Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
বাজি তত্ত্ব মানতে নারাজ গ্রামবাসী

পুলিশের খাবার বন্ধ করল ব্রাহ্মণবাড়

পুলিশ-প্রশাসনের দেওয়া বাজি-তত্ত্ব আর মানতে পারছে না ব্রাহ্মণবাড়। তাই এ বার পুলিশের সঙ্গে অসহযোগিতার পথই বেছে নিল বিস্ফোরণের গ্রাম। গত ৬ মে পিংলার এই গ্রামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যুর পরে পুলিশের দিকেই আঙুল তুলেছিলেন গ্রামবাসী। অভিযোগ ছিল, তৃণমূল আর পুলিশের প্রশ্রয়ে গ্রামে বেআইনি বাজি-বোমার কারখানা চলছিল।

ভিলেজ পুলিশের উদ্যোগে চলছে রান্না। শুক্রবার।  ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

ভিলেজ পুলিশের উদ্যোগে চলছে রান্না। শুক্রবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

দেবমাল্য বাগচী
পিংলা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

পুলিশ-প্রশাসনের দেওয়া বাজি-তত্ত্ব আর মানতে পারছে না ব্রাহ্মণবাড়। তাই এ বার পুলিশের সঙ্গে অসহযোগিতার পথই বেছে নিল বিস্ফোরণের গ্রাম।

গত ৬ মে পিংলার এই গ্রামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যুর পরে পুলিশের দিকেই আঙুল তুলেছিলেন গ্রামবাসী। অভিযোগ ছিল, তৃণমূল আর পুলিশের প্রশ্রয়ে গ্রামে বেআইনি বাজি-বোমার কারখানা চলছিল। এই ক্ষোভের মধ্যেই অবশ্য গ্রামে মোতায়েন পুলিশকর্মীদের জন্য রান্না করা খাবারের বন্দোবস্ত করেছিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। কিন্তু বৃহস্পতিবার গ্রাম পরিদর্শনে আসা বামপন্থী বিশিষ্টজনেদের সামনেই পুরনো বিস্ফোরণস্থলেই ফের বোমা ফাটার শব্দ শোনা যায়। তারপরেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশকর্মীরা সে কথা স্বীকার করতে চাননি। উল্টে তাঁরা যুক্তি দেন, ‘‘বিয়েবাড়ির বাজি ফাটছে।’’ এরপরেই ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা পুলিশকে আর খাবার না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

গত রবিবার থেকে যাঁরা পুলিশকর্মীদের দু’বেলা সব্জি-মাছ-ভাত খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছিলেন, সেই অদ্বৈত প্রধান, সুভাষ প্রধান, অদ্বৈতবাবুর জামাই শম্ভু মান্নারা শুক্রবার বলেন, ‘‘পুলিশের অসুবিধা হচ্ছে দেখেই খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু বৃহস্পতিবার গ্রামে ফের বিস্ফোরণ হলেও পুলিশকর্মীরা সে কথা স্বীকার পর্যন্ত করেননি। আমরা বুঝে গিয়েছি পুলিশ আমাদের পাশে নেই।’’

বিস্ফোরণের দিন তিনেক পরে গত রবিবার ব্রাহ্মণবাড়ে ঘটনাস্থলের অদূরেই তৈরি হয় পুলিশ ক্যাম্প। মোতায়েন করা হয় প্রায় ১৩০ জন পুলিশ কর্মী। তবে গ্রামে কোনও খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় অসুবিধার মুখে পড়ছিলেন পুলিশ কর্মীরা। পুলিশের সমস্যা হচ্ছে দেখে এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা অদ্বৈত প্রধান ও তাঁর জামাই শম্ভু মান্না। তাঁরাই প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে গত রবিবার থেকে গ্রামে মোতায়েন পুলিশ কর্মীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। প্রথমে ৪০ টাকা দিয়ে সব্জি-মাছ-ভাত খাওয়ার বন্দোবস্ত হয়। পরে তা বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়।

স্থানীয় বুলি প্রধান বলেন, ‘‘আমরা চাষ করি। গ্রামে মোতায়েন পুলিশ কর্মীদের অসুবিধা হচ্ছে দেখেই তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করি।’’ সব কিছু ঠিকই চলছিল। তাল কাটে বৃহস্পতিবার। পুলিশ বারবার বিস্ফোরণের কথা অস্বীকার করায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা শুক্রবার পুলিশের খাওয়ার অস্থায়ী বন্দোবস্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ দিন দুপুরে অনেক পুলিশ কর্মী খেতে এসেও ফিরে যান। অদ্বৈত প্রধান, সুভাষ প্রধানেরা বলেন, “ওরা রঞ্জন মাইতিদের পক্ষ নিয়ে চলছে। তা সত্ত্বেও পুলিশের অসুবিধা হচ্ছে দেখে এই হোটেল খুলেছিলাম। কিন্তু বৃহস্পতিবার ফের গ্রামে পরপর তিনটি বিস্ফোরণ হলেও পুলিশ সে কথা স্বীকার করেনি।’’ তাঁদের অভিযোগ, ‘‘তাঁরা বুঝে গিয়েছেন, পুলিশ আতঙ্কিত গ্রামবাসীদের পক্ষে নেই।’’

যদিও এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) অভিষেক গুপ্ত বলেন, ‘‘কে কী বলেছে জানি না। তবে আমি বৃহস্পতিবার নিজে গিয়ে দেখেছি, ঘটনাস্থলে রোদের তাপে পটকা জাতীয় কিছু ফেটেছে। তবে গ্রামবাসীরা আমাদের কাছে ক্ষোভের কথা জানাননি।’’

খাবার না পেয়ে বাধ্য হয়ে ভিলেজ পুলিশের সাহায্য নিয়ে রাঁধুনি এনে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে পুলিশ কর্মীদের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়। গ্রামবাসীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পানীয় জলের নলকূপও বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়। স্থানীয় লাল্টু মাণ্ডি বলেন, “বোমা ফাটলেও পুলিশ মিথ্যা কথা বলছে। সেই রাগেই নলকূপ বন্ধ করে দেব বলেছিলাম।’’

এ দিন দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়ে যায় সিআইডির বম্ব স্কোয়াড ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। ঘটনাস্থলে যান খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) অভিষেক গুপ্ত, এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা বিস্ফোরণস্থল থেকে কিছু নমুনাও সংগ্রহ করেন। মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে এখনও কোনও বিস্ফোরক রয়েছে কি না, তা দেখতেই বম্ব স্কোয়াড তল্লাশি চালায়।”

এ দিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) অভিষেক গুপ্ত বলেন, ‘‘সিআইডির বম্ব স্কোয়াড, ঝাড়গ্রাম থেকে আসা ‘অ্যান্টি সাবোতাজ চেকিং টিম’ ও ‘সেন্ট্রাল ফরেন্সিক অ্যান্ড সায়েন্স ল্যাবরেটরি’-এর দল বিস্ফোরণস্থলে তল্লাশি চালিয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে কোনও রকমের বোমা, স্‌প্লিন্টার ও ধাতু পাওয়া যায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE