Advertisement
E-Paper

শিকড়েই একাকার রোনাল্ডো আর মীরপুর

সরকারি খাতায় বেতকুণ্ডু ও শুকলালপুর গ্রাম নামে চিহ্নিত। কিন্তু এই তল্লাটকে গোটা জেলা চেনে ‘মিনি পর্তুগাল’ মীরপুর হিসেবে। এই মীরপুরের সঙ্গে জড়িয়ে তিনশো বছরের পুরনো এক ইতিহাস।

আরিফ ইকবাল খান

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৮ ০৪:০০
উন্মাদনা: পর্তুগালের পতাকা হাতে। নিজস্ব চিত্র

উন্মাদনা: পর্তুগালের পতাকা হাতে। নিজস্ব চিত্র

একেবারে আটপৌরে বাংলার গ্রাম। জলকাদা মাখা মেঠোপথ, বাঁশবাগান, মস্ত সবুজ মাঠ থেকে ঘরদোর— সবই বড্ড চেনা। তারই মধ্যে চোখ আটকায় রাস্তার ধারে পতপত করে উড়তে থাকা লাল-সবুজ পতাকাটায়। চোখ টানে সিআর সেভেনের মস্ত ছবিটাও।

গ্রামে ঢুকে আরও বড় বিস্ময়। সাদামাটা বাংলায় কথা বলা, চেহারাতেও আদ্যোপাম্ত বাঙালি মানুষগুলোর কারও পদবি নিনুজ়, কারও তেসরা, কেউবা ডি’ক্রুজ়, লোবো কিংবা পেরেরা! নেহাত ফুটবলভক্ত হিসেবে নয়, শিকড়ের টানেই এই মানুষগুলো ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর জন্য, পর্তুগালের জন্য রাত জাগছেন। মনেপ্রাণে চাইছেন এ বারের বিশ্বকাপ তাঁদের পূর্বপুরুষের দেশে যাক।

সরকারি খাতায় বেতকুণ্ডু ও শুকলালপুর গ্রাম নামে চিহ্নিত। কিন্তু এই তল্লাটকে গোটা জেলা চেনে ‘মিনি পর্তুগাল’ মীরপুর হিসেবে। এই মীরপুরের সঙ্গে জড়িয়ে তিনশো বছরের পুরনো এক ইতিহাস। জানা যায়, তিনশো বছর আগে বর্গি আক্রমণ থেকে মহিষাদল রাজপরিবারকে রক্ষা করতে রানি জানকী গোয়া থেকে যুদ্ধবাজ একদল পর্তুগিজকে নিয়ে এসেছিলেন। জলপথে বর্গি আক্রমণ ঠেকিয়েও দিয়েছিলেন সেই পর্তুগিজরা। পুরস্কারস্বরূপ মিলেছিল নিষ্কর জমি — মীরপুর। সেই থেকে এই তল্লাট ‘পর্তুগিজ গ্রাম’। এখন শ’দুয়েক পরিবারের বাস। পর্তুগালের সঙ্গে কারও কোনও প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই। মুখের ভাষা, আচরণ, পোশাক থেকে খাদ্যাভ্যাস— সবেতেই মীরপুরবাসী বাঙালি। তবু মনের কোণে পূর্বপুরুষের স্মৃতি উজ্জ্বল।

আর তাই মেসি বা নেমার নন, মীরপুরের ছেলেছোকরাদের কাছে ফুটবল দেবতা একজনই— রোনাল্ডো। গেঁয়োখালি স্কুলের ছাত্র সুমন পেরেরা, অর্পণ রোজ়ারিও সিআর সেভেনের অন্ধ ভক্ত। ওরা বলছিল, ‘‘পর্তুগালের খেলা থাকলে গ্রামে অন্য উন্মাদনা থাকে। মাঠে টিভি বের করে সবাই মিলে খেলা দেখি। আর এ বার তো রোনাল্ডো সুপার ফর্মে রয়েছে। একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিচ্ছে।’’ জেভিয়ার বিশ্বাস, জিমি তেসরা, সাহেব রোজ়ারিওদের তাই আশা, ‘‘বিশ্বকাপ রোনাল্ডোর হাতেই উঠবে।’’ রোনাল্ডোদের খেলা থাকলে মীরপুরের মানুষ হাতের কাছে রাখছেন লাল আর সবুজ আবির— পর্তুগালের পতাকা জুড়ে যে ওই দু’টোই রং।

মীরপুরের প্রোটেস্টান্ট গির্জায় পর্তুগালের জয় চেয়ে বিশেষ প্রার্থনাও হচ্ছে। গির্জা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রতন তেসরা জানালেন, পাঁচ পুরুষ আগে তাঁর পূর্বসূরি ম্যানুয়েল তেসরা এসেছিলেন মীরপুরে। চার্চে রক্ষিত নথি বলছে, মোট ১২জন পর্তুগিজ এখানে এসেছিলেন। তাঁদের উত্তরাধিকারীরাই রয়ে গিয়েছেন বাংলা আর পর্তুগালের ‘মিসিং লিঙ্ক’ হিসেবে।

অতীত আঁকড়ে বেঁচে থাকা মীরপুরের একটা আক্ষেপ অবশ্য রয়েছে। এক বৃদ্ধ বাসিন্দার কথায়, ‘‘কালের স্রোতে আমরা বাঙালিই হয়ে গিয়েছি। তবে খারাপ লাগে, পূর্বপুরুষের মুখের ভাষাটা কোনও দিন শেখা হল না!’’

World Cup 2018 Nadia মীরপুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy