Advertisement
০৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Kunal Ghosh Sudip Banerjee Conflict

‘আমি কিছু বললে আবার বিস্ফোরণ হবে’, তৃণমূলে কুণাল-সুদীপ ডামাডোল নিয়ে মন্তব্য ফিরহাদের

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে শুক্রবার দুপুর থেকে একের পর এক বিক্ষুব্ধ মন্তব্য করেছেন কুণাল ঘোষ। সুদীপকে ‘বিজেপির লোক’ বলেও কটাক্ষ করেছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত যা নিয়ে সুদীপ নীরব।

(বাঁ দিক থেকে) কুণাল ঘোষ, ফিরহাদ হাকিম এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

(বাঁ দিক থেকে) কুণাল ঘোষ, ফিরহাদ হাকিম এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪ ১৫:০৮
Share: Save:

কুণাল ঘোষ এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দ্বৈরথ’ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাইলেন না রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। জানালেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু বললে ‘বিস্ফোরণ’ হতে পারে। তাই তিনি কিছু বলতে চান না।

শনিবার দুপুরে কলকাতা পুরসভার টক টু মেয়র কর্মসূচিতে ছিলেন ফিরহাদ। ওই কর্মসূচির শেষে কুণাল-সুদীপ বিতর্ক নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে ফিরহাদ বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না। আমি বললে আবার বিস্ফোরণ হবে। কুণাল কী বলেছেন, আমি কিছুই শুনিনি। যদি কিছু শুনি, তখনই বলতে পারব।’’

বস্তুত, সুদীপের বিরুদ্ধে শুক্রবার দুপুর থেকে একের পর এক বিক্ষুব্ধ মন্তব্য করেছেন কুণাল। শনিবার সকালেও এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে তিনি উত্তর কলকাতার সাংসদের সঙ্গে কয়লা ‘দুর্নীতি’র যোগ থাকার সম্ভাবনা জানিয়েছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সুদীপকে গ্রেফতারির দাবিও জানিয়েছেন কুণাল। তৃণমূলের অন্দরে এই ডামাডোল ক্রমে ঝড়ের আকার নিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে যা দলকে কিছুটা অস্বস্তিতেও রেখেছে।

কুণালের কটাক্ষ এবং অভিযোগ প্রসঙ্গে এখনও প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি সুদীপ। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ফোন বা মেসেজে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও কুণালের আক্রমণ এবং ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে দলনেত্রীকে অবগত রাখছেন সুদীপ।

বিতর্কের সূত্রপাত বৃহস্পতিবার রাতে। ওই দিন কুণাল এক্সে একটি পোস্ট করেছিলেন। তাতে লিখেছিলেন, ‘‘নেতা অযোগ্য গ্রুপবাজ স্বার্থপর। সারা বছর ছ্যাঁচড়ামি করবে আর ভোটের মুখে দিদি, অভিষেক, তৃণমূল দলের প্রতি কর্মীদের আবেগের উপর ভর করে জিতে যাবে, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করবে, সেটা বার বার হতে পারে না।’’ কার বিরুদ্ধে কুণালের এই তোপ, তা প্রথমে বোঝা যায়নি। পরের দিন সকালেই দেখা যায় কুণাল তাঁর এক্সের বায়ো থেকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং মুখপাত্রের পরিচয় মুছে দিয়েছেন। এর পরেই জল্পনা জোরালো হয়। বিকেলে এ বিষয়ে মুখ খোলেন কুণাল। জানান, তিনি দলের পদ থেকে সরে গিয়েছেন। তবে দলের ‘সৈনিক’ হিসাবে থাকতে চান।

এর পরেই আরও একটি পোস্ট করেন কুণাল। শুক্রবার বিকেলের সেই পোস্টে তিনি নাম না করে সুদীপকে আক্রমণ করেন। মোদীর আরামবাগের সভার উল্লেখ করে কুণাল লেখেন, ‘‘মোদী বাংলার মাটিতে একরাশ কুৎসা করে গেলেন। যুক্তিতে তাঁকে ধুয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু ঘটনা হল, তাঁর কড়া সমালোচনার মূল দায়িত্ব যাঁদের, দু’টি আলাদা বিরোধী দলের লোকসভার দলনেতারা তো প্রধানমন্ত্রীরই লোক। এঁদের সঙ্গে বিজেপির যোগাযোগ। এই দু’জনকে দু’ভাবে ব্যবহার করেন মোদী। এক জনকে রোজ়ভ্যালি থেকে বাঁচিয়ে গলায় বকলস পরিয়ে রেখেছেন।’’

লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ। তাঁর সঙ্গে বিজেপির বোঝাপড়া বোঝাতে গিয়েই যে রোজ়ভ্যালি প্রসঙ্গ টানা হয়েছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এই রোজ়ভ্যালি মামলাতেই সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে বেশ কয়েক মাস ভুবনেশ্বর জেলে কাটাতে হয়েছিল সুদীপকে। কুণাল-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়ার কারণে সেই মামলা নিয়ে সুদীপকে আর ঝক্কি পোহাতে হয় না। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের যে অংশ সরব, তাঁদের বিরুদ্ধেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় আর রাখঢাক করেননি কুণাল। একটি সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে সরাসরি সুদীপকে আক্রমণ করেন। তাঁকে ‘বিজেপির লোক’ বলে অভিহিত করে কুণাল বলেছিলেন, ‘‘উত্তর কলকাতায় এ বার পদ্মফুল বনাম পদ্মফুলের লড়াই হবে। সুদীপবাবু দাঁড়াবেন জোড়াফুলের হয়ে। কিন্তু আসলে তিনি পদ্মফুলের লোক।’’ উত্তর কলকাতায় দলের সংগঠন নিয়েও ক্ষোভ চেপে রাখেননি কুণাল। বলেন, ‘‘উত্তর কলকাতায় যা হচ্ছে, তা দলের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। একে তো কোনও জেলা দফতর নেই। ক্যালকাটা বয়েজ় স্কুলে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ঘর দখল করে অফিস চালাচ্ছেন। ওঁকে নাকি কোন মিশনারিজ় অনুমতি দিয়েছে। কী করে একটি স্কুলে রাজনীতির আখড়া চলতে পারে?’’

শনিবার সকালে আরও একটি পোস্ট করে সুদীপের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন কুণাল। লিখেছেন, ‘‘সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং তাঁর হয়ে ভুবনেশ্বর অ্যাপোলো হাসপাতালের বিল মেটানোর নথি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তিনি যখন বন্দি ছিলেন, তাঁকে বড় অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়েছিল, না কি তাঁর হয়ে হাসপাতালের বিল কেউ মিটিয়ে দিয়েছিলেন, তদন্ত করে দেখতে হবে। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে কয়লা ‘দুর্নীতি’র সঙ্গে ওই টাকার যোগ থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে তদন্তের স্বার্থে সুদীপকে গ্রেফতার করা উচিত। যদি কেন্দ্রীয় সংস্থা এটি এড়িয়ে যায়, আমি আদালতের দ্বারস্থ হব।’’

উল্লেখ্য, শনিবার দুপুরে তৃণমূলের ব্রিগেডের প্রস্তুতি মিছিলে অংশ নিয়েছেন কুণাল। সেখান থেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি দলের কর্মী। কর্মী হিসাবে মিছিলে হাঁটছি। কর্মীরাই দলের আসল সম্পদ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kunal Ghosh Sudip Banerjee TMC FirhadHakim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy