নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা বা স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) ঘিরে ইতিমধ্যেই ভোটার কার্ড, আধার ও রেশন কার্ডের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ তৈরি করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমন পরিস্থিতিতে এ বার নতুন রেশন কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও কঠোর অবস্থান নিতে চলেছে রাজ্যের খাদ্য দফতর।
খাদ্য দফতরের জারি করা নতুন পিডিএস কন্ট্রোলের নির্দেশে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে কোনও পরিবার নতুন রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রতিনিধিদের সরাসরি আবেদনকারীর বাড়িতে গিয়ে যাচাই করতে হবে। শুধু নথি জমা দিলেই আর রেশন কার্ড পাওয়া যাবে না। আবেদনকারীর পরিবার সত্যিই সরকারি নির্ধারিত মাপকাঠির মধ্যে পড়ছে কি না, তা বিস্তারিত খতিয়ে দেখবেন খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা।
আরও পড়ুন:
এ ছাড়াও ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, আবেদনকারীর আর্থিক অবস্থা, পরিবার সদস্যসংখ্যা, বর্তমান ঠিকানা-সহ অন্যান্য তথ্য সরেজমিনে যাচাই করতে হবে। যাচাইয়ের পরেই চূড়ান্ত ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, আবেদনকারী রেশন কার্ড পাওয়ার যোগ্য কি না। যোগ্য বিবেচিত হলে তবেই রেশন কার্ড ইস্যু করা হবে। খাদ্য দফতরের দাবি, এই পদক্ষেপে ভুয়ো রেশন কার্ড ইস্যু রোধ করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে প্রকৃত উপভোক্তারা যাতে সরকারি রেশন ব্যবস্থার সুবিধা পান, তা নিশ্চিত করাই এই নয়া নীতির মূল লক্ষ্য। খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, “খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের তালিকা আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করার জন্যই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
রেশন ডিলার সংগঠনের নেতা বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘‘এটি মানুষকে রেশন থেকে বঞ্চিত করার একটি প্রক্রিয়া মাত্র। কারণ, যাঁরা রেশন ডিলার, যাঁরা রেশন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা হয়েছে, যাতে তাঁরা ব্যবসা ছেড়ে পালিয়ে যান। সাধারণ মানুষের কথাও এই নতুন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভাবা হয়নি।’’ তবে এ ক্ষেত্রেও রাজনীতির সমীকরণ দেখছেন রাজ্য রাজনীতির কারবারিরা। কারণ, যে ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার তথা রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আনছে, তাতে রেশন কার্ড নিয়ে আর কোনও অস্ত্র বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাতে তুলে দিতে নারাজ শাসকদল। তাই রেশন কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে নয়া নিয়ম জারি করে আর কোনও বিতর্ক চাইছে না খাদ্য দফতর।