Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Election Results 2019

অভিষেকের দায়িত্বে কোপ, সংগঠনেও ব্যাপক রদবদল মমতার

লোকসভা নির্বাচনে যে ফলাফল তৃণমূল করেছে, তা দলের নেতৃত্বের কাছে মোটেই প্রত্যাশিত ছিল না। স্বাভাবিক কারণেই ফলপ্রকাশের পরে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছিল দলের অন্দরেই।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়িত্ব অনেকখানি লঘু করে দেওয়া হল।—ফাইল চিত্র।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়িত্ব অনেকখানি লঘু করে দেওয়া হল।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ০০:২৯
Share: Save:

ধাক্কা বলে মনেই করছেন না তিনি। কারণ আগের লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে ভোটপ্রাপ্তির হার শতাংশের বিচারে বেশি। দলের আসনসংখ্যা ৩৪ থেকে ২২-এ নেমে আসায় তিনি কষ্ট পাননি বলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোর দিয়েই জানাচ্ছেন। কিন্তু শনিবারের পর্যালোচনা বৈঠকে তার চেয়েও জোরদার একটা ধাক্কা তিনি দিয়ে দিলেন সংগঠনে। অন্তত ৯ জেলায় সংগঠনের দায়িত্ব নতুন হাতে দিয়ে দেওয়া হল। পর্যবেক্ষক স্তরে বড়সড় রদবদল হল এবং অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়িত্ব অনেকখানি লঘু হয়ে গেল।

লোকসভা নির্বাচনে যে ফলাফল তৃণমূল করেছে, তা দলের নেতৃত্বের কাছে মোটেই প্রত্যাশিত ছিল না। স্বাভাবিক কারণেই ফলপ্রকাশের পরে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছিল দলের অন্দরেই। যে সব জেলা বা লোকসভা কেন্দ্রে সংগঠন দেখভালের দায়িত্ব অভিষেকের উপরে ছিল, সেই সব জেলা বা আসনগুলির অধিকাংশেই তৃণমূলের ফল অত্যন্ত খারাপ। জবাবদিহির মুখে পড়ার উপক্রম হতেই ওই সব জেলার তৃণমূল নেতারা দায় ঝাড়ার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছিলেন নিজেদের কাঁধ থেকে। জেলা সভাপতি বা স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা না বলে কলকাতা থেকে সরাসরি নির্দেশ পাঠানো হচ্ছিল বা সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছিল— এমনই অভিযোগ তুলতে শুরু করেছিলেন তাঁদের অনেকে। সরাসরি না বললেও, আঙুল যে তাঁরা তুলতে চাইছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার কাজের পদ্ধতির দিকেই, তা বুঝতে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অসুবিধা হয়নি। শনিবারের বৈঠকে তাই নিঃশব্দে অনেকখানি দায়িত্ব সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতির কাঁধ থেকে।

এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে সাংগঠনিক রদবদলের কথা ঘোষণা করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পর্যবেক্ষক হিসেবে জঙ্গলমহল, মুর্শিদাবাদ এবং দুই দিনাজপুরের দায়িত্ব থাকবে শুভেন্দু অধিকারীর উপরে। শুভেন্দুর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর দেখবেন সুব্রত বক্সী। উত্তরবঙ্গ দেখভাল করবেন অরূপ বিশ্বাস। এবং হাওড়া, হুগলি ও দুই বর্ধমানের দেখভাল করবেন ফিরহাদ হাকিম।

আরও পড়ুন: বিধানসভাতেও তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস বিজেপির, কোনও রকমে রক্ষা ভবানীপুরে

পর্যবেক্ষক হিসেবে আরও দু’জন বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছিলেন এত দিন— অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পর্যবেক্ষক হিসেবে তাঁদের নাম এ দিন এক বারও উচ্চারণ করেননি দলনেত্রী। শুধু জানিয়েছেন, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত এবং আরও বেশ কিছু দলীয় কাজ বিধায়কদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেখভাল করবেন অভিষেক।

আরও পড়ুন: ভরাডুবির দায় নিয়ে ইস্তফার ইচ্ছাপ্রকাশ রাহুলের, খারিজ করল ওয়ার্কিং কমিটি

একের পর এক জেলা সভাপতি পদে বদলের ঘোষণা এ দিন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কয়েকটি জেলা কমিটির লোকসভা কেন্দ্র ভিত্তিক বিভাজনও ঘটিয়েছেন। ঝাড়গ্রামে হেরেছে তৃণমূল। তাই ঝাড়গ্রামের জেলা সভাপতিকে সরতে হয়েছে। যিনি ঝাড়গ্রামে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন, সেই বীরবাহা সরেনকে সভাপতি করা হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সভাপতি পদ থেকে বিপ্লব মিত্রকে সরিয়ে সে পদে বসানো হয়েছে বালুরঘাট আসনে হেরে যাওয়া অর্পিতা ঘোষকে। উত্তর দিনাজপুরের সভাপতি অমল আচার্যকে সরিয়ে জেলা কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। সভাপতি পদ দেওয়া হয়েছে রায়গঞ্জ আসনে তৃণমূলের টিকিটে লড়ে হেরে যাওয়া কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে। হুগলি আসনে হেরে যাওয়া দু’বারের সাংসদ রত্না দে নাগকে হুগলি জেলা কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। তাঁর অধীনে তিন জন আহ্বায়ককে রাখা হয়েছে— দিলীপ যাদব, অসীমা পাত্র এবং প্রবীর ঘোষাল। বাঁকুড়াকে দু’ভাগে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাঁকুড়ার নতুন সভাপতি হয়েছেন ছাতনার প্রাক্তন বিধায়ক শুভাশিস বটব্যাল। আর বিষ্ণুপুরের সভাপতি করা হয়েছে সদ্য ওই কেন্দ্রে হেরে যাওয়া শ্যামল সাঁতরাকে। নদিয়াকেও ভাঙা হয়েছে দু’ভাগে। রানাঘাটের দায়িত্ব পেয়েছেন শঙ্কর সিংহ। কৃষ্ণনগরের দায়িত্ব পেয়েছেন সদ্য জিতে সাংসদ হওয়া মহুয়া মৈত্র। আর পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূলে ভি শিবদাসনের কর্তৃত্ব খর্ব করে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আসানসোলের মেয়র তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে। মালদহ জেলা তৃণমূলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনকে চেয়ারম্যান পদে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন সভাপতি উত্তর মালদহে সদ্য হেরে যাওয়া মৌসম বেনজির নুর। আর কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে সমর মুখোপাধ্যায়কে। মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুব্রত সাহাকেও সরানো হয়েছে চেয়ারম্যান পদে। নতুন সভাপতি মুর্শিদাবাদ আসন থেকে সদ্য জিতে আসা আবু তাহের।

এ ছাড়া রাজ্য মহিলা কমিশনের ভাইস চেয়ারপার্সন পদ দেওয়া হয়েছে মৌসমকে। ওই পদে এত দিন ছিলেন মহুয়া মৈত্র।

জলপাইগুড়ির দায়িত্ব সৌরভ চক্রবর্তীর হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয়নি। কিন্তু তাঁর হাতে থাকা শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) চেয়ারম্যান পদটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন দিয়ে দিয়েছেন জলপাইগুড়ি লোকসভা আসনে হেরে যাওয়া বিজয় বর্মণকে। দার্জিলিং বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ইস্তফা দিয়ে এ বার যিনি তৃণমূলের টিকিটে দার্জিলিং লোকসভায় লড়েছিলেন, হেরেছেন সেই অমর সিংহ রাই-ও। তাঁর পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন কমিটি থেকে গৌতম দেবকে সরিয়ে ওই পদটি অমর সিংহ রাইকে দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। যদি অমর ওই পদ নিতে রাজি থাকেন, তা হলেই অবশ্য এই রদবদল হবে, তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোচবিহারের বিধায়ক মিহির গোস্বামীকে সরিয়ে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের প্রধান করা হয়েছে বহরমপুরে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে হেরে যাওয়া অপূর্ব সরকারকে। আর ব্যারাকপুরে অর্জুন সিংহের কাছে পরাজিত দীনেশ ত্রিবেদীকে করা হয়েছে এইচআরবিসির প্রধান, যে পদটি এত দিন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ছিল।

এ দিনের বৈঠকে সংসদীয় দলনেতা হিসেবে ফের বেছে নেওয়া হয়েছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সংসদীয় দলের উপনেতা করা হয়েছে কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে। আর মুখ্য সচেতক হয়েছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE