যৎসামান্য: দিঘা মোহনায় অল্পই ইলিশ এল সোমবার। নিজস্ব চিত্র
গোড়াতেই ধাক্কা। মরসুমের প্রথম পর্যায়ে ইলিশের খোঁজে সাগরে যাওয়া ট্রলারগুলি ফিরল প্রায় খালি হাতে। সোমবার ভোরে দিঘা মোহনায় ফিরেছে ৩০০টি ট্রলার। সব মিলিয়ে তাতে মাছ এসেছে প্রায় ৪০০ টন, যার মধ্যে ইলিশ মাত্র এক টন।
অথচ গত বছর এই সময়ই দিঘা মোহনায় ইলিশ উঠেছিল ১২ টন। এ বার ইলিশের ওজনও তুলনায় কম, গড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম। এ দিন দিঘা মোহনায় পাইকারি বাজারে ওই ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি কিলোগ্রাম ৮০০-১০০০ টাকা দরে। এক কিলোগ্রাম বা তার বেশি ওজনের হাতেগোনা যে ক’টি ইলিশ উঠেছিল, তা কিলোগ্রাম প্রতি ১২০০-১৬০০ টাকা দরে বিকিয়েছে।
প্রজননের মরসুমে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা এ বার ৪৫ দিন থেকে বাড়িয়ে দু’মাস করা হয়েছিল। ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন সেই নিষেধাজ্ঞার পরে দিঘা, শঙ্করপুর, শৌলা, পেটুয়াঘাট-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন উপকূল থেকে সমুদ্রে রওনা দিয়েছিল ট্রলারগুলি। ফিরল উদ্বেগ নিয়ে।
দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সহ-সভাপতি তথা ন্যাশনাল ফিশ ওয়ার্কার্স ফোরামের সম্পাদক দেবাশিস শ্যামল বলেন, ‘‘এখন ইলিশের আকাল। এমন চললে কয়েক বছর পরে সমুদ্রে হয়তো অন্য মাছও পাওয়া যাবে না।’’ কাঁথির বাগুড়ানজলপাই গ্রামের বাসিন্দা ট্রলার মালিক সত্যনারায়ণ ভুঁইয়া বলছিলেন, “চালক-সহ জনা বারো কর্মীর বেতন, জ্বালানি খরচ— একবার সমুদ্রে ট্রলার পাঠাতেই অনেক খরচ। ইলিশের সঙ্কট হলে ট্রলার চালানো দায় হবে।’’
কেন এই আকাল? সমুদ্রবিদ্যার বিশেষজ্ঞ আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়ের মতে, সমুদ্রে দূষণ বাড়ছে। উল্টে কমছে বৃষ্টির পরিমাণ। পাল্লা দিয়ে ট্রলারের সংখ্যাও বাড়ছে। এই পরিবেশ ইলিশের জন্য মোটেই অনুকূল নয়। সমস্যা সমাধানে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ৬০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করা যেতে পারে বলে আনন্দদেববাবুর অভিমত। ইলিশ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুগত হাজরা। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর ছোট মাপের ইলিশ বেশি ধরা পড়েছিল। তার জেরেও এ বছর মাছের পরিমাণ কমতে পারে।’’ ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সহ-সভাপতি শ্যামসুন্দর দাসের আবার ব্যাখ্যা, এ বার তেমন পুবালি হাওয়া ও বৃষ্টির দেখা নেই। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবীরা মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা মানলেও ওড়িশার মৎস্যজীবীরা তা সে ভাবে মানেননি। সঙ্কটের সেটাও কারণ।
মৎস্য দফতর অবশ্য হাল ছাড়তে নারাজ। পূর্ব মেদিনীপুরের সহ-মৎস্য অধিকর্তা (মেরিন) রামকৃষ্ণ সর্দার বলেন, “এখনও বর্ষার বৃষ্টি হয়নি। ভাল ইলিশের আশা তাই থাকছেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy