Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কালীপুজোর মুখে ফুলের জলসায় আগুন

সোমবার কাকভোরেই বাগনান-কাঁটাপুকুরের কচি মাঝি আর প্রদীপ বেরা মল্লিকঘাট ফুলবাজারে চলে এসেছিল ওঁদের পসরা নিয়ে। পুজোর আগে আর সময় নেই। খদ্দের বাড়তে শুরু করেছে। যেটুকু বাজার ধরা যায়! কচি-প্রদীপের লক্ষ্য ছিল সেটাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৫ ১৫:৩৬
Share: Save:

সোমবার কাকভোরেই বাগনান-কাঁটাপুকুরের কচি মাঝি আর প্রদীপ বেরা মল্লিকঘাট ফুলবাজারে চলে এসেছিল ওঁদের পসরা নিয়ে। পুজোর আগে আর সময় নেই। খদ্দের বাড়তে শুরু করেছে। যেটুকু বাজার ধরা যায়! কচি-প্রদীপের লক্ষ্য ছিল সেটাই।

প্রায় একই ভাবে পূর্ব মেদিনীপুরের মাগুরিয়ার সঞ্জয় ফদিকার আর পশ্চিম মেদিনীপুরের সিদ্ধা গ্রামের অজয় বারুইও এসেছিলেন মল্লিকঘাটে। সঙ্গে ডাঁই করে এনেছিলেন ফুল-পাতা। আর পাঁচটা দিনের চেয়ে ভিড় ছিল একটু বেশি। মঙ্গলবার ব্যস্ততা আরও বাড়বে। দুর্গা আর কালীপুজোর মুখে এই বাজার যেন আরও বেশি জেগে ওঠে। মল্লিকবাজারের ফুল-পাতা-মালা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে দেশের নানা জায়গায়।

শ্যামাপুজোয় ব্যাপারীদের বেশি নজর লাল জবার দিকে। দিন পনেরো আগেও মল্লিকঘাট বাজারে প্রতি একশো এই ফুলের দাম ছিল বড়জোর ১৫ টাকা। তা বিকোচ্ছে ৫০/৬০ টাকায়। দোকানিরা জানালেন, মঙ্গলবার এই দাম উঠে যাবে প্রায় ১০০ টাকায়। ১০৮টি লাল জবার মালা তো পুজোয় লাগবেই!

পুজোয় মল্লিকঘাট বাজার থেকে কেবল কলকাতা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে কোটি কোটি ফুল। ২৩ বছর ধরে এই বাজারের সঙ্গে যুক্ত অসীম শাসমল। তিনি বলেন, ‘‘কেবল কালীপুজোর দিন জবা কেনাবেচা হবে চার কোটির উপর। অপরাজিতা দেড় কুইন্টালের কাছাকাছি। দোপাটি ৫০০ কুইন্টালের মতো। পদ্ম প্রায় ২০ লক্ষ। গাঁদা অন্তত ১৮ হাজার।’’

এই পুজোর দৌলতেই বাগনান ১ ও ২ নম্বর ব্লকের নাচোক, জলপাই, চক্কমালা, দিলালপুর, বাঁশবেড়িয়া, তামারদহ, ডোরামান্না, কাঁটাপুকুর, বেনাপুর, হেলেদ্বীপ, পূর্ব মেদিনীপুরের মাগুরিয়াস পলশিটা, সাগরবার প্রভৃতি নানা গ্রামের অজস্র পরিবার দু’পয়সা আয়ের সুযোগ পান। শ্যামাপুজোর দু’দিন আগে থেকেই ওঁরা অনেকে পসরা নিয়ে ভিড় করেন মল্লিকবাজারে। ওঁদের এক জন বললেন, ‘‘এখন নানা কারণে ধানচাষ রীতিমতো শঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। যাঁরা সুযোগ পাচ্ছেন, নিচু জমি উঁচু করে জবাগাছ লাগাচ্ছেন। সুফলও মিলছে। বিঘাপিছু মাসে লাভ থাকছে অন্তত তিন হাজার টাকা।’’

কেবলই কি লাল? পাড়ায় পাড়ায় নীল ফুল অপরাজিতারও চাহিদা যথেষ্ঠ। তাই মল্লিকবাজারে বছরের অন্য সময়ে যেখানে এই ফুল বিকোয় কিলোপিছু বড়জোর ১৫ টাকায়, তা উঠেছে ৭০-৮০ টাকায়। মঙ্গলবার এই দর ২০০-১৫০ টাকা উঠে যাবে, জানালেন দোকানিরা। শিশির পড়তে শুরু করায় পদ্মচাষ মার খাচ্ছে। সাধারণ সময়ে যেখানে এই বাজারে পদ্মের দাম থাকে তিন টাকা করে, রবিবার সেই দাম চার গুণ হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার নাকি পদ্মপিছু দাম উঠবে ১৮ টাকায়। বর্ধমান, বীরভূমের ফুলচাষিদের পাশাপাশি ওড়িশার চাষি আর ফড়েরাও পদ্মের পসরা নিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন মল্লিকঘাটে। দোপাটির কিলোপিছু দাম উঠেছিল ৩৫-৪০ টাকা।

বেলপাতার গাঁটপিছু দাম ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচশো টাকা। ডাল-কাঁটা ছাড়িয়ে ১০৮টি পাতা দিয়ে হবে মালা। দোকানিরা জানালেন, এই মালা সংরক্ষণ করা শক্ত। তাতেও রবিবার এক একটি মালা বিকিয়েছে ৪৫-৫০ টাকায়। মঙ্গলবার নাকি এই দাম হয়ে যাবে ৬০-১০০ টাকা।

ক’দিন আগেও মল্লিকবাজারে রজনীগন্ধা ছিল কিলোপিছু ৫০-৬০ টাকা। তা বেড়ে দেড়শো ছাড়িয়েছে। দোকানিরা জানালেন, মঙ্গলবার দরটা প্রায় ৩০০-তে ধাক্কা মারবে। শ্যামাপুজোয় গাঁদাফুলের চাহিদা না থাকলেও এই ফুলের মালা দিয়ে দীপাবলীতে দোকান সাজান অবাঙালি ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ। গোটা কুড়ি লাল গাঁদার ‘ঝুপি’ বিকোচ্ছে প্রায় ২০০ টাকায়। হলুদ গাঁদা আরও দামি। মঙ্গলবার এই দাম বাড়বে।

ক্ষুদ্র হলেও তুচ্ছ নয় তুলসি, দূর্বা। পুজোয় এগুলো না হলে তো চলবে না! লাল-নীল-সাদা হরেক ফুলের পাশাপাশি এগুলিও বিকোচ্ছে। দাম অবশ্য মুঠো হিসাবে।

সব মিলিয়ে ব্যস্ততা চরমে। শ্যামাপুজোর মতো না হলেও কিছু ব্যস্ততা থাকে জগদ্ধাত্রী পুজোয়। এর পর প্রায় উধাও হয়ে যায় পদ্ম-জবা। বাজার দখল করে রজনীগন্ধা, গোলাপ। বিয়ের বাজার মাত করতে এসে যায় চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডেলিয়ার মত মরসুমি নানা ফুল। এ ভাবেই গঙ্গার ধারে, হাওড়া ব্রিজকে সাক্ষী রেখে জেগে আছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই পাইকারি ফুলের বাজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

flower market kali puja price
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE