Advertisement
E-Paper

হামি বিয়ে ডেখিবে, টিকিট কাটিয়াছে!

সিনেমার টিকিট, জলসার টিকিট, ফুটবল-ক্রিকেট ম্যাচের টিকিটের কথা শুনেছেন! কিন্তু বিয়ের টিকিট? এ বার মিলবে তা-ও! না, বর-কনে টিকিট কেটে বিয়ে করবেন না বটে! তবে বর-কনের চার হাত এক হওয়া চাক্ষুষ করতে টিকিট কেটে ভিনদেশিরা আসতেই পারেন!

সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:২৭
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

সিনেমার টিকিট, জলসার টিকিট, ফুটবল-ক্রিকেট ম্যাচের টিকিটের কথা শুনেছেন! কিন্তু বিয়ের টিকিট? এ বার মিলবে তা-ও!

না, বর-কনে টিকিট কেটে বিয়ে করবেন না বটে! তবে বর-কনের চার হাত এক হওয়া চাক্ষুষ করতে টিকিট কেটে ভিনদেশিরা আসতেই পারেন! সৌজন্যে দুই বিদেশিনি, হাঙ্গেরির মার্টি মাটেক্সা ও অস্ট্রেলিয়ার ওর্সি পার্কান্যি। তাঁদের ওয়েবসাইটে যোগাযোগ করে ইদানীং ভারতীয় বিয়েতে ভি়ড় জমাচ্ছেন বিদেশি পর্যটকরা।

জয়েনমাইওয়েডিংস ডট কম নামে এই ওয়েবসাইটে নিজেদের বিয়ে নথিভুক্ত করতে পারেন যে কোনও দম্পতি। পড়ে দেখে পছন্দ হলেই টিকিট কাটবেন পর্যটকেরা। তাঁদের থাকা-খাওয়া-বিয়ে দেখার ব্যবস্থা করবেন আপনি। এই অভিনব উদ্যোগের মাধ্যমেই মার্টি ও ওর্সি পর্যটনের দুনিয়ায় যোগ করেছেন এক অভিনব ধারা— ম্যারেজ ট্যুরিজম বা বিবাহ পর্যটন। সেখানে দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, জয়পুর, অজমেঢ়, উদয়পুর, যোরহাটের যুগলেরা যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছে বাংলাও। আগামী কয়েক মাসে বিয়ে করতে চলেছেন, এমন বেশ কিছু বাঙালি যুগলই নিজেদের ছবি আর আপ্যায়নের বিবরণ দিয়ে টিকিট ছেড়েছেন সেই সাইটে। কলকাতার পাশাপাশি আমন্ত্রণ রয়েছে বর্ধমান থেকেও!

কলকাতার চিকিৎসক জোশিতা রায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে করতে চলেছেন তাঁর এক সময়ের সহকর্মী সুনীল প্রকাশকে। নেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে এই সাইট দেখে ঠিক করেন, তাঁদের বিয়ের কথা জানাবেন বিশ্বকে। কলকাতায় পাত্রীর বাড়িতে বিয়ের পরে বিদেশি অতিথিরা যাবেন সুনীলের বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের কাড়াপ্পাতেও। জোশিতা বলছেন, ‘‘এমনিতেই তো বিয়েতে অনেকে আসবেন। কয়েক জন বিদেশি এলে তো আরও ভাল! বন্ধু বাড়বে। টিকিটের টাকাটা আমাদের সাহায্যও করবে।’’ সাইটে মিলছে কলকাতার বাসিন্দা, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী গৌরবের বিয়ের টিকিটও। তিনি বলছেন, ‘‘এমনিতেই বাইরে থেকে পরিচিতেরা আসছেন। আরও অন্য দেশ থেকে যদি কেউ আসতে চান, ভারতীয় বিয়ে উপভোগ করতে চান, তাঁদেরও একটা সুযোগ করে দেওয়া গেল।’’

ভারতীয় বিয়ে নিয়ে বিদেশিদের আগ্রহ চিরকালই, জানাচ্ছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, বলিউডি সিনেমায় ভারতীয় বিয়ের জাঁকজমক দেখে এবং লোকমুখে শুনে প্রচুর পর্যটকই ভারতে বিয়ে দেখতে চান। কিন্তু এত দিন বিয়ের মতো ‘ব্যক্তিগত’ অনুষ্ঠানে তাঁদের ঢোকার ব্যবস্থা করতে পারতেন না ট্র্যাভেল এজেন্টরা। এ বার মার্সি আর ওর্টির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে দিল্লির একটি পর্যটন সংস্থা। তার কর্ণধার ওঙ্কার সিংহ কাটারিয়া জানাচ্ছেন, ‘‘গত দেড় দশকে এ দেশে বিয়ে দেখানোর অসংখ্য অনুরোধ আমি রাখতে পারিনি। এ বার পারব।’’

এমন ব্যবসার আইডিয়াটা এল কী করে? মার্টি নিজে তামিলনাড়ুতে একটা বিয়েতে নিমন্ত্রিত ছিলেন। ‘‘২০১২ সালে ওই বিয়েটা দেখে আমি পাগল হয়ে যাই! কী দারুণ আতিথেয়তা! কত গয়না!’’ মার্টির মনে হয় বিয়ে আর পর্যটনকে জুড়ে দারুণ এক ব্যবসার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৫- হাঙ্গেরিতে এক বন্ধুর সূত্রে আলাপ হল অস্ট্রেলীয় উদ্যোগপতি ওর্সির সঙ্গে। মার্টির আইডিয়া শুনেই তিনি রাজি। ওর্সি বলছেন, ‘‘ঠিক করি ভারতেই শুরু করব। ভারতে বিয়ে আর পর্যটন, দু’টোর অর্থনীতিই ভীষণ শক্তিশালী। বিশ্বব্যাপী মন্দাতেও এই দু’টো ক্ষেত্রে আঁচ পড়েনি।’’

বিবাহ পর্যটনের ধারা জনপ্রিয় হলে ভারতে পর্যটনের নয়া দিগন্ত খুলতে পারে বলে মনে করছেন প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের শিল্পসভার সদস্য সম্রাট সান্যাল। তিনি বললেন, ‘‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, বার্ড ওয়াচিং, সাংস্কৃতিক পর্যটনের মতো বিবাহ পর্যটনও অভিজ্ঞতাভিত্তিক পর্যটন। এতে কেবল ঘোরা নয়, একটা সংস্কৃতিকে অনুভব করা যায়।’’ গত ২৭-২৯ অগস্ট বেঙ্গালুরুতে নম্রতা-নীতিনের বিয়েতে ঘুরে সেই স্বাদই নিয়ে গেলেন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আয়ার্ল্যান্ড, ফ্রান্স ও স্পেন থেকে আসা ছয় পর্যটক। নাচলেন, গাইলেন, হাতে মেহেন্দিও করলেন। ওর্সি জানাচ্ছেন, এখানে সব পক্ষেরই সুবিধে। তাঁরা সাইটে যে কোনও টিকিট কেনাবেচার ১৫ শতাংশ শেয়ার নিচ্ছেন। আবার যাঁদের বিয়ে, তাঁরাও টিকিট বিক্রি করে বিপুল খরচের কিছুটা তুলে নিচ্ছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ওয়র্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-তে ভারতে এসেছেন প্রায় ৭৭ লক্ষ বিদেশি পর্যটক। ২০১৫-তে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ লক্ষে। পর্যটন ব্যবসায় বাংলা এখনও প্রথম সারিতে না এলেও বিবাহ-পর্যটনে তার সম্ভাবনা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী সম্রাট। তাঁর কথায়, ‘‘গায়ে-হলুদ থেকে শুরু করে বাঙালি বিয়ের নানা রীতি এত আকর্ষণীয়, তা অনায়াসে অন্য প্রদেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে।’’

অর্থাৎ? ‘বর এসেছে বর এসেছে’ কলরবে এ বার ‘সাহেব-মেম এসেছে’ বলে হাঁকডাকও জুড়তে চলল বলে!

indian wedding Foreigners
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy