দফতরের আমলা-অনুগামীদের হাততালির ঘেরাটোপে নেতা-মন্ত্রীর বৃক্ষরোপণের মধ্যেই এত দিন সীমাবদ্ধ ছিল সরকারি অরণ্য সপ্তাহ উদ্যাপন।
চলতি বছর থেকে ছবিটা বদলে যেতে চলেছে। নিছক নিয়মরক্ষার বন সৃজনের পথে না হেঁটে অরণ্য সপ্তাহ পালনের প্রথম ধাপ হিসেবে বাস্তবিকই বন গড়তে চলেছে রাজ্যের বন দফতর। বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন জানান, আগামী ১৪ জুলাই থেকে শুরু হওয়া অরণ্য সপ্তাহে, যত্রতত্র নয়, শহর বা গ্রামাঞ্চলের একটি নির্দিষ্ট জায়গাতেই সরকারি ভাবে বৃক্ষরোপণ করা হবে। মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘বছরের পর বছর ধরে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় এ ভাবে গাছ লাগানোর ফলে ওই এলাকায় কৃত্রিম বনাঞ্চল গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’’ সরকারি ভাবে যার একটা নামকরণও হবে, ‘স্মৃতিবন’।
কেন? বন দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, মাটি এবং জল হাওয়ার তারতম্য ভেদে রাজ্যের এক এক জায়গায় এক ধরনের গাছ-গাছালি হয়। এলাকার স্মৃতি বহন করে ওই সব গাছ। বিনয়বাবুর কথায়, গাছ গাছালির মধ্যেই কোনও একটি এলাকার বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে। বলছেন, ‘‘ধরুন, শাল-সেগুনের মধ্যেই রাঢ় বঙ্গের স্মৃতি ধরা রয়েছে। তাই পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলিতে লাগানো হবে শাল কিংবা সেগুন। স্মৃতিবন নামকরণও সেই কারণে।’’
রাজারহাটের নিউটাউনে বন দফতরের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই একটি স্মৃতিবন অবশ্য গড়া হয়েছে। সে বনের উদ্দেশ্য অবশ্য ভিন্ন। সরকারি আপ্যায়ণে শহরে আসা অতিথিরা সেখানে একটি করে গাছ লাগাবেন, এমনই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সব গাছ সেই অতিথিদের স্মৃতি বহন করবে বলেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
অরণ্য সপ্তাহে এমন স্মৃতিবন গড়ে তোলার চেষ্টা অবশ্য ভিন্ন কারণে। বন দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, স্মৃতিবনের আড়ালে বনবিকাশের চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজ্যে মোট জমির মাত্র ১৩.৪ শতাংশে বনভূমি রয়েছে। বন আইনানুসারে যা থাকার কথা অন্তত ৩৩ শতাংশ। দেশে মোট ভূমির ২২ শতাংশে অরণ্য রয়েছে। সেই নিরিখে বেশ পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
তাই স্মৃতিবনের আড়ালে বন বিকাশের এই পরিকল্পনা নিয়েছে বন দফতর। প্রকল্পটি সফল করতে বন দফতরের নিজস্ব উদ্যোগ ছাড়াও, এই রাজ্যের সব কেন্দ্রের বিধায়ককের হাতেও এক হাজার চারা তুলে দেওয়া হবে। নিজের এলাকায় গিয়ে স্মৃতিবনের নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করে ওই চারা রোপণ করবেন তাঁরা, এমনই আশা মন্ত্রীর। মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই ‘সবুজায়নের’ পক্ষপাতি। বিনয়বাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত পেয়ে তাই সবুজায়নের এই পরিকল্পনা। জানাচ্ছেন, রাজ্যে মোট ২ কোটি চারা রোপণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। উত্তর এবং দক্ষিণের বিভিন্ন বনাঞ্চলে সে চারা বিতরণের পরিকল্পনাও প্রায় পাকা। অপেক্ষা শুধু অরণ্য সপ্তাহের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy