Advertisement
E-Paper

জমি নিয়ে জোর নয়, তাতে শিল্প না আসে না আসুক: মুখ্যসচিব

একশোতম প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, শিল্পের জন্য এক ছটাক জমিও নেবে না রাজ্য। বরং শিল্পপতিদেরই ‘আদর করে’ তা জোগাড় করতে হবে। সেই অবস্থান থেকে আরও এক পা এগিয়ে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র শুক্রবার জানালেন— খাস জমি থেকেও জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করা হবে না। বরং তাঁদের স্বীকৃতি দিয়ে পুনর্বাসনের বিষয়টিতেই অগ্রাধিকার দেবে সরকার!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫০

একশোতম প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, শিল্পের জন্য এক ছটাক জমিও নেবে না রাজ্য। বরং শিল্পপতিদেরই ‘আদর করে’ তা জোগাড় করতে হবে। সেই অবস্থান থেকে আরও এক পা এগিয়ে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র শুক্রবার জানালেন— খাস জমি থেকেও জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করা হবে না। বরং তাঁদের স্বীকৃতি দিয়ে পুনর্বাসনের বিষয়টিতেই অগ্রাধিকার দেবে সরকার!

মুখ্যসচিব এ দিন শিল্পপতিদের বলেন, ‘‘আপনাদেরই ইচ্ছুক জমিদাতা খুঁজে বার করতে হবে। অনিচ্ছুকদের কাছ থেকে জমি নিতে জোর খাটাতে হয়। আমরা বল প্রয়োগের বিরোধী। কাউকে জোর করতে পারব না। তাতে যদি শিল্প না-আসে, না-আসবে!’’ এনটিপিসি, কোল ইন্ডিয়ার মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকেও এই নীতি মেনে জমি ‘দেওয়া হয়েছে’ বলে তাঁর দাবি।

শুক্রবার এমন এক মঞ্চে সঞ্জয়বাবু এই সব কথা বলেন, যেখানে আলোচ্য বিষয় ছিল— ‘রাজ্যে সহজে ব্যবসা করার অনুকূল পরিবেশ তৈরি’। সেই মঞ্চকে মুখ্যসচিব এই ঘোষণার জন্য বেছে নেওয়ায় তাজ্জব শিল্পমহল। শিল্পপতিদের বক্তব্য— একেই অজস্র জমি-মালিকের সঙ্গে কথা বলা ও বিস্তর দর কষাকষির জেরে জমি নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার উপর এখন খাস জমি পেতেও যদি জবরদখলকারীর পুনর্বাসনের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়, তবে এ রাজ্যে লগ্নি করতে আসবেন কোন শিল্পপতি? প্রশ্ন উঠছে, এর পর এই সুবিধার আশায় খাস জমিতে যদি জবরদখলকারীর ভিড় বাড়ে, সেই সমস্যা সামাল দিতে পারবে তো রাজ্য? আমলাদের অবশ্য ব্যাখ্যা— জবরদখলকারীর পুনর্বাসনের বিষয়টিকেই ‘স্বীকৃতি’ বলতে চেয়েছেন মুখ্যসচিব।

ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে সরকারি নিয়ম-নীতি সরল করার জন্য রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ দিনের ওই সভায় সঞ্জয়বাবু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব অতুল চতুর্বেদী এবং শিল্প-সহ রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের প্রধান সচিবেরা। অনুষ্ঠানে সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির চেয়ারম্যান তথা ভারত চেম্বারের প্রেসিডেন্ট সজ্জন ভজন্কা জানান, শিলিগুড়িতে সিমেন্ট কারখানা গড়তে কিছু জমি নিজেরাই কিনেছেন তাঁরা। পরে কারখানা সম্প্রসারণের কথা মাথায় রেখে সংলগ্ন এলাকায় কিছু খাস জমিও নিতে চান। কিন্তু সে জমি জবরদখল হয়ে রয়েছে। তাঁর প্রশ্ন ছিল, এ ক্ষেত্রে সংস্থাই কি জবরদখলকারীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন? না কি রাজ্য সরকারই জমি নেওয়ার আগে বিষয়টি মিটিয়ে দেবে?

এর উত্তর দিতে গিয়েই সঞ্জয়বাবুর পাল্টা প্রশ্ন— ‘‘কোথাও জবরদখল আছে কি না, তা শিল্পপতি জানবেন কী ভাবে? খাস জমিতে কেউ থাকলেই তাঁকে জবরদখলকারী বলে ধরে নিতে নারাজ রাজ্য।’’ তাঁর দাবি, খাস জমিতে কেউ থাকলে, আগে দেখতে হবে যে, তাঁর আইনি স্বীকৃতি রয়েছে কি না। তিনি বলেন, খাস জমিতে জবরদখলকারী থাকলে, ‘কেস-টু-কেস’ ভিত্তিতে বরং

তাঁকেই আগে স্বীকৃতি দেবে রাজ্য। উদাহরণ হিসেবে বাগডোগরা বিমানবন্দরের জবরদখলকারী পরিবারের পুনর্বাসনের কথা তুলে ধরেছেন মুখ্যসচিব। উল্লেখ্য, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়েছেন, ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে জবরদখলকারীদের সরাতে চান না তিনি।

কিন্তু পুরো বিষয়টি দেখে অবাক শিল্পমহল বলছেন— জমি অধিগ্রহণের বিকল্প হিসেবে সরকারি ও খাস জমি নিয়ে জমি-ব্যাঙ্ক গড়ার কথা প্রায় নিয়ম করে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরে জবরদখলকারীদের সরকারি জমিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা কী ভাবে বলেন মুখ্যসচিব?

তাঁদের আশঙ্কা, জমি-জটের কারণে রাজ্যে একেই বিনিয়োগ বাড়ন্ত, তার ওপর শিল্পায়নে এ বার শেষ পেরেক হতে পারে খাস জমিতে জবরদখলকারীদের ‘আপ্যায়নের’ এই সিদ্ধান্ত। কারণ— খাস জমি কাকে দেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত অবশ্যই রাজ্যের। কিন্তু সেখানে জবরদখলকারী এ ভাবে প্রশ্রয় পেলে, শিল্প গড়ার জটিলতা বহু গুণ বাড়বে। এ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না-করেও সভায় উপস্থিত আইটিসি-র কর্ণধার ওয়াই সি দেবেশ্বরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘শিল্পের অন্যতম প্রাথমিক শর্তই হল জমি।’’

জমি নিয়ে অবশ্য এ দিনও পুরানো সুরে বেজেছেন রাজ্যের আমলারা। দাবি করেছেন, শিল্পের জন্য জমির অভাব নেই। জমি-ব্যাঙ্কে তা যথেষ্ট পরিমাণে মজুত। লাল ফিতের ফাঁস এড়িয়ে রাজ্যে লগ্নির পথ সহজ করতে গত চার বছর ধরে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যে কথা তাঁরা বলছেন না, তা হল— অনেক শিল্পপতিই জমি ব্যাঙ্কে খোঁজখবর করার পরে পিছিয়ে যাচ্ছেন। কারণ সে জমির যে অসমান আয়তন, তাতে বড় শিল্প দূরের কথা ছোট বা মাঝারি শিল্প গড়াও দুষ্কর।

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব অতুল চতুর্বেদী জানিয়েছেন, রাজ্যে ব্যবসা করার পথ সহজ করতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কিছু রাজ্য। সব রাজ্যের রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পরে সহজে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ গড়ার জন্য তাদের নম্বর দেওয়া হবে। তৈরি করা হবে ক্রমতালিকা।

সেই তালিকায় রাজ্যের স্থান কত নম্বরে হবে, সে উত্তর দেবে সময়ই। তবে এ দিন মুখ্যসচিবের জমি-বয়ানের পরে তা নিয়ে আশার ছবি দেখা যায়নি শিল্পপতিদের চোখেমুখে।

abpnewsletters land donor illegal occupants industrialist chief secretary sanjay mitra bharat chamber of commerce industrialisation Land acquisition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy