ইস্টবেঙ্গল না মোহনবাগান— প্রচারে বেরিয়ে এমন প্রশ্নের মুখে যদি পড়তে হয় অশোক ভট্টাচার্য বা ভাইচুং ভুটিয়াকে, অবাক হওয়ার কিছু নেই। ভোটের গরমের মধ্যেই কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলা ফুটবলের দুই প্রধান। ২ এপ্রিল আই লিগের সেই ম্যাচ দেখতে দেখতে ফুটবলপ্রেমীরা আঙুল গুনে দেখতেই পারেন, এর ঠিক পনেরো দিনের মাথায় জোর টক্কর অশোক ও ভাইচুংয়ের। ময়দান ভোটবাক্স!
২ তারিখের ডার্বি দেখতে কলকাতা থেকে কয়েক হাজার সমর্থক শিলিগুড়ির ট্রেন ধরতে তৈরি হচ্ছেন। আর ১৭ তারিখের ‘ম্যাচ’-টার জন্য এক জন আজ, সোমবারই পা রাখতে চলেছেন উত্তরের এই গুরুত্বপূর্ণ শহরে। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ মুহূর্তে সূচি না পাল্টালে আপাতত ৫ দিন তাঁর শিলিগুড়িতে ঘাঁটি গেড়েই থাকার কথা। মাঝে হয়তো এক রাতের জন্য চালসায় যেতে পারেন। এক কথায় তৃণমূল নেত্রীর সফরের লক্ষ্য হল, উত্তরবঙ্গের এই অংশে, অর্থাৎ পাহাড়-ডুয়ার্সে প্রচারে জোর। থেমে নেই অশোকও। লড়াইয়ে রং লাগাতে এ দিন কংগ্রেস কর্মীদের নিয়ে কার্যত জোটের পদযাত্রা করেন শিলিগুড়ির মেয়র। পুরভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেস, এমনকী বিজেপিকেও সামিল করে অধুনা যিনি ‘শিলিগুড়ি মডেলের জনক’ বলে খ্যাত!
এমন ট্যাকল, পাল্টা ট্যাকলে ভোট-ডার্বিও জমে উঠছে বলে মেনে নিয়েছে শহরের প্রায় সব রবিবাসরীয় আড্ডা।
তৃণমূল সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর শিলিগুড়িবাসের আয়োজন সব সারা। একটি হোটেলে পাঁচ দিন থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘উত্তরবঙ্গের বিষয়টি দক্ষিণের চেয়ে আলাদা। তার উপরে শিলিগুড়ি আরও আলাদা। সেখানে ২০১১-র পর থেকে একটা ভোটেও জেতা যায়নি। তাই এ বারের ডার্বি নিজেই তদারক করছেন দলনেত্রী।’’
ফুটবল ডার্বিতে এটা ইস্টবেঙ্গলের হোম ম্যাচ। আর ভোটে? অশোক জানাচ্ছেন, ১৭ই তাঁরও হোম ম্যাচ। আর তাই কংগ্রেসকে পাশে নিয়ে গা ঘামাতে শুরু করা রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী নিজের জয় নিয়ে ষোলো আনা আশাবাদী। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূলকে হারাতে হবে। সে জন্য সকলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলতে হবে। আপাতত সেটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, নেত্রীও হিসেব করেই ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। ৫ দিনের সফরে বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তো বটেই, নিজের দলের কাউন্সিলর-নেতাদের সঙ্গেও কথা বলতে চান তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে মমতা জানান, বিশিষ্টদের সঙ্গে মত বিনিময় করতে আগ্রহী তিনি। সেই সঙ্গে রাস্তায় নেমে কর্মসূচিও থাকছে তাঁর। পদযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়ে শহরবাসীকে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের নেতা-কর্মীদের তাতিয়ে দিতেও চাইছেন তিনি।
তৃণমূল সূত্রের খবর, দুপুরে বিমানে বাগডোগরায় নামার পরে দার্জিলিং মোড় থেকে হেঁটে শিলিগুড়িতে ঢুকবেন মমতা। আসলে এ ভাবেই শিলিগুড়ির ‘নার্ভ’ বুঝতে চান তিনি। এবং বুঝতে চান, কেন বারবার এখানে হারছে দল।
ভোট-ডার্বির মধ্যেই চলছে ফুটবল ডার্বি নিয়ে উন্মাদনা। পর্যটনের ভরা মরসুমে কলকাতা থেকে এনজেপি-র প্রায় সব ট্রেনেই টিকিট অমিল। সেই সঙ্গে ফুটবল আর ভোটের জোড়া ধাক্কায় ট্রেনের টিকিট নিয়েও হাহাকার। যেমন চলছে ম্যাচের টিকিট নিয়ে। ২ তারিখে কলকাতা থেকে ঠিক কত সমর্থক কাঞ্চনজঙ্ঘায় এসে দুই দলকে জেতাতে গলা ফাটাবেন, স্পষ্ট নয়। সংখ্যাটা যে খুব কম হবে না, তা মালুম পাওয়া যাচ্ছে। বেহালার অভিষেক ঘোষ যেমন। অন্ধ ইস্টবেঙ্গল ভক্ত অভিষেক এ দিন দুপুরে বলছিলেন, ‘‘একটাও কি টিকিট পাওয়া যাবে না!’’ আবার বাগুইআটির মোহনবাগান সমর্থক ইন্দ্রনীল ঘোষ বলছিলেন, ‘‘কুছ পরোয়া নেই। ট্রেনে টিকিট না পাই, বাসে চলে যাব শিলিগুড়ি। কোনও না কোনও ব্যবস্থা হবেই!’’ শিলিগুড়িতে ফোনও আসছে প্রচুর— ‘‘ডার্বির টিকিটটা তুলে রেখো প্লিজ!’’
মানতেই হবে, ভোটবাজারে নতুন উত্তাপ এনে দিয়েছে ভাইচুংয়ের
প্রিয় খেলাই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy