Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দারিদ্রকে দুয়ো দিয়ে অদম্য ফুটবলপ্রেম জঙ্গলকন্যেদের 

ফুটবল খেলে কাপ জিততে পারেনি ওরা। তবে জিতে নিয়েছে মানুষের মন। ‘ওরা’ জঙ্গলমহল থেকে আসা বছর ষোলো-সতেরোর মেয়ে।

আকাশছোঁয়া: চলছে ‘তেজস্বিনী’ ফুটবল প্রতিযোগিতা। কলকাতায় সোমবার। নিজস্ব চিত্র

আকাশছোঁয়া: চলছে ‘তেজস্বিনী’ ফুটবল প্রতিযোগিতা। কলকাতায় সোমবার। নিজস্ব চিত্র

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৯ ০২:২৩
Share: Save:

ফুটবল খেলে কাপ জিততে পারেনি ওরা। তবে জিতে নিয়েছে মানুষের মন। ‘ওরা’ জঙ্গলমহল থেকে আসা বছর ষোলো-সতেরোর মেয়ে। কলকাতায় খেলতে এসে যাদের মধ্যে পাঁচ জন পেল ‘সেরা খেলোয়াড়’-এর সম্মান। পেল পুলিশ অ্যাথলেটিক ক্লাবের হয়ে খেলার প্রস্তাবও!

কালো কালো দোহারা চেহারা। চোখেমুখে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। কারও বাবা পরের জমিতে চাষের কাজ করেন, কারও বাবা করেন মিস্ত্রির কাজ। তবে মেয়েদের পড়াশোনা আর খেলা থেমে নেই। তাদের মনের অদম্য ইচ্ছের কাছে হার মেনেছে পেটের তাগিদ। সরকারি স্কুলে পড়াশোনা। আর বাকি সময়ে ঝাড়গ্রাম সাঁকরাইল পিএস উইমেনস ফুটবল ক্লাবের মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো। জার্সি বা জুতো কেনার পয়সা নেই। কিন্তু তাতেও থমকে যায়নি ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নের জোরেই জঙ্গলমহল থেকে সোজা কলকাতায় আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের মাঠে ‘তেজস্বিনী’র ফুটবল ম্যাচে হাজির তারা।

তবে ফাইনালে শেষরক্ষা হল না। সশস্ত্র সীমা বলের দলের কাছে হেরে গিয়ে মনখারাপ তুলসী হেমব্রম, মুগলি সোরেন, বিদেশি সোরেন, মমতা হাঁসদা, সুস্মিতা বর্ধন-সহ মৈত্রী সংসদের সদস্যাদের। তবে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ এবং শ্রীভূমি স্পোর্টিং দলকে হারিয়ে দিয়েছে তারা। সেই সাফল্যের আমেজটুকু নিয়েই বাড়ির পথ ধরেছে তারা। ক্যালকাটা পুলিশ সার্জেন্টস ইনস্টিটিউট তথা পুলিশ অ্যাথলেটিক ক্লাব এবং ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ওয়েস্ট বেঙ্গল) আয়োজিত ফুটবল টুর্নামেন্টের শেষে জঙ্গলমহলের দলের পাঁচ সদস্যাকে ‘বেস্ট প্লেয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

পুলিশ অ্যাথলেটিক ক্লাব সূত্রের খবর, বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে এই টুর্নামেন্টে আটটি দলের মধ্যে ছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ, কলকাতা পুলিশ অ্যাথলেটিক ক্লাব, সশস্ত্র সীমা বল। যোগ দেয় আরও চারটি ক্লাব। যাদের সকলেই আইএফএ লিগ খেলেছে। কিন্তু অন্যদের যে-ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে, তারা তা পায় না বলে আক্ষেপ করছিল জঙ্গলমহল থেকে আসা খেলোয়াড়েরা।

তবে তাঁর দলের মেয়েরা প্রশিক্ষিত দলের সঙ্গে যুঝে ফাইনাল খেলতে পারায় খুশি ঝাড়গ্রাম-সাঁকরাইল পিএস উইমেনস ফুটবল ক্লাবের কোচ অশোক সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গলমহল কাপ খেলার জন্য কয়েক বছর ধরে বছরে ২৫ হাজার টাকা পাচ্ছে ক্লাব। তা থেকেই এদের জন্য যেটুকু করা সম্ভব হয় করি। সেই সঙ্গে এ-দিক ও-দিক খেলে কোনও ম্যাচ জিতলে কিছু না কিছু মেলে। না-হলে তো ওদের জার্সি-জুতো কেনার পয়সাটুকুও নেই।’’

না-থাকুক অর্থের সম্বল। মনের জোরেই গোল হাঁকাতে চায় জঙ্গলমহলের তুলসী-মুগলিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE