E-Paper

বাঙালি-‘হেনস্থা’য় বিচারের আশা বোসের, সরব মমতাও

রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর শুক্রবার ফের বলেছেন, ‘জাগরিত হোক সেই দেশ, যেখানে রবীন্দ্রনাথের ভাষা— বাংলা ভাষা সম্মান, মর্যাদা ও সকল দেশবাসীর ভালবাসা পায়। বিকশিত হোক সেই দেশ, যেখানে ভাষা-সন্ত্রাস থাকবে না।’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৫ ০৮:২৬
(বাঁ দিকে) সি ভি আনন্দ বোস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) সি ভি আনন্দ বোস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থার অভিযোগকে কেন্দ্র করে বাংলার রাজনীতিতে চড়া সুর অব্যাহত। ফের ‘ভাষা-সন্ত্রাস’ মুক্ত দেশ গড়ার ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, নানা বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে জড়ালেও বাংলাভাষীদের ‘হেনস্থা’র প্রসঙ্গ জাতীয় স্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো জানিয়ে এর ‘ন্যায়-বিচারের আশা’ করেছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। পক্ষান্তরে, রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের একটি অতীত মন্তব্যকে হাতিয়ার করে তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আবার বলেছেন, ভারতীয় বাঙালিদের ‘বাঁচানো’র দায়িত্ব তাঁদেরও!

রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর শুক্রবার ফের বলেছেন, ‘জাগরিত হোক সেই দেশ, যেখানে রবীন্দ্রনাথের ভাষা— বাংলা ভাষা সম্মান, মর্যাদা ও সকল দেশবাসীর ভালবাসা পায়। বিকশিত হোক সেই দেশ, যেখানে ভাষা-সন্ত্রাস থাকবে না।’ বাংলাভাষী-‘হেনস্থা’ নিয়ে মুখ খুলেছেন রাজ্যপালও। রাজভবনে এ দিন বোস বলেছেন, “এটি (বাংলাভাষী-হেনস্থা) এমন বিষয়, যার জাতীয় স্তরে দৃষ্টি আকর্ষণ হওয়া প্রয়োজন। গণতন্ত্রে গ্রহণযোগ্য ভাবে এর সমাধান হওয়া দরকার। তার কাজও শুরু হয়েছে। আমার বিশ্বাস, এই ক্ষেত্রে ন্যায়-বিচার হবে।”

এই পরিস্থিতির মধ্যে মন্ত্রী ফিরহাদের একটি মন্তব্যকে হাতিয়ার করে ফের বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক। তাঁর বক্তব্য, “শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথকে এনে বাংলায় সমাবর্তন করতে চেয়েছিলেন বলে উর্দুভাষী পড়ুয়ারা বয়কট করেছিলেন। এখন ফিরহাদ বলেছেন, কলকাতার ৫০% মানুষ উর্দুতে কথা বলবেন। বঙ্গবাসী ঠিক করুন, উর্দুভাষীরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চালাবেন কি না!” এই সুরেই ‘উর্দু-মুক্ত’ বাংলা ভাষার পক্ষে সওয়াল করে দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্তও বিশ্বভারতীর ২২শে শ্রাবণের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে বলেছেন, “ভাষার শুদ্ধতা যাতে থাকে, সে জন্য বাঙালি, বিজেপি লড়ছে। আমরা উর্দু-আরবি মুক্ত বাংলা ভাষা চাই।”

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতার নেতৃত্বেই বাঙালির ‘অগ্রগতি’র দাবি করেছেন। জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রনাথের মূর্তিতে মালা দিতে এসে তাঁর দাবি, ১৯১২-য় বিহার, ১৯৩৭-এ ওড়িশা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি থেকে আলাদা হয়। এক সময়ে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি সর্বোচ্চ জায়গায় ছিল। ভাগ হয়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো নানা কারণে বাঙালি পিছিয়ে পড়েছিল। এখন আবার মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাঙালি ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে! পক্ষান্তরে, ভারতীয় বাঙালিদের পাশে তাঁদের দল রয়েছে বলে দাবি করেছেন সুকান্তও। তাঁর বক্তব্য, “ভাত রান্নায় অনেক সময়ে কাঁকর আসে, তেমনই কখনও হয়তো বাংলাদেশি বাঙালিদের আলাদা করতে গিয়ে ভারতীয় বাঙালিদের নাম চলে আসতে পারে। তাঁদের বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের।”

এই প্রেক্ষিতে বিজেপি-শাসিত হরিয়ানায় বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগে এ দিনও সরব থেকেছে তৃণমূল। দলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এবং এ দিন গুরুগ্রামে গিয়ে ‘হেনস্থা’র মুখে পড়া বাংলার শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, “বিজেপি বাংলাভাষীদের উপরে অত্যাচার করছে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বদা যে ওঁদের পাশে আছেন, তা জানানো হয়েছে।”

সম্প্রতি বাংলা ভাষা নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ানো বিজেপির আইটি শাখার প্রধান অমিত মালবীয় এ দিন অবশ্য এই ভাষার ঐতিহাসিক, সামাজিক গুরুত্ব এবং রবীন্দ্র-ঐতিহ্যের বর্ণনা দিয়ে বিস্তৃত পোস্ট করেছেন। তৃণমূলের পাল্টা খোঁচা, বাংলা নিয়ে মন্তব্য করে ফেঁসে গিয়ে মালবীয় বেশি করে রবীন্দ্র-প্রীতি দেখাতে গিয়েছেন এবং তাতেও ‘গীতাঞ্জলি’-সহ বিভিন্ন বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengali Migrant Worker Bengali BJP TMC Mamata Banerjee CV Ananda Bose

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy