Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

নিখরচায় শিশুকে সারিয়ে বাড়ি পাঠাল নার্সিংহোম

চিকিৎসার খরচ মেটানোর সাধ্য ছিল না বাবা-মায়ের। তাই চার মাসের ছেলেকে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন নার্সিংহোমে। একরত্তি সেই শিশুকে নিখরচায় সুস্থ করে বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিল তমলুকের এক নার্সিংহোম। এমনকী পুলিশ চাঁদা তুলে খরচ মেটাতে চাইলেও রাজি হননি কর্তৃপক্ষ।

তখনও চিকিৎসা চলছে নার্সিংহোমে। — নিজস্ব চিত্র

তখনও চিকিৎসা চলছে নার্সিংহোমে। — নিজস্ব চিত্র

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:১৬
Share: Save:

চিকিৎসার খরচ মেটানোর সাধ্য ছিল না বাবা-মায়ের। তাই চার মাসের ছেলেকে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন নার্সিংহোমে। একরত্তি সেই শিশুকে নিখরচায় সুস্থ করে বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিল তমলুকের এক নার্সিংহোম। এমনকী পুলিশ চাঁদা তুলে খরচ মেটাতে চাইলেও রাজি হননি কর্তৃপক্ষ।

এ রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নার্সিংহোমের এমন মানবিক মুখ সচরাচর দেখা যায় না। বরং টাকা না মেটালে সেরে ওঠার পরেও রোগীকে ছুটি না দেওয়া, এমনকী মৃতদেহ আটকে রাখার অভিযোগও শোনা যায় বহু নার্সিংহোমের

বিরদ্ধে। সেখানে উল্টো রাস্তায় হেঁটে নজির গড়ল তমলুকের নিমতৌড়ির ‘সিস্টার নিবেদিতা সেবাসদন ও নার্সিংহোম’।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা থানার নাড়ুয়া কালাকড়ি গ্রামের বাসিন্দা তপন খামরুই ও মিতা খামরুইয়ের চার মাসের শিশুপুত্রের ফুসফুসের অসুখ ধরা পড়েছিল কিছু দিন আগে। প্রথমে শিশুটিকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ‘রেফার’ করা হয়েছিল কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে।

কিন্তু ১৮ সেপ্টেম্বর কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে কোলাঘাটের কাছে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুটি। বাধ্য হয়েই নিমতৌড়ির ওই নার্সিংহোমে ছেলেকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান তপন। সাত দিন সেখানে চিকিৎসা চলার পরে শিশুটির অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হয়েছিল। তখন নার্সিংহোমের তরফে ওই শিশুর পরিজনদের জানানো হয়েছিল, তার হৃদ্‌যন্ত্রেও সমস্যা রয়েছে। কলকাতায় নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন।

কিন্তু তত দিনে নার্সিংহোমের বিল ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। আর তা জেনেই একরত্তি ছেলেকে ফেলে রেখে চলে যান তপনরা। এরপর পাঁচ দিন অপেক্ষা করেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তপনরা কেউ না আসায় শেষে নার্সিংহোমের তরফে তমলুক থানায় খবর দেওয়া হয়। জানিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের ঠিকানাও। সেই সূত্র ধরে পুলিশ তপনকে খুঁজে বার করে তমলুকে নিয়ে আসে। বুধবার তপন নার্সিংহোমে এসে দেখেন ছেলে ভাল আছে। তবে বিল হয়েছে ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকার। পেশায় দিনমজুর তপন জানিয়ে দেন, এত টাকা তাঁর পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। দরিদ্র বাবার অসহায়তার কথা শুনে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ পাল্টা বলেন, ওই টাকা আর দিতে হবে না। তবে শিশুটির অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। সেটা যেন ভবিষ্যতে করা হয়।

ওই নার্সিংহোমের মালিক চিকিৎসক অরিন্দম রায়। তিনি জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ওই শিশুটির বাবা ‘বাড়িতে কথা বলতে যাচ্ছি’ বলে চলে যান। আর ফেরেননি। সে জন্য অবশ্য শিশুটির চিকিৎসায় কোনও ত্রুটি রাখা হয়নি। অরিন্দমবাবুর কথায়, ‘‘ছেলেটির অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। ও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলেই আমাদের আর্থিক ক্ষতি পূরণ হবে।’’

বৃহস্পতিবার নার্সিংহোমে এসে ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তপন ও মিতা। সেই সময় দু’জনেরই চোখে জল। তাঁরা বলছিলেন, ‘‘আমরা খুব গরিব। বাধ্য হয়েই ছেলেকে ফেলে রেখে গিয়েছিলাম।’’ আগামী দিনে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ছেলের চিকিৎসা করাবেন বলে জানিয়েছেন এই দম্পতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nursing home Infant Treatment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE