রাজ্যে চিকিৎসকের ঘাটতি বেড়ে চলেছে। তার মধ্যেই চিকিৎসকেরা ছুটি চাইছেন উচ্চশিক্ষার জন্য। এই চাপ আর সামলানো যাচ্ছে না। সেই যুক্তিতে নতুন নির্দেশ জারি করল স্বাস্থ্য দফতর। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এ বার থেকে কোনও উচ্চশিক্ষা পাঠ্যক্রমে আবেদনই করতে পারবেন না সরকারি চিকিৎসকেরা। এই নির্দেশকে ‘উচ্চশিক্ষার উপরে সরকারি হস্তক্ষেপ’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বহু চিকিৎসক।
গত ১৯ জুন স্বাস্থ্য দফতরের ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এ বার থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে মেডিক্যালে স্নাতকোত্তর, ফেলোশিপ, এমফিল, সার্টিফিকেট কোর্স বা এই রকম কোনও উচ্চশিক্ষা পাঠ্যক্রমে সরকারি ডাক্তারেরা আবেদনই করতে পারবেন না। তাঁরা কোথায়-কবে আবেদন করতে চাইছেন, আগে স্বাস্থ্য দফতরে জানাতে হবে। দফতরকে না জানিয়ে কোনও চিকিৎসক উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে ছুটি চাইলে? সে ক্ষেত্রে ছুটি তো পাবেনই না, উল্টে তা ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হবে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে চিকিৎসকের ঘাটতি এত বেড়েছে এবং তার মধ্যেই কথায়-কথায় চিকিৎসকেরা পড়াশোনার জন্য ছুটি চাইছেন। এ সমস্যা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু অপেক্ষাকৃত নবীন চিকিৎসকদের একাংশ এই নির্দেশিকা পেয়ে খুবই ক্ষুব্ধ। কে, কখন, কোথা থেকে কী শিক্ষা নেবেন, সেটা সরকার কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? কী করেই বা সেটা কর্তাদের ইচ্ছাধীন হয়? প্রশ্ন তাঁদের।
রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য মন্তব্য, ‘‘বেশির ভাগ রাজ্যে এটাই নিয়ম।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এখন অনেক চিকিৎসক অল্প দিন চাকরিতে ঢুকেই দফতরকে কিছু না জানিয়ে ইচ্ছেমতো নানা পাঠ্যক্রমে আবেদন করে দিচ্ছেন। দফতরের থেকে সবেতন ছুটিও নিয়ে নিচ্ছেন। আমরা শূন্যস্থানগুলো পূর্ণ করব কী ভাবে?’’ তাঁর কথায়, ‘‘হয়তো দেখা যাবে, সেই কোর্সটি আদৌ তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় এবং তার থেকে দফতর পরবর্তীকালে কোনও লাভও পাবে না। তবে আমরা শুধু শুধু তাঁকে এতদিন সবেতন ছুটি দেব কেন?’’
বামপন্থী সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিসেস ডক্টর্স’-এর মতে, আপাত ভাবে দেখলে নির্দেশিকাটি আপত্তিজনক নয়। কিন্তু সমস্যাটা অন্যত্র। চিকিৎসকদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, এই সরকারের চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষায় আপত্তি। সরকার মনে করছে, কম শিক্ষিত ডাক্তারেরা তবু গ্রামে থাকবেন। উচ্চশিক্ষিত হলেই তাঁরা শহরে চলে আসতে চাইবেন। তখন মূলত জেলায় ওই শূন্যস্থান পূরণের মতো চিকিৎসক সরকারের হাতে থাকবে না। তাঁরা আরও জানান, ৯ জুন স্বাস্থ্য দফতর একটি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, একটি কোর্স করার তিন বছরের মধ্যে কোনও সরকারি চিকিৎসক অন্য কোনও কোর্সে আবেদন করতে পারবেন না। যাতে চিকিৎসকদের পঠনপাঠনের ছুটি বা ‘ট্রেনি রিসার্ভ লিভ’ কম দিতে হয়, তাই এই ব্যবস্থা। এটাও চিকিৎসকের ঘাটতি আটকানোর একটা পন্থা।
আবার তৃণমূলপন্থী সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে নির্দেশিকার পক্ষে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। অতীতে নজির আছে, কিছু চিকিৎসক স্বাস্থ্য দফতরকে না জানিয়ে উচ্চশিক্ষার কোর্সে যোগ দিয়ে মাসের পর মাস কাজে আসেননি। এতে তাঁদের বেতন বন্ধ হলেও সরকারি চাকরি যায়নি। নতুন নিয়মে কেউ এমন করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ফলে চিকিৎসকেরা ছুটি নেওয়ার আগে ভাববেন। আখেরে লাভবান হবেন রোগীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy