘আশা করি, অন্য যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান এই ধরনের আতসবাজির প্রদর্শনী করে, তারাও এই পদক্ষেপ অনুসরণ করবে।’’

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, শীতের সময়ে বেলুড় মঠ ও সংলগ্ন এলাকায় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রার (প্রতি ঘনমিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রাম) তিন থেকে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। তা যথেষ্টই উদ্বেগের বলে জানাচ্ছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞেরা। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরাও।

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন সূত্রের খবর, শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মোৎসব পালন শুরু হয়েছিল তাঁর ৪৫ বছর বয়সে। দিনটা ছিল ১৮৮১ সালের ১০ মার্চ, বুধবার, ফাল্গুনের শুক্লা দ্বিতীয়া। সুরেন্দ্রনাথ মিত্র, বলরাম বসু, রামচন্দ্র দত্ত-সহ কয়েক জন ভক্ত মিলে ওই দিন জন্মতিথি পালন করেন। পরের দু’বছর জন্মতিথি রবিবার পড়ায় সে দিনই তা পালন করা হয়। বদলটা হয় ১৮৮৪ থেকে। ওই বছর জন্মতিথির দিন শ্রীরামকৃষ্ণের হাত ভাঙা থাকায় বড় করে কোনও উৎসব হয়নি। বদলে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠার পরে ২৫ মে, রবিবার তাঁর জন্মোৎসব পালিত হয়। সেই থেকে আজও পালিত হয় দু’দিনের উৎসব। শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মতিথি পালনের পরে তিন দিন বাদ দিয়ে প্রথম যে রবিবারটি পড়ে, সে দিনই হয় সাধারণ উৎসব।

স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার সাফল্যের পর থেকেই এই উৎসবে সাধারণের ভিড় বাড়তে থাকে। ১৮৯৮ সালে ওই উৎসব দক্ষিণেশ্বর থেকে চলে আসে বালিতে, দাঁ-দের ঠাকুরবাড়িতে। এর পরের বছর থেকে বেলুড় মঠেই পালিত হচ্ছে শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মোৎসব। সেই দিনই শ্রীরামকৃষ্ণের মন্দিরে সন্ধ্যারতির পরে শ্রীসারদা মায়ের ঘাটে আতসবাজির প্রদর্শনী হত। শেষ কয়েক বছর ধরে গঙ্গায় ভাসমান জেটির উপরে বাজি পোড়ানো হত। স্বামী সুবীরানন্দ জানান, বাজি পোড়ানোর বদলে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের জন্য ভক্তিগীতি, শ্যামাসঙ্গীত, গীতি-আলেখ্য, রামায়ণ গান-সহ একগুচ্ছ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

Belur Math Fireworks
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy