Advertisement
E-Paper

পায়ে পায়ে পাঁচ বছর! মেদিনীপুরের তরুণ কবিদের নিয়ে আয়োজিত হল ‘মেদিনীপুর লিটারারি মিট ২০২৫’

তারকাদের সঙ্গে শিল্প-সাহিত্য প্রেমীদের এই যোগসূত্রই ছিল ‘মেদিনীপুরের তরুণ কবিরা’ সংগঠন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫ ১২:৩০
চিত্র: সংগৃহীত

চিত্র: সংগৃহীত

২০১৯ সাল থেকে শুরু, গুটিগুটি পায়ে পাঁচ বছরে পদার্পণ করল ‘মেদিনীপুর লিটেরারি মিট’। কবিতা, গল্প থেকে শুরু করে গান-সহ আরও বিভিন্ন বিষয়কে ঘিরে তরুণ কবিদের নিয়ে এই বিশেষ আয়োজন করা হয়েছিল। বিগত বছরগুলিতে একদিন করেই এই লিটারারি মিটের আয়োজন করা হলেও পাঁচ বছর পূর্তির আনন্দে এ বারের আয়োজন ছিল দু’দিন ব্যাপী, ১ ও ২ মার্চ, ২০২৫। তারকাদের সঙ্গে শিল্প-সাহিত্য প্রেমীদের এই যোগসূত্রই ছিল ‘মেদিনীপুরের তরুণ কবিরা’ সংগঠন।

‘মেদিনীপুর লিটারারি মিট’-এর এ বছরের থিম ছিল, ‘পিংলার পটচিত্র’। গত বছরের মতো এ বছরেও ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল ‘আনন্দবাজার ডট কম’। তরুণ কবিদের এই আয়োজনে সহযোগীর ভূমিকায় ছিল মেদিনীপুর কলেজ (স্বশাসিত) ও মেদিনীপুর পুরসভা। কলেজের বিবেকানন্দ সভাগৃহেই আয়োজিত হয়েছিল এই লিটারারি মিটের। উদ্বোধকের আসন অলংকৃত করেছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা ও নাট্যব্যক্তিত্ব গৌতম হালদার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তাঁর বক্তব্য রাখার পাশাপাশি তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গানভঙ্গ’ কবিতাটিও আবৃত্তি করেন।

‘মেদিনীপুর লিটারারি মিট’-এ এই বছরের বিশেষ আলোচনার বিষয় ছিল ‘পাঠকের মন’। আলোচনায় ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। আলোচনার শুরুতেই তিনি দর্শক ও শ্রোতাদের সামনে একটি ছবি তুলে ধরেন। সেই ছবি দেখিয়েই তিনি ব্যাখ্যা করেন কী ভাবে একটা বই হাতে তুলে নেওয়া থেকে পাঠ করা উচিত? কী কী বিষয় বিবেচ্য হতে পারে? অভিনব পদ্ধতিতে তাঁর আলোচনায় উঠে আসে বই নির্বাচন পদ্ধতি থেকে পাঠকসত্তার কথাও।

এ ছাড়াও সে দিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেছিলেন পৌরপ্রধান সৌমেন খান ও মেদিনীপুর মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সত্যরঞ্জন ঘোষ। প্রারম্ভিক বাঁশির সুরে শ্রোতা ও দর্শকদের স্বাগত জানিয়েছিলেন দেবরাজ কর। ‘মেদিনীপুর লিটারারি মিট’-এ শনি ও রবিবারের আয়োজনে প্রথম দিনের দুটি প্যানেল ছিল কবিতা ও গদ্য এবং দ্বিতীয় দিনের প্যানেল ছিল সিনেমা ও থিয়েটার এবং প্রকাশনা বিষয়ক।

প্রথম দিন প্রথম প্যানেল কবিতা বিভাগের আলোচ্য বিষয় ছিল, ‘সহজ কবিতা বনাম জটিল কবিতা’। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন নির্মল হালদার, তৃষ্ণা বসাক, পার্থজিৎ চন্দ। এই বিভাগের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সঙ্ঘমিত্রা হালদার। আলোচনায় উঠে আসে কবিতাকে আসলে কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় বাধা যায় না। তা নদীর মতো বহমান। প্রেম, প্রকৃতি থেকে প্রতিবাদ ও বাস্তবের কথা বলে কবিতা। তবে লেখাকে কবিতা হয়ে উঠতে গেলে অনুভূতি ও ব্যাকরণের সঠিক পাঞ্চটা প্রয়োজন।

প্রথম দিন দ্বিতীয় প্যানেল গদ্য বিভাগের আলোচ্য বিষয় ছিল, ‘প্রথম উপন্যাস: ভাবনা, সৃষ্টি, প্রকাশ’। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিজার বাগচী, অভিনন্দন সরকার, মৃণাল শতপথী। সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন বিশ্বজিৎ অধিকারী। এই প্যানেলে তিন তরুণ ঔপন্যাসিক বলেন তাঁদের প্রথম উপন্যাস গড়ে ওঠার কাহিনী যা প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত শ্রোতারা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শোনেন।

দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই ছিল থিয়েটার ও সিনেমা বিভাগের প্যানেল। এই প্যানেল নিয়ে শ্রোতাদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। এই প্যানেলের বিষয় ছিল, ‘সিনেমার ভাষা, থিয়েটারের ভাষা’। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সিনেমা সমালোচক ধীমান দাশগুপ্ত, অভিনেতা সুপ্রিয় দত্ত ও সঞ্জীব সরকার। আলাপচারিতার দায়িত্ব পালন করেছিলেন সিনেমা পরিচালক পলাশ দে।

এই বিভাগে আলোচকদের কথার মধ্য থেকে উঠে আসে, চলচ্চিত্র ও থিয়েটারের মধ্যে পার্থক্যের কথা। চিত্রনাট্য অনুযায়ী কে কোথায়, কোন চরিত্রে বা পরিস্থিতিতে তা বোঝানোর দায়িত্ব এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকলের। কারণ বিভিন্ন ঘরানার শিল্পীদের নিয়ে গড়ে ওঠে একটা মঞ্চ বা ফুটে ওঠে পর্দায়। তাই চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হওয়া উচিত বলে মনে করেন আলোচকরা। একই সঙ্গে সিনেমা এবং থিয়েটারের ভাষার মিল ও অমিল কোথায় সেই নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন তিনজন যা প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত শ্রোতাদের বহু অজানা প্রশ্নের সমাধান করে দেয়।

দ্বিতীয় দিন দ্বিতীয় তথা শেষ প্যানেল ছিল প্রকাশকদের যেখানে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘দে’জ পাবলিশিং’-এর কর্ণধার অপু দে, ‘অভিযান পাবলিশার্স’-এর কর্ণধার মারুফ হোসেন ও ‘আপনপাঠ প্রকাশনা’র কর্ণধার সন্দীপ নট্ট। সঞ্চালনায় ছিলেন লক্ষণ কর্মকার। প্রকাশক প্যানেলে আলোচনার বিষয় ছিল ‘প্রকাশকেরা কোন বিষয়ের লেখা ছাপতে পছন্দ করেন’। তিনজন প্রকাশকই একটি বিষয়ে একমত হন যে, মূলত ভাল লেখা ছাপতেই তারা আগ্রহী হন। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বাদ দিয়েও অনামী লেখকেদের তাঁরা খুঁজে বের করেছেন এবং তাঁদের বই করেছেন। সেই সমস্ত বই পাঠকেরা যথাযথভাবে গ্রহণও করেছেন। তাই বই ছাপার ক্ষেত্রে নাম নয়, ভাল লেখাই একমাত্র মাপকাঠি।

এই দু’দিনের আয়োজনে কবিতা পাঠ করেছিলেন অর্পিতা কুণ্ডু, অমিত মাহাত, সুকমল বসু, অদিতি বসু রায়, প্রফুল্ল পাল, ঝিলম ত্রিবেদী, রাজদীপ পুরী, সোনালি ঘোষ প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন মোম চক্রবর্তী ও কুমারেশ দে। ‘লিটেরারি মিট’ প্রাঙ্গণে স্টল ছিল একাধিক প্রকাশনা ও লিটিল ম্যাগাজিনের।

অনুষ্ঠানের আয়োজকদের পক্ষ থেকে সভাপতি সিদ্ধার্থ সাঁতরা ও সম্পাদক অভিনন্দন মুখোপাধ্যায় জানান, “আন্তরিক এই আয়োজন পাঁচ বছর পূর্ণ করল। আগামী বছর আরও নতুন উপহার থাকবে দর্শক ও শ্রোতাদের জন্য। একই সঙ্গে তাঁরা সমস্ত বিজ্ঞাপন দাতাদের এবং উপদেষ্টাদের ধন্যবাদ জানান যাঁদের ছাড়া এই এত বড় আয়োজন সফল করা কার্যত অসম্ভব ছিল।”

উদ্যোক্তারা আরও জানান, “প্রতিবছরেই অখণ্ড মেদিনীপুরের কোনও শিল্প নির্ভর থিম থাকবে। রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন শিল্পী ও সাহিত্যিকদের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় তাঁদের বক্তব্য এবং কবিতার মধ্যমে মেদিনীপুরবাসীকে সমৃদ্ধ করার উদ্দেশ্যে। হিংসা ও হানাহানির সময় দাঁড়িয়ে সৃজনের বার্তা দেওয়া ও সাহিত্য ও শিল্পের প্রতি আকর্ষণ বাড়ানো এবং এই রিলের জমানায় মানুষের হাতে যাতে পুনরায় বই ফিরে আসে সেই বিষয়ে উৎসাহিত করা মূল লক্ষ্য।”

দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ এই সাহিত্য সম্মেলনের তরুণ কবিদের সম্মাননীয় উপদেষ্টা ছিলেন মদনমোহন মাইতি, বজরংলাল আগরওয়াল, চন্দন বসু, সত্যব্রত দোলই এবং শান্তনু চক্রবর্তী। একই সঙ্গে তরুণ কবিদের সদস্য রাজেশ্বরী ষড়ঙ্গী, আগমনী কর মিশ্র, মঞ্জু হেমব্রম, মৃদুলা ভূঁইয়া মাহাতো, আকাশ রায়, শায়েরী চক্রবর্তী, অচিন্ত মারিক, তারাপদ বারিক, সুমন্ত সাহা, সজল মহাপাত্র, মদনমোহন মাইতি, চন্দন বসু, সুমন মহান্তি, সৌমেন শেখর, প্রসাদ মল্লিক, সন্তু মুখোপাধ্যায়, মঙ্গল হাজরা, রোহন নাম্বিয়ার, সৌম্যদীপ চক্রবর্তী, সুব্রত দাস, আমির হামজা, শৈবাল নন্দ, মৃণালকান্তি মাহাত প্রমুখরাও। সকলেই আনন্দিত এত মানুষের উৎসাহ এবং উদ্দীপনা দেখে।

আয়োজকদের সকলেই বয়সে তরুণ নয়। এই সংগঠন তরুণ- প্রৌঢ়- বৃদ্ধ সকলের।‌ তবু সকলের মধ্যেই তারুণ্যের জোয়ার। ওঁরা জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও লিঙ্গ নির্বিশেষে কাছে টেনে নেন শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলকেই। নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখে প্রতিনিয়ত। তাই ‘মেদিনীপুরের তরুণ কবিরা’ এখন থেকেই ফের উঠে পড়ে লেগেছে ‘মেদিনীপুর লিটারারি মিট ২০২৬’-এর জন্য।

Medinipur Literary Meet Poet
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy