Advertisement
E-Paper

‘এর পরেও কি আর মা হতে পারব, ডাক্তারবাবু?’

সুনীতা মণ্ডল। ফ্যালোপিয়ন টিউবে চকলেট সিস্ট রয়েছে। আইভিএফ (ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) বা টেস্ট টিউব ছাড়া মা হওয়া তাঁর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। ওই মহিলার অভিযোগ, সাত বছর আগেই তাঁর এই সমস্যা ধরা পড়ে। অথচ টেস্ট টিউবের পরামর্শ না দিয়ে এখনও তাঁর উপরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে কলকাতার নামী এক চিকিৎসা সংস্থা।

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৭ ১৪:০০
বহরমপুরের রাধারঘাট এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

বহরমপুরের রাধারঘাট এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

মা হওয়া কি মুখের কথা!

কথাটা যে কথার কথা নয় তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মুর্শিদাবাদের সুনীতা মণ্ডল, বীরভূমের স্নিগ্ধা সরকার কিংবা পূর্ব মেদিনীপুরের পারভিনা বিবি (সকলেরই নাম পরিবর্তিত)। ডাক্তার-বদ্যি করতে গিয়ে জলের মতো টাকা খরচ হচ্ছে। গড়িয়ে যাচ্ছে সময়ও। কিন্তু কেউই কোনও দিশা পাচ্ছেন না। তাঁদের আক্ষেপ, কলকাতাতে নাকি এ সব সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়। কিন্তু গেরস্থালি সামলে ওই দূরের শহরে যাতায়াত করে ডাক্তার দেখানোও তো সহজ কথা নয়।

এ দিকে, জেলাতেও কোনও বন্ধ্যত্ব নিবারণ চিকিৎসাকেন্দ্র নেই। মুশকিল আসান করতে রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে রোগী দেখা ও তাঁদের সচেতন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কলকাতার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার। ইতিমধ্যে তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের পাশাপাশি ঘুরে এসেছেন উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাও। রবিবার তিনি এসেছিলেন মুর্শিদাবাদে। বহরমপুরে ভাগীরথীর পশ্চিম পাড় লাগোয়া রাধারঘাট এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে সুদর্শনবাবু আসছেন শুনে জেলার প্রত্যন্ত গাঁ-গঞ্জ থেকে কিছু মহিলা এ দিন ছুটে এসেছিলেন।

তাঁদের এক জন বছর তেত্রিশের সুনীতা মণ্ডল। ফ্যালোপিয়ন টিউবে চকলেট সিস্ট রয়েছে। আইভিএফ (ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) বা টেস্ট টিউব ছাড়া মা হওয়া তাঁর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। ওই মহিলার অভিযোগ, সাত বছর আগেই তাঁর এই সমস্যা ধরা পড়ে। অথচ টেস্ট টিউবের পরামর্শ না দিয়ে এখনও তাঁর উপরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে কলকাতার নামী এক চিকিৎসা সংস্থা। হতাশ সুনীতার প্রশ্ন, ‘‘এর পরেও কি আর মা হতে পারব, ডাক্তারবাবু?’’ সুদর্শনবাবু জানান, বন্ধ্যত্ব কোনও রোগ নয়। ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে আইভিএফ করানো ভাল। কারণ, বয়স বাড়ার সঙ্গে ডিম্বাণুর সংখ্যা কমতে থাকে। কিন্তু এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে।

আরও খবর
‘কাপ’ই নতুন বন্ধু এ রাজ্যের মেয়েদের

মা ও শিশুর নজরদারির জন্য গঠিত সরকারি টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানান, সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে, সব মেডিক্যাল কলেজে বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা চালু করার। জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে তা চালু হলে গ্রামের লোকজনদেরও সুবিধা হবে। প্রসঙ্গত, কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও এসএসকেএম হাসপাতালে বন্ধ্যত্ব নিবারণ চিকিৎসাকেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা ছ’সাত বছর আগেই ঘোষণা করেছিল সরকার। কিন্তু দু’টোর একটিতে এখনও প্রাথমিক কাজই শুরু করা যায়নি। সম্প্রতি ঠিক হয়েছে, পাইকপাড়ায় ইন্দিরা মাতৃসদন হাসপাতালে একটি বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা কেন্দ্র খোলা হবে। কিন্তু সেই কাজেও কোনও গতি এখনও চোখে পড়েনি।

বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কলকাতার বেশ কিছু নামী বেসরকারি ইনফার্টিলিটি ক্লিনিকের পরিকল্পনা রয়েছে, জেলায় জেলায় স্যাটেলাইট ক্লিনিক খোলার। ছোটখাটো চিকিৎসা সেই ক্লিনিকেই করা যাবে। অস্ত্রোপচার কিংবা বড় কোনও ব্যাপারে তখন কলকাতার কেন্দ্রীয় শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’

সহ প্রতিবেদন: পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

Infertility Treatment Doctor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy