প্রহৃত হিমাংশু দেবনাথ। ছবি: নারায়ণ দে।
বক্সার জঙ্গলে বন-প্রহরার সময়ে কর্মীদের নজরে পড়েছিল কাঠের গুঁড়ি বোঝাই মিনি ট্রাকটিকে। পিছু ধাওয়া করে ট্রাক আটকে তল্লাশি চালাতেই বেরিয়ে পড়েছিল চোরাই কাঠের স্তূপ। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে ধৃতদের নিয়ে রেঞ্জ অফিসে পৌঁছনোর আগেই বনকর্মীদের পথ আটকে তাঁদের মারধর করে কাঠ-চোরদের ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন হাসিমারা এলাকার এক তৃণমূল নেতা।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাসাং লামা নামে কালচিনির ওই পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হলেও রাত পর্যন্ত তাঁর খোঁজ মেলেনি। আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘পাসাংয়ের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মীদের মারধরের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ওঁর খোঁজে তল্লাশিও শুরু হয়েছে।’’
বন দফতরের খবর, রাতভর প্রহরা সেরে এ দিন হ্যামিল্টনগঞ্জে তাঁর দফতরে ফিরছিলেন রেঞ্জ অফিসার হিমাংশু দেবনাথ। সঙ্গে ছিলেন আরও জনা কয়েক বন কর্মী। গুদামডাবরি সড়কে ওঠার মুখে তাঁরা দেখেন, বেশ কিছু কাঠের গুঁড়ি এবং কয়েকটি কাঠের আসবাব নিয়ে জঙ্গল থেকে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে আসছে একটি ছোট ট্রাক। সন্দেহজনক ঠেকায় বনকর্মীরা হাত দেখিয়ে গাড়িটি দাঁড় করানোর চেষ্টা করলে তাঁদের পাশ কাটিয়ে ছুটতে থাকে ট্রাকটি। হিমাংশুবাবু বলেন, ‘‘আমরাও পিছু ধাওয়া করি। হাসিমারা চৌপথির মোড়ে ট্রাকটিকে ধরে ফেলি আমরা।’’ চালকের কাছে কাগজপত্র দেখে তাঁদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি ‘অসঙ্গতি’ রয়েছে। কাঠ বোঝাই ট্রাকটি আটক করে রেঞ্জ অফিসে ফিরছিলেন হিমাংশুবাবু। বিপত্তি ঘটে তখনই।
ওই বনকর্তা জানান, রাস্তায় আচমকা তাঁদের গাড়ির সামনে পথ আটকে দাঁড়ায় একটি সাদা স্করপিও। অভিযোগ, গাড়ি থেকে নেমে আসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা পাসাং লামা। সঙ্গে মোটরবাইক বোঝাই তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা। এক বনকর্মী বলেন, ‘‘ওদের ধরেছিস কেন?’ বলেই হিমাংশুবাবুর উপরে চড়াও হন পাসাং। শুরু হয় মারধর। রেঞ্জার সাহেবের জামা ছিঁড়ে ফর্দফাঁই হয়ে যায়। ওদের হাতে ধারালো অস্ত্রও ছিল।’’ হিমাংশুবাবুকে বাঁচাতে গিয়ে হাত কেটে যায় ওই বনকর্মীর।
বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন ঘটনার কথা শুনেছেন। তিনি বলেন, “এই ঘটনা কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না। যে দলেরই হোক দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে হবে।” গত এপ্রিলেই আটিয়াবাড়ি চা বাগানে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বনাধিকারিক মঞ্জুলা তিরকে। আড়াই মাসের মধ্যেই এ বার হিমাংশুবাবু। যা দেখে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বন কর্তাদের কপালে।
শাসক দলের তকমা থাকলেও পাসাং আদতে আরএসপি-র সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বামফ্রন্টের ওই শরিক দলে টিকিটেই নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। পরে মাস কয়েক বিজেপি ঘুরে এখন তিনি তৃণমূলের তাবড় নেতা।
কাঠ-চোরাইয়ের কারবারের সঙ্গে পাসাংয়ের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ এই প্রথম নয়। নতুন নয়, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সরকারি কর্মীর উপরে হামলার অভিযোগও। মাস কয়েক আগেই কালচিনির বিডিওকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল পাসাংয়ের বিরুদ্ধে। এক বনকর্তার প্রশ্ন, ‘‘শাসক দলের নেতারাই চোরা কারবার রোখায় বাধা দিচ্ছেন। হামলা করছেন সরকারি কর্মীদের উপরে। এর পরেও নির্ভয়ে কাজ করা যায়?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy