E-Paper

অনুদানের পর্যাপ্ত টাকা আসেনি, বেহাল বহু স্কুল

সরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, চলতি বছরে কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা এলেও প্রাপ্যের তুলনায় তা অনেকটাই কম। মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলি পেয়েছে কম্পোজ়িট গ্রান্টের ২৫ শতাংশ আর প্রাথমিক স্তরের স্কুলগুলি ৫০ শতাংশ টাকা পেয়েছে।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৩০

—প্রতীকী চিত্র।

কোথাও স্কুলের বিদ্যুতের বিল বকেয়া পড়ে আছে। কোথাও বৃষ্টিতে ফাটা ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ছে। কোথাও বেঞ্চ ভেঙেচুরে গেলেও মেরামত করা যায়নি। কোথাও পাখা খারাপ হয়ে রয়েছে কয়েক মাস ধরে। সব ক’টি সমস্যার মধ্যে মিল একটাই— সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা নেই। কারণ, কম্পোজ়িট গ্রান্টের পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা আসেনি।

সরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, চলতি বছরে কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা এলেও প্রাপ্যের তুলনায় তা অনেকটাই কম। মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলি পেয়েছে কম্পোজ়িট গ্রান্টের ২৫ শতাংশ আর প্রাথমিক স্তরের স্কুলগুলি ৫০ শতাংশ টাকা পেয়েছে। বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের প্রশ্ন, দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলিকে যদি প্রত্যাশার থেকেও অনেক বেশি টাকা অনুদান দিতে পারে সরকার, তা হলে স্কুলগুলির প্রাপ্য কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা পুরোটা দেওয়া হচ্ছে না কেন? মিড-ডে মিল থেকে কম্পোজ়িট গ্রান্ট— স্কুলগুলির বেলা শুধু কার্পণ্য?

যে কোনও স্কুলই পড়ুয়ার সংখ্যার নিরিখে কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা পায়। যেমন, পড়ুয়ার সংখ্যা এক থেকে তিরিশের মধ্যে হলে সেই স্কুল ১০ হাজার টাকা কম্পোজ়িট গ্রান্ট পায়। ৩০ থেকে ১০০-র মধ্যে হলে ২৫ হাজার টাকা, ১০০ থেকে ২৫০-র মধ্যে হলে দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। ২৫০ থেকে এক হাজারের মধ্যে হলে মেলে ৭৫ হাজার টাকা। আর এক হাজারের উপরে হলে দেওয়া হয় এক লক্ষ টাকা। এক বছরের জন্য এই টাকা পাওয়া যায়।

বাঙুর এলাকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে হাজারের উপরে পড়ুয়া। তিন মাসের বিদ্যুতের বিলই আসে দশ হাজার টাকার মতো। আমরা কম্পোজ়িট গ্রান্ট বাবদ পেয়েছি সারা বছরের জন্য ২৫ হাজার টাকা। এই টাকায় আমরা বিদ্যুতের বিল মেটাব, না স্কুলের প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ করাব?’’ হাওড়ার আমতা ব্লকের উদং উত্তরপাড়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিতু সাহা বলছেন, ‘‘বর্ষায় স্কুলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ঘরের ছাদ থেকে জল পড়ে। এ বারের বর্ষায় পড়ুয়াদের ছাতা মাথায় ধরে ক্লাস করতে হচ্ছে। ঘরের অভাবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ঘরেই মিড-ডে মিল রান্না হয়। ছাদ দিয়ে জল পড়ছে বলে মাথার উপরে ত্রিপল টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। রান্নার আগুন থেকে ত্রিপলে কোনও ভাবে আগুন লেগে গেলে আরও বড় বিপদ ঘটতে পারে।’’ নিতু জানান, তাঁদের স্কুলে কম্পোজ়িট গ্রান্ট বাবদ ১২৫০০ টাকা এসেছিল। তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুতের বিল দেওয়া, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানো, হাজিরা খাতা কেনা, বিভিন্ন নথির ফোটোকপি করাতেই সব টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। ছাদের মেরামতির টাকা পাব কোথা থেকে?’’

মিত্র ইনস্টিটিউশনের (ভবানীপুর) প্রধান শিক্ষক রাজা দে বলেন, ‘‘কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা পর্যাপ্ত পরিমাণ দেওয়া হয়নি। স্কুলের দৈনন্দিন খরচ তো চালাতে হবে। স্কুলের তহবিলে টাকা আনতে একটি বিনোদন চ্যানেলকে এক দিনের জন্য স্কুলের একটি ঘর ভাড়া দেওয়া হয়েছিল তাদের গানের অনুষ্ঠানের অডিশন করতে।’’ স্কুলশিক্ষকদের সংগঠনগুলির মতে, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলি স্থায়ী শিক্ষকের অভাবে অনেক সময়ে আংশিক সময়ের শিক্ষক নেয়। সেই শিক্ষকদের বেতনও কম্পোজ়িট গ্রান্ট থেকে নিতে হয়। যদিও সেটা পর্যাপ্ত নয়। এখন সেই টাকাও জোগাড় করা যাচ্ছে না।

যদিও শিক্ষা দফতরের এক কর্তার মতে, ‘‘কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ ভাবে দেয়। কেন্দ্র তাদের অংশের টাকা দিচ্ছে না। রাজ্য কিন্তু নিজেদের অংশের টাকা দিচ্ছে।’’ তবে, অধিকাংশ প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, রাজ্যও তাদের অংশের টাকা পুরোটা দিচ্ছে না। তা হলে মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলি কেন মাত্র ২৫ শতাংশ টাকা পাবে? অনেক সময়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের যৌথ প্রকল্পে কেন্দ্র টাকা না দেওয়ায় রাজ্য কেন্দ্রের অংশের টাকা দিয়েছে, এমনও হয়েছে। শিক্ষকদের প্রশ্ন, তা হলে শিক্ষার ক্ষেত্রে কেন এমন হবে না?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Composite Grant Government Schools School students

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy